‘তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী’ শুনলেই আমাদের মাথায় গুরুগম্ভীর ধরণের মানুষের কথা ভেসে ওঠে। মাথায় বড় বড় এলোমেলো চুল, নাকের নিচে পুরু গোঁফ, চোখে চশমা, সাধারণ মানুষের দিকে চোখ ফেরালেই কপালে অন্তত তিনটে ভাঁজ পড়ে, চোখে-মুখে ফুটে ওঠে একরাশ বিরক্তি— এরকম একটা কিছু ছবি খেলা করে যায় আমাদের মনের কোণে। অথচ, এই সময়ের সবচেয়ে বড় তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী মানুষটি মোটেও অমন ছিলেন না। পরিপাটি করে আঁচড়ানো চুল, চোখে চশমা, মুখে বাচ্চাদের মতো নিষ্পাপ হাসি— যে হাসির পেছনে এক জীবনের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট আড়াল হয়ে যায়। জীবনের বেশীরভাগ সময় হুইল চেয়ারে বসে কাটিয়ে দেওয়া মানুষটি যখন কারো দিকে চোখ ফিরিয়ে তাকান, তাঁর চোখে প্রাণ ফুটে ওঠে।
মানুষটি স্টিফেন হকিং। বিধাতার পাষাণ বাঁধন ভেঙ্গে যিনি জীবনভর মানুষকে বিজ্ঞানের গল্প শুনিয়ে গেছেন। রবীন্দ্রনাথের ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ কবিতার কথাগুলো ঠিক মিলে যায় তার সাথে, ‘এত কথা আছে, এত গান আছে, এত প্রাণ আছে মোর,/ এত সুখ আছে, এত সাধ আছে— প্রাণ হয়ে আছে ভোর।’
স্টিফেন হকিং জীবনের অনেকটা সময় ব্যয় করেছেন বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টায়। হুইল চেয়ারে বসে মহাবিশ্বের এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত ঘুরে আসা মানুষটি নিজের ভেতরের প্রাণ ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন সবার মাঝে। বিজ্ঞানের কঠিন সব বিষয় নিয়ে চমৎকার সব বই লিখেছেন, মেয়ে লুসির সাথে মিলে বাচ্চাদের জন্যে লিখেছেন বিজ্ঞান কল্পকাহিনী, অভিনয় করেছেন কমেডি টিভি সিরিজে— হকিং করেন নি— অমন কিছু খুঁজে বের করা আসলে বেশ কষ্টসাধ্য! তিনি যেমন করেছেন, তেমনি তাঁকে নিয়েও কাজ কম হয় নি। তাঁর জীবন নিয়ে বই লেখা হয়েছে, বানানো হয়েছে চলচ্চিত্র— তাঁকে নিয়ে বানানো চলচ্চিত্রে তাঁরই চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে এডি রেডমায়ান অস্কার জিতে নিয়েছেন।
আসলে কিছু কিছু মানুষের গল্প জীবনের চেয়েও বড় হয়ে ওঠে। স্টিফেন হকিং ছিলে তেমনই একজন।
অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম
১৯৮৮ সালের কথা। হকিং তখন সদ্য কোমা থেকে ফিরেছেন। শ্বাস নেয়ার সুবিধার জন্যে গলায় অপারেশন করতে হয়েছে। শ্বাসনালি থেকে একটা নল গলা দিয়ে বের করে দিতে হয়েছে, ফলে কথা বলার ক্ষমতাও হারিয়েছেন। সেজন্যে তাঁর হুইল চেয়ারের সাথে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে স্পিচ জেনারেটিং ডিভাইস (SGDs)। ডান হাতের এক আঙ্গুলে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে যন্ত্রের ইনপুট ডিভাইস, ওতে করে প্রতি মিনিটে চারটে শব্দ লিখতে পারেন। স্পিচ জেনারেটরের কাজ সেই শব্দ পড়ে শোনানো। এরকম অবস্থায় হকিং সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘সময়’ নিয়ে সাধারণ মানুষের উপযোগী করে একটা বই লিখবেন। বইয়ের নাম দিলেন A Brief History of Time। তারপরেরটুকু ইতিহাস। সাধারণ মানুষের জন্যে এই বই ছিল এক