জ্বালানী সাশ্রয়ী ও দ্রুত আকাশ পথ পাড়ি দিতে আসছে প্লাজমা জেট ইঞ্জিন

0
522
জীবাশ্ম জ্বালানী বিহীন ইঞ্জিন।

কল্পনা করুন এমন এক জেট ইঞ্জিনের কথা যা একটি মহাকাশযানকে প্রচলিত ইঞ্জিনের চেয়ে বেশী দ্রুত পরিচালিত করছে এবং তার ফলে আপনাকে খুব দ্রুতই পৃথিবীর আবহাওয়ার বাইরে নিয়ে গেলো। আর এসব কিছুই ঘটছে কোনরূপ জীবাশ্ম জ্বালানি ছাড়াই এবং অতি অল্প খরচে।

ঠিক এ কাজটিই করবে একটি প্লাজমা জেট ইঞ্জিন। যদিও এই ইঞ্জিনটির গবেষণা এখনো গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ রয়েছে এবং এর প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে স্যাটালাইট ও অন্যান্য মহাকাশযান পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করার।

আর এখন টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব বার্লিনের গবেষকগণ চেষ্টা করছেন এই ইঞ্জিনকে গবেষণাগারের বাইরে নিয়ে আসার। প্রচলিত জেট ইঞ্জিনগুলি থ্রাস্ট বা ধাক্কা তৈরীর জন্য জ্বালানীর সাথে বাতাস সঙ্কুচনের একটি মিশ্রণ ব্যবহার করে থাকে। এই মিশ্রণ পোড়ানোর মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধির করার মাধ্যমে একটি ইঞ্জিনের পেছন দিকে যায় এবং যানটিকে সামনের অগ্রসর হতে সাহায্য করে। প্লাজমা জেট ইঞ্জিন তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরীর জন্য জ্বালানীর পরিবর্তে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকে।

টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব বার্লিনে বারকান্ট গোকেলে এবং তাঁর দল এই প্লাজমা জেট ইঞ্জিনকে একটি বিমানে স্থাপন করতে যাচ্ছেন। তাঁরা বলেন, “আমারা এমন এক পদ্ধতি গড়ে তুলতে চাই, যা ৩০ কিলোমিটার উপরেও চলতে পারবে যেখানে প্রচলিত জেট ইঞ্জিন যেতে পারে না।” আর এটি যাত্রীদের বায়ুমন্ডলের শেষভাগে কিংবা এর বাইরেও নিয়ে যেতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের বিষয়টি হচ্ছে, এমন একটি বায়ু-শোষক প্লাজমা পরিচালিত ইঞ্জিন গড়ে তোলা যা এই বিশাল উচ্চতায় উড়ার জন্য উড্ডয়ন করতে পারবে।

প্লাজমা জেট ইঞ্জিনকে একটি ভ্যাকুয়াম অথবা কম চাপের বায়ুমন্ডলে কাজ করার মতো করে নকশা করা হয়েছে, যেখানে তাদের একটি গ্যাস সরবরাহক বহন করতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে গোকেলের দল এমন একটি ইঞ্জিনের পরীক্ষা চালিয়েছে যা একটি বায়ুমন্ডলের চাপে বায়ুতেই কাজ করতে পারে। “আমরাই সর্বপ্রথম সর্বনিম্ন পর্যায়ের দ্রুতগতির ও শক্তিশালী প্লাজমা জেট উৎপাদন করতে পেরেছি। এই জেট ইঞ্জিনটি সেকেন্ডে ২ কিলোমিটারের বেশী গতিতে পৌঁছুতে পারে।” দলটি ইঞ্জিন চালু করার জন্য ন্যানোসেকেন্ডের ইলেকট্রিক ডিসচার্জের দ্রুতগতির প্রবাহ ব্যবহার করেছেন যা একে জ্বালানী-চালিত ইঞ্জিনের চেয়ে বেশী দক্ষ করে তুলেছে। আর প্লাজমা থ্রাস্ট বিস্ফোরন প্রয়োগের এটাই প্রথম কোন ঘটনা।

কিন্তু এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কোন বিমানকে পরিচালিত করতে হলে কিছু বাধা অতিক্রম করতে হবে। উড্ডয়ন শুরুর জন্য দলটি ৮০ মিলিমিটারের ক্ষুদ্র থ্রাস্ট ব্যবহার করেছেন, যেখানে একটি বাণিজ্যিক বিমান উড়তে এরকম প্রায় ১০,০০০ থ্রাস্টের প্রয়োজন পড়ে। এই সমস্যা বর্তমান নকশাকে অনেকটা জটিল করে তুলেছে। আপাতত সমস্যা এড়িয়ে যেতে গোকেলের দল ছোট আকারের বিমান বেছে নিয়েছেন যাদের থ্রাস্ট ১০০ থেকে ১০০০ এর মধ্যে থাকবে। আর তাঁদের ধারণা এটা নির্মান করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হবে।

তবে সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে হালকা ওজনের ব্যাটারির অভাব। প্লাজমা তৈরী ও বজায় রাখতে হলে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন। গোকেলে আশা করছেন, তাঁর পদ্ধতিকে পরিচালিত করতে কমপ্যাক্ট ফিউশন রিএকটরের ব্যবহার করবেন। অন্যান্য সম্ভাব্য বিকল্পগুলির মাঝে রয়েছে সৌর প্যানেল কিংবা ইঞ্জিনগুলিকে বিনা তারে শক্তি প্রেরণ করার ব্যবস্থা করা।

এরই মধ্যে তিনি হাইব্রিড বিমানের দিকে নজর দিচ্ছেন, যেখানে প্লাজমা ইঞ্জিনকে কম্পন বিস্ফোরক জ্বালানী ইঞ্জিন কিংবা রকেটের সাথে সংযুক্ত করে জ্বালানী সাশ্রয় করা যাবে। [নিউসাইনটিস্ট- অবলম্বনে]

-শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.