মুরের সূত্রের সমাপ্তি? কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ আর ছোট করা যাচ্ছে না

0
875

আমরা মোটামুটি সবাই জানি, কম্পিউটারগুলো একসময় এখনকার মত ছোট ছিলো না। পঞ্চাশ বা ষাটের দশকে বিরাটাকায় ঘরজুড়ে বিস্তৃত ছিলো একেকটি কম্পিউটার যেগুলোর ধারন এবং কার্যক্ষমতা ছিলো এখনকার ছোট কম্পিউটারগুলোর লক্ষভাগের এক ভাগ। উদ্ভাবনের শুরু থেকেই কম্পিউটারের আকার দিনে দিনে হ্রাস পেয়েছে। কম্পিউটারের না বলে ট্রানজিস্টরের আকার বলা ভালো। একেকটি কম্পিউটার চিপ তৈরি হয় অনেকগুলো ট্রানজিস্টরের সমন্বয়ে। মূলতঃ এগুলোর আকার কমে যাওয়াতেই কম্পিউটারে আকার কমছে।

ট্রানজিস্টরের আকার কমার বিষয়ে মুরের একটি সূত্র আছে। সুত্রটি হলো: একটি নির্দিষ্ট আকারের কম্পিউটারের চিপে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা প্রতি ১৮ মাসে দ্বিগুন হয়ে যাবে, ফলস্বরূপ এর কর্মক্ষমতাও একই হারে বাড়তে থাকবে। কিন্তু সবকিছুরই একটি শেষ আছে। কোনো বস্তুকে আমরা চাইলেই ইচ্ছামত ছোট করতে পারি না। একটি বস্তুকে আমরা ক্রমাগত ছোট করতে করতে অণু এবং পরমাণু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি বড়জোর। এরচেয়ে বেশী আর কোনো বস্তুকে ছোট করা যাবে না। পরমাণু বা অণু্ও ভাঙ্গা যায় কিন্তু এভাবে ভাঙ্গলে আর আগের বৈশিষ্ট্য অক্ষূন্ন রাখা যায় না।

ইলেক্ট্রনিক চিপ তৈরির সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রির এই তথ্যগুলো জানা আছে। তারা মুরের সুত্রের সমাপ্তি হবে একসময় এটি অবগত এই অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে মনে হচ্ছে ঠিক কবে নাগাদ মুরের সূত্রের কফিনে শেষ পেরেকটি বসবে তাও আমরা ইতিমধ্যে জেনে ফেলেছি।

সাম্প্রতিক প্রকাশিত ২০১৫ ইন্টারন্যাশনাল টেকনোলজি রোডম্যাপ ফর সেমিকন্ডাক্টরের হিসেব ও অনুমান অনুযায়ী ট্রানজিস্টরের আকার হ্রাসকরণ বন্ধ হয়ে যাবে ঠিক পাঁচ বছরের মধ্যে, অর্থাৎ ২০২১ সাল নাগাদ। প্রকাশিত প্রতিবেদনের অনুসন্ধান অনুযায়ী, এই বছরটিতে ট্রানজিস্টরের আকার আগের চেয়ে ছোট করতে গেলে তা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না, অর্থাৎ উপাদনখরচ অনেক বেশি পড়বে। তবে কোম্পানীগুলো বিকল্প ব্যবস্থা নিয় এই ক্ষুদ্রকরণ চালু রেখে মুরের সূত্রটিকে হয়তো আরো কিছুদিন চালু রাখার প্রয়াস নিতে পারে।

বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানীগুলো ট্রানজিস্টরের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে পারি বিকল্প কৌশল গ্রহণ করে। এর একটি হলো, শুধু আনুভুমিক সজ্জাই নয়, বরং চিপের মধ্যে ট্রানজিস্টরগুলোকে উলম্ব সজ্জা অনুযায়ী সজ্জিত করা, যার ফলে একটির উপর আরেকটি স্তর তৈরির মধ্যমে বহুস্তর বিশিষ্ট চিপ তৈরি করা সম্ভব। এর ফলেও অল্প জায়গার মধ্যে আগের চেয়ে বেশী ট্রানজিস্টর আঁটানো সম্ভব হবে।

আরেকটি বিষয় হলো অত্যানুকুলভাবে চিপ তৈরি করা। এতদিন কোম্পানীগুলো চিপ তৈরি করে তার উপর ভিত্তি করে সফটওয়্যার কোম্পানীগুলো চিপ তৈরি করেছে। কিন্তু এর উল্টোটা করলে, অর্থাৎ একটি প্রোগ্রামের চাহিদা অনুযায়ী চিপ তৈরি করলে তাতে অনেক বাহুল্য এড়ানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হয়। এর ফলেও মুরের সুত্রের মৃত্যু কিছুদিন বিলম্বিত করা সম্ভব হতে পারে।

বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
3. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.