চমৎকার এবং রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা— স্থান-কাল ভুলে গিয়ে মহাবিশ্বের শুরুর মুহুর্ত থেকে শুরু করে বইটি মানুষকে বর্তমান ঘুরিয়ে নিয়ে গেছে মহাবিশ্বের সম্ভাব্য ভবিষ্যতে— বিজ্ঞানের কিচ্ছু জানেন না, এমন যে কেউ এটি পড়লেও বেশ চমৎকার একটা ধারণা পাবেন মহাবিশ্বের ইতিহাস সম্পর্কে। জানতে পারবেন, কেমন করে সময়ের শুরু হল, জন্ম নিল আমাদের এই মহাবিশ্ব। জানা যাবে, এই মহাবিশ্ব কোন পথে চলেছে এবং এর সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে।
বইটির প্রথম সংস্করণের ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানের আরেক মহারথী, কার্ল সাগান। সাগান তাঁর ভূমিকায় বলেছিলেন, স্টিফেন হকিংকে তিনি পল ডিরাক এবং স্যার আইজ্যাক নিউটনের যোগ্য উত্তরসূরী বলে মনে করেন। সেই থেকে আজ অবধি বইটি সাধারণ মানুষের হাতে হাতে ঘুরে ফিরছে, জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে আগ্রহী অথচ এই বইয়ের নাম শোনে নি— এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।
এক বই লিখেই স্টিফেন হকিং সবচেয়ে বেশী বিক্রিত বইয়ের তালিকায় জায়গা করে নিলেন, বইটি পরিণত হল বেস্ট সেলারে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বই
বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার যে আন্দোলন- হকিংকে সে আন্দোলনের অগ্রপথিক বলা যায়। কঠিন সব বিষয়কে সহজভাবে ব্যাখ্যা করার ব্যাপারে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। মোট বারোটি বই লিখেছেন, প্রতিটি বই-ই আগ্রহী পাঠকদেরকে আন্দোলিত করেছে। বিজ্ঞান মানে যে কেবল সমীকরণ-ই না, এই সমীকরণদের যে নিজস্ব একটা ভাষা আছে, এরা যে নিজেদের মতো করে আমাদেরকে একটা গল্প শোনাতে চায়— হকিং সেই ভাষার দুয়ার খুলে দেয়ার চেষ্টা করেছেন সবার জন্যে। মহাবিশ্বের শুরুর মুহুর্তে যে মহাবিস্ফোরণ হল, সেই থেকে মহাবিশ্বের এই যে পথচলা— কত বিচিত্র এবং রোমাঞ্চকর গল্প— হুইল চেয়ারের বিজ্ঞানী আমাদের জন্যে সে গল্পের ঝুলি খুলে দিয়েছেন, পাঠকদেরকে সঙ্গে করে বেরিয়ে পড়েছেন রোমাঞ্চকর সব অভিযানে।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বইয়ের কথা বলা যাক। ১৯৯৩ সালে ব্ল্যাকহোল নিয়ে তাঁর ভাবনাগুলো জানিয়ে লিখেছেন Black Holes and Baby Universes and other Essays। তালিকায় তার পরেই রাখতে হবে রজার পেনরোজের সাথে মিলে লেখা The Nature of Space and Time বইটিকে। তবে সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়তা পেয়েছে লিওনার্ড স্লোডিনোর সাথে মিলে লেখা দুটো বই, The Grand Design এবং The Briefer History of time। দ্বিতীয়টি A Brief History of time এর আধুনিক সংস্করণ। বিগব্যাং তত্ত্ব থেকে শুরু করে কোয়ান্টাম মেকানিক্স, স্ট্রিং থিওরিসহ সবই উঠে এসেছে এই বইতে।
বাচ্চাদের জন্যে বিজ্ঞান কল্পকাহিনী
বিজ্ঞান যে কেবল বড়দের জন্যেই না, ছোটবেলা থেকেই যে বিজ্ঞানের টুকটাক এক-আধটু চর্চা থাকা দরকার, এ ব্যাপারেও কাজ করে গেছেন হকিং। মেয়ে লুসির সাথে মিলে ‘জর্জ’ নামের একটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে বাচ্চাদের জন্যে লিখেছেন একটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনী সিরিজ। সিরিজের প্রথম বই George’s Secret Key to the Universe প্রকাশিত হয়েছে ২০০৭ সালে। এই সিরিজে বই মোট পাঁচটি, পঞ্চম বইটি ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয়।
