১৯৫ মিলিয়ন বছর আগের ডায়নোসরের হাড়ে নরম টিস্যুর সন্ধান

0
425

বিজ্ঞানীরা যখন মাটি থেকে কোন অস্থি কিংবা অন্যান্য কঠিন বস্তু সংগ্রহ করেন তখন কখনো কখনো সেসবের সাথে কিছু জৈব উপাদান জাতীয় বস্তুর উপস্থিতি লক্ষ্য করে থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি আবিষ্কৃত ১৯৫ মিলিয়ন বছর আগের ডায়নোসরের জীবাশ্মে পাওয়া এতো পুরোনো প্রোটিনের তুলনায় ভালো কিছু আর পাওয়া যায়নি কখনো।

২০০৯ সালে পাওয়া একটি Hadrosaur ডায়নোসরের ঊরুর হাড়ে পাওয়া কোলাজেনের (প্রোটিন টিস্যু) টুকরোর চেয়েও প্রায় ১০০ মিলিয়ন বছর পুরোনো এই টিস্যু এবং এটা আমাদেরকে অন্যান্য ডায়নোসরের এক অসাধারণ জৈবিক গঠন প্রদান করতে সাহায্য হবে যা এক সময় পৃথিবীর বুকে রাজত্ব করে বেড়াতো।

টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক দীর্ঘ গ্রীবা বিশিষ্ট তৃণভূজী Lufengosaurus ডাইনোসরের পাঁজরের হাড় থেকে এই টিস্যুর আবিষ্কার করেন। এই ডাইনোসর প্রাচীন জুরাসিক সময়ে এখনকার দক্ষিণ-পশিচম চীনে ঘুড়ে বেড়াতো।

গবেষক দলের একজন সদস্য এবং জীবাশ্মবিদ রবার্ট রাইজ বলেন, “এই প্রোটিনগুলো প্রাণীদের দেহে নরম টিস্যুর ব্লক তৈরী করে থাকে এবং এসব প্রোটিন এই দীর্ঘ সময় কিভাবে সংরক্ষিত হলো সেটা জানতে পারাটা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ একটা বিষয়।”

চীন এবং তাইওয়ানের সহকর্মীদের সহয়তায় গবেষকগণ এক ধরণের কণা-ত্বরণ যন্ত্র ব্যবহার করে এসব জীবাশ্ম নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন। এই যন্ত্র ইনফ্রারেড বর্ণালিবীক্ষণ বা আলোক আভা ব্যবহার করে কোন রকম ঝুঁকি ছাড়াই কোলাজেন এবং লৌহ সমৃদ্ধ প্রোটিন উপাদান চিহ্নিত করে।

পূর্বে একই ধরনের কোলাজেন আবিষ্কার করার জন্য অবশিষ্ট জীবাশ্ম হাড় দ্রবীভূত করার প্রয়োজন হয়েছিলো ফলে পরীক্ষার জন্য নমুনা নষ্ট হতো। কিন্তু সর্বশেষ গবেষণার পেছনে থাকা গবেষকগণ বলেছেন তাদের এই অবিধ্বংসী পদ্ধতি ভবিষ্যতে আরও বেশী জৈব দেহাবশেষ খোঁজার পথকে সুগম করে দেবে।

নরম টিস্যুর উপাদান খুঁজে পাওয়া এক ধরনের বিরল ঘটনা। কারণ  ভূ-অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক ভাবেই এগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে  শুধুমাত্র হাড়গুলোই অবশিষ্ট থেকে যায়। বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব প্রোটিন কিভাবে এই দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে সক্ষম হয়, কিন্তু এ ক্ষেত্রে গবেষকদের ধারণা এই উপাদানগুলো রক্তনালীর ভেতরে ‘ক্ষুদ্র আকারের আবদ্ধ কক্ষে’ বিচ্ছিন্নভাবে টিকে থাকতে পেরেছে।

এক দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝা যায় এই নতুন আবিষ্কার থেকে হয়তো আমরা বুঝতে সক্ষম হবো পাখি প্রজাতির এই ডায়নোসরগুলো কিভাবে বিবর্তিত হয়ে এসেছে যাদেরকে এখনও আমরা পৃথিবীতে খুঁজে পাই। যে বিবর্তন প্রক্রিয়া প্রায় ১০ মিলিয়ন বছর সময় ধরে ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়।

নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেরি সুইটজার সহ কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, কোন চূড়ান্ত উপসংহারে পৌঁছানোর জন্য বর্তমান পরীক্ষা নিরীক্ষা খুবই সীমিত। এদের নিয়ে আমাদের আরও বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে।

এদিকে যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিফেন ব্রসেট ছাড়াও অন্যান্যরা মনেকরেন, এই প্রমাণ যথেষ্ট শক্তিশালী। যদিও সুইটজার অথাবা ব্রাসেট কেউই এই গবেষণার সাথে সরাসরি সংযুক্ত নন।

ব্রাসেট বিবিসিকে জানিয়েছেন, “১৯৫ মিলিয়ন বছর পুরোনো ডায়নোসরের জীবাশ্মে প্রোটিন খুঁজে পাওয়া একটি চমকপ্রদ আবিষ্কার।” [সাইন্সএলার্ট-অবলম্বনে]

-শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.