হীরা সবচেয়ে কঠিন বস্তু, এমনটিই আমরা স্কুল-কলেজে পড়ে এসেছি। আমরা ভুল পড়িনি। হীরাই সবচেয়ে কঠিন বস্তু ছিলো, তবে এখন আর নেই। ২০০৯ সাল হতে হীরার এই মুকুট পর্যায়ক্রমে বেশ কয়েকটি বস্তুর শিরে স্থানান্তরিত হয়েছে।
২০০৯ সালে হীরার চেয়ে কঠিন দুটি বস্তু উদ্ভাবিত হয়। উটর্জাইট বোরন নাইট্রাইড এবং লোনসডালেইট। প্রথমটি চাপ দিয়ে খাঁজ তৈরির বিরুদ্ধে হীরার চেয়ে ১৮% বেশী বাধা প্রদর্শন করে। আর দ্বিতীয়টির কৃতিত্ব আরো মারাত্বক। এটি হীরার চেয়ে ৫৮% বেশী প্রতিরোধ দেখায়। অর্থাৎ কিনা লোনসডালেইট হীরার চেয়ে দেড়গুণরও বেশী কঠিন।
দূর্ভাগ্যবশতঃ, এই উভয় বস্তুই প্রকৃতিতে বিরল এবং এগুলোর স্থিতিশীলতাও কম। এই বস্তুগুলোর উদ্ভবকগণ এদের প্রয়োগযোগ্যতা উপেক্ষা করে কেবল ‘কাঠিন্য’ পরীক্ষা করে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। তাই এই আবিষ্কার অনেকটাই তাত্ত্বিক।
কিন্তু ২০১৩ সালে নেচার সাময়িকীর জানুয়ারী সংখ্যায় কাঠিন্য বিষয়ক আরেকটি রচনা প্রকাশিত হয় যাতে নতুন একটি কাঠিন্যের প্রতিযোগী যুক্ত হয়। এটি বোরন নাইট্রাইডেরই একটি সংস্করণ। গবেষকগণ বোরন নাইট্রাইড কণিকাকে চাপে সংকুচিত করে ‘আল্ট্রা হার্ড ন্যানো টোয়াইনড কিউবিক বোরন নাইট্রাইড তৈরি করেছেন।’ কণিকাগুলোর সজ্জা পরিবর্তনের মাধ্যমে এদের এই নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে।
২০১৫ সালে কিউ কার্বন (Q carbon) আবিষ্কৃত হয়। হীরার মতোই এটি কার্বনের আরেকটি রূপভেদ। আবিষ্কারকগণ দাবী করেছেন এটি হীরার চেয়ে ৬০% বেশী কঠিন যদিও এখনো এই দাবীর পক্ষে যথাযথ পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখা সম্ভব হয় নি। তবে এর কাঠিন্য হীরার চেয়ে কমপক্ষে ২০-৩০% বেশী হবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে্ এটি চুম্বকত্বের দিক থেকে ফেরোম্যাগনেটিক, বিদ্যুৎ পরিবাহী এবং নিন্ম শক্তিতে উন্মুক্ত করলে উজ্জ্বলতা প্রদার্শন করে। এই তৈরি করতে খরচ অপেক্ষাকৃত কম হয়।
গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ হীরার কার্বন পরমাণুগুলোর মধ্যে sp3 বন্ধন থাকলেও কিউ কার্বনে sp2 এবং sp3 এর মিশ্রন থাকে। ন্যানোসেকেন্ডের লেজার স্পন্দনের মাধ্যমে কার্বনকে গলিত করা হয়। তারপর এটিকে অতিদ্রুত শীতল করলে কিউ কার্বন উৎপন্ন হয়।
কিউ কার্বন যেহেতু নব্য আবিষ্কৃত, তাই এর সম্ভাব্য প্রয়োগ নিয়েও এখনো বিস্তারিত ভাবা হয়নি। তবে ভবিষ্যতে বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তিতে এটি ব্যবহার করা হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ ক্ষমতার ইলেক্ট্রনিক এবং ফোটনিক যন্ত্রপাতি, উচ্চ গতির মেশিন, গভীর সমুদ্রের ড্রিলিং এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত নির্ণয়-যন্ত্র ইত্যাদি। কিউ কার্বনের নিন্ম ওয়ার্ক ফাংশন এবং ঋনাত্মক ইলেক্ট্রন আসক্তি একে ফিল্ড ইমিশন ডিসপ্লে তৈরির ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
-ইমতিয়াজ আহমেদ
সম্পাদক, বিজ্ঞান পত্রিকা
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
3. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া
খুবই ভালো লাগলো।সফলতা কামনা করছি