আত্মজীবনী
২০১৩ সালে একটি আত্মজীবনী বই লিখেছিলেন হকিং, My Brief History। তবে, এই বইতে নিজের জীবনের গল্প, সমস্যাগুলোর চেয়ে বিজ্ঞানের দিকে কিভাবে ঝুঁকে পড়েছিলেন, কিভাবে বিশ্বতত্ত্ব নিয়ে কাজ করা শুরু করলেন— এসবই বেশী উঠে এসেছে। দ্য বোস্টন গ্লোবের এক বই পর্যালোচক বলেছিলেন, হকিং যথাসম্ভব নিজের দিকে ফিরে তাকানোর চেয়ে মহাবিশ্বের দিকে তাকিয়ে থাকতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাঁর লেখায় সেজন্যেই নিজের জীবনের আঁক-বাকের চেয়ে প্রাণের বিবর্তন কিংবা মহাবিশ্বের বিবর্তন ইত্যাদি বিষয় বেশী উঠে আসে।
দ্য থিওরি অফ এভ্রিথিং
প্রথম স্ত্রী জেন ওয়াইল্ড হকিংয়ের সাথে হকিংয়ের যখন ডিভোর্স হয়ে গেল, তার কিছুদিন পরে ১৯৯৯ সালে জেন একটি বই লিখেছিলেন হকিংকে নিয়ে। বইটির নাম ছিল Music to move the stars। বইটিতে হকিংয়ের সাথে তাঁর পরিচয়, বিয়ে, সন্তানগ্রহণ এবং নানারকম জটিলতার সূত্র ধরে ডিভোর্স হয়ে যাওয়া— সবই উঠে এসেছিল। জেন খুব ভালভাবেই হকিংয়ের উদার মানসিকতা এবং অদ্ভুত প্রাণশক্তির কথা উল্লেখ করেছিলেন। অসুস্থতার শুরুর দিকে ডাক্তার যখন হকিংকে বলেছিলেন, তাঁর হাতে আর মাত্র দুই বছর সময় আছে, তখনই হকিং তাঁকে বলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে কোনরকম সম্পর্ক হোক, সেটি তিনি চান না। তাছাড়া, মানুষ তাঁকে করুণার চোখে দেখবে, সাহায্য করার কথা ভাববে— এমনটা তিনি কখনোই চান নি। অদ্ভুত প্রাণশক্তিবলে ডাক্তারদের বেঁধে দেয়া সময়সীমাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে হকিং জীবনের সাথে যুদ্ধ করে সামনে এগিয়ে চললেন। যতদিন একসাথে ছিলেন, জেন তাঁর পক্ষে সম্ভব সবই করেছেন— তারপর একটা সময় দুজনের সম্মতিতে ডিভোর্স হয়ে যায় তাঁদের মধ্যে। জেন যেমন দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন, তেমনি হকিংও ইলেইন মেসনকে বিয়ে করেন। মেসন পেশায় নার্স ছিলেন এবং এই সূত্র ধরেই তাঁদের পরিচয় হয়েছিল।
তারপর কিছুদিন নিজের বাবা-মা, জেন এবং তাঁর সন্তানদের সাথে হকিংয়ের যোগাযোগ বন্ধ ছিল। গুজব রটে গেল, মেসন যথাসম্ভব হকিংয়ের উপর জোর খাটাচ্ছেন। এই নিয়ে পুলিশি তদন্তও হয়েছে, কিন্তু হকিং এসব ব্যাপারে কোন মন্তব্য বা অভিযোগ করেন নি। তবে এর কিছুদিন পরে তাঁদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়।
হকিং ফের জেন এবং তাঁর সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করেন এবং তাঁদের মধ্যে বেশ চমৎকার একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই চমৎকার সময়গুলোর কথা উঠে এসেছে জেন হকিংয়ের লেখা Travelling to Infinity: My Life with Stephen বইতে। এটি জেনের আগের লেখা বইটিরই আধুনিক সংস্করণ।
পরবর্তীতে ২০১৪ সালে এই বইয়ের উপর ভিত্তি করে The Theory of Everything চলচ্চিত্রটি তৈরি করা হয়। গলার স্বর হিসেবে ব্যবহার করার জন্যে হকিং তাঁর নিজস্ব স্পিচ জেনারেটিং ডিভাইসের স্বরটিই ব্যবহার করার অনুমতি দেন। এডি রেডমায়ান হকিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করে অস্কার জিতে নেন। এছাড়াও এটি আরো অনেক অনেক পুরষ্কারের জন্যে মনোনীত হয়েছে এবং বেশ কিছু পুরষ্কার জিতেছে। সাথে চলচ্চিত্র সমালোচকদের অকুণ্ঠ প্রশংসা পেয়েছে।
রুপালি পর্দায় হকিং
বেশ কিছু আমেরিকান এবং ব্রিটিশ টিভি সিরিজে কাজ করেছেন স্টিফেন হকিং। তাঁর বেশীরভাগ কাজের পেছনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের মাঝে বিজ্ঞানকে ছড়িয়ে দেয়া। সেই লক্ষ্যে স্পিলবার্গের প্রযোজনায় ১৯৯৯২ সালে A Brief History of Time নামে একটি চলচ্চিত্র বানানো হয়। হকিং আসলে বিজ্ঞানভিত্তিক একটি চলচ্চিত্র বানাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরিচালক আর প্রযোজক চলচ্চিত্রটিকে আত্মজৈবনিক চলচ্চিত্র হিসেবে নির্মান করেন। শেষ পর্যন্ত এটিকে আর বড় পরিসরে মুক্তি দেয়া হয় নি। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে Stephen Hawking’s Universe নামে ছয় পর্বের একটি বিজ্ঞানভিত্তিক টিভি সিরিজ বানানো হয়। হকিংয়ের জোর অনুরোধের ফলে সিরিজটিকে পুরোপুরি বিজ্ঞানভিত্তিক সিরিজ হিসেবেই নির্মান করা হয়।
সিরিয়াস ধরণের বিজ্ঞানভিত্তিক টিভি সিরিজেই শুধু না, মজার এবং জনপ্রিয় বেশ কিছু টিভি সিরিজেও হকিং কাজ করেছেন। এর মাঝে প্রথমেই বলতে হবে জনপ্রিয় অ্যানিমেটেড সিটকম (Sitcom) দ্য সিম্পসনস এর কথা। এই সিরিজের বেশ কিছু পর্বে হকিং স্বভূমিকায় উপস্থিত ছিলেন। এমনকি ব্রিটিশ কমেডি অ্যাওয়ার্ড ২০০৪ এ স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানে দ্য সিম্পসনসের সহযোগী লেখক ম্যাট গ্রোনিং হকিংয়ের একটি খেলনা প্রতিমূর্তি উপাস্থাপন করেন এবং হকিং গ্রোনিংকে আজীবন সম্মাননা পুরষ্কার প্রদান করেন।
আগেই বলা হয়েছে, হকিংয়ের ভেতরে যতটুকু বিজ্ঞান ছিল, প্রাণশক্তি তারচেয়ে কোন অংশে কম ছিল না। কাজেই, আমেরিকান টিভি সিরিজ দ্য বিগ ব্যাং থিওরি (The Big Bang Theory) এর পক্ষ থেকে তাঁকে অনুরোধ করা হলে তিনি বেশ কিছু পর্বে স্বভূমিকায় উপস্থিত থাকতে রাজি হয়ে যান। সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্র কয়েকজন বিজ্ঞানীর সাথে তাঁকে মোট ৮টি পর্বে নানারকম রসিকতা করতে দেখা গেছে। ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে যন্ত্রণা দেয়া, ক্রসওয়ার্ড পাজল মেলানো নিয়ে রাতারাতি যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়া কিংবা নতুন বৈজ্ঞানিক পেপার নিয়ে মজা করা কিংবা ভুল ধরিয়ে দেয়া— হকিংয়ের স্বতঃস্ফুর্ত উপস্থিতি তাঁর উচ্ছল প্রাণশক্তির ব্যাপারে দর্শকদেরকে বেশ ভালোরকম ধারণা দেয়। এই মানুষটি এতদিন ধরে যে অসম্ভব কষ্টের মাঝে জীবন যাপন করে এসেছেন— দেখে বোঝার একদমই উপায় নেই।
হকিংয়ের প্রাণোচ্ছলতার আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ স্টারট্রেক: দ্য নেক্সট জেনারেশন। A Brief History of Time এর হোম ভিডিও ভার্সন মুক্তি দেয়ার জন্যে যে অনুষ্ঠান করা হয়, সেখানে গিয়ে স্টারট্রেক চলচ্চিত্র সিরিজে ‘স্পক’ চরিত্রকে পর্দায় জীবন দেয়া লিওনার্ড নিময় জানতে পারলেন, হকিং স্টারট্রেক: দ্য নেক্সট জেনারেশনে অভিনয় করতে চান। তিনি সিরিজের কর্তাব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে তাঁদেরকে এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানালেন। ফলস্বরুপ সিরিজের ষষ্ঠ সিজনের প্রথম পর্বে দেখা গেল, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ডাটা হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে আলবার্ট আইনস্টাইন, স্যার আইজ্যাক নিউটন এবং স্টিফেন হকিংয়ের সাথে পোকার খেলছেন। পরে চলচ্চিত্রের সেটের মাঝখান দিয়ে আসার সময় হকিং বেশ আগ্রহ নিয়ে এন্টারপ্রাইজ-ডি এর ক্যাপ্টেনের সিটে বসতে চাইলে তাঁকে অনুমতি দেয়া হয়।
এই কয়েকটি হল রুপালি পর্দায় তাঁর উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি। কিন্তু হকিং ডজনখানেকেরও বেশী টিভি সিরিজে স্বভূমিকায় উপস্থিত ছিলেন, কখনো বিজ্ঞান নিয়ে বানানো মজার কোন সিরিজে, কখনোবা খাঁটি বিজ্ঞানভিত্তিক টিভি সিরিজে।
প্রাণের মাঝে বিজ্ঞানের সুর
মার্চের ১৪ তারিখ হকিং মারা গিয়েছেন। মাটির পৃথিবী ছেড়ে মহাবিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ার আগে তিনি ঠিক কী ভাবছিলেন, কে জানে! কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার পরে একটা প্রশ্ন অনেকের মনেই উঁকি দিয়ে গেছে, বিজ্ঞানীদের কাছে তিনি নাহয় বিগব্যাং, ব্ল্যাকহোল কিংবা কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি বা হকিং রেডিয়েশন নিয়ে যেসব কাজ করে গেছেন— সেসবের জন্য জনপ্রিয়। কিন্তু, এতো এতো বিজ্ঞানীদের মধ্যে হকিং সাধারণ মানুষের কাছে এত বেশী জনপ্রিয় কেন?
এই প্রশ্নের উত্তরটা দেয়া আছে একেবারে শুরুতে। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী বলতে আমাদের মস্তিষ্কে যেমন সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরের গুরুগম্ভীর ধরণের একজন মানুষের ছবি ভেসে ওঠে, হকিং মোটেও তেমন ছিলেন না। এক জীবনে গবেষণা যতটুকু করেছেন, বিজ্ঞান যেন সাধারণ মানুষের কাছে পোঁছায়— এই ব্যাপারে কাজ করে গেছেন আরো বেশী। তিনি বিশ্বাস করতেন, মহাবিশ্বের সকল রহস্য এবং চমৎকার সবটুকু সৌন্দর্যের সমস্তটাকে একটামাত্র সুত্রের শেকলে বাঁধা সম্ভব। দ্য থিওরি অফ এভ্রিথিং। সেই সূত্রটি তিনি বের করে যেতে পারেন নি, কিন্তু সে পথে অনেকটুকু এগিয়ে দিয়ে গেছেন বিজ্ঞানকে। কিন্তু তারচেয়েও বেশী করে চেয়েছেন, বিজ্ঞানের প্রতিটা সমীকরণ এবং তত্ত্ব যে অসম্ভব সুন্দর একেকটা গল্প শোনায়— সেই গল্পগুলো যেন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে, অনুভব করতে পারে। যদি কোন একদিন আসলেই অমন কোন সূত্রের হাতে বাঁধা পড়ে মহাবিশ্বের সমস্ত রহস্য, বিজ্ঞানীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষও যেন ওর মাঝের ব্যাপারটুকু প্রাণের গভীরে অনুভব করতে পারে। বলতে পারে, ইশ, সমীকরণটা কী সুন্দর! [তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া]
উচ্ছ্বাস তৌসিফ
শিক্ষার্থী, কম্পিউটার সাইয়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
[ফেইসবুক প্রোফাইল]