শৈবালের অবিস্মরনীয় অবদান

1
629

শৈবাল দীঘিরে বলে উচ্চ করি শির,
লিখে রেখো এক ফোঁটা দিলেম শিশির।

পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত জীবজগৎ সত্যিই বৈচিত্র্যময়। এখানে কতোই না বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ আর প্রানী আর কতোই না বিভিন্ন তাদের বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া এই বৈচিত্র্যময় জীবজগতের একটি ক্ষুদ্র অংশই কেবল আমরা উদ্ঘাটন করতে পেরেছি। এর বাইরে না জানি আরো কত বৈচিত্র্য লুকিয়ে আছে। এই বৈচিত্র্যময় জীবজগৎ বিশেষ করে প্রানীজগৎ তাদের দৈনন্দিন জীবন-যাত্রার জন্য যদি কেবল এক ধরনের জীবের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হয় তাহলে সে হচ্ছে শৈবাল!

শৈবাল থেকে তৈরি স্বাস্থ্যকর পানীয়।
শৈবাল থেকে তৈরি স্বাস্থ্যকর পানীয়।

সমগ্র পৃথিবীতে জীবজগতের যাবতীয় শক্তি আসে সূর্য থেকে এটি আমরা মোটামুটি জানি। এই সূর্যশক্তি নিশ্চয়ই কোনো জীবই সরাসরি ব্যবহার করতে পারে না। সৌরশক্তিকে জীবের ব্যবহার উপযোগী করার জন্য একটি মাত্র অণু রয়েছে, যার নাম ক্লোরোফিল। সমগ্র জীবজগৎ যে শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জন্মগ্রহন করে, দৈনন্দিন জীবন-যাপন করে এবং বংশ-বিস্তার করে তার ৯৯.৯% ভাগই সূর্য থেকে ক্লোরোফিলের মাধ্যমেই শোষিত হয় এবং ক্লোরোফিল বিদ্যমান থাকে উদ্ভিদের সবুজ অংশে। ক্লোরোফিলের মাধ্যমে শোষিত এই শক্তি বায়ুমন্ডলের কার্বন-ডাইঅক্সাইড এবং পানির মাধ্যমে গ্লুকোজে পরিণত হয়ে তাতে রাসায়নিক শক্তি হিসেবে বিদ্যমান থাকে। এই গ্লুকোজই সকল জীবের শক্তি ব্যবহারের মূল জ্বালানী।

শৈবালের শক্তি ব্যবহার করে তৈরি বাতি। এই ধরনের বাতিতে আলো জ্বলবে শৈবালের সাংগৃহীত শক্তি থেকে যা প্রতিবছর পরিবেশ থেকে বিপুল পরিমান কার্বন-ডাই অক্সাইড হ্রাস করবে।
শৈবালের শক্তি ব্যবহার করে তৈরি বাতি। এই ধরনের বাতিতে আলো জ্বলবে শৈবালের সাংগৃহীত শক্তি থেকে যা প্রতিবছর পরিবেশ থেকে বিপুল পরিমান কার্বন-ডাই অক্সাইড হ্রাস করবে।


যদিও সমগ্র উদ্ভিদজগৎই সৌরশক্তি থেকে গ্লুকোজ উৎপন্ন করে কিন্তু মূল কাজটি করে শৈবালই। সমগ্র পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের ছড়িয়ে থাকা শৈবাল এবং নীলাভ সবুজ শৈবালই সৌরশক্তিকে জীবের উপযোগী শক্তির পরিণত করার মূল উৎস। এই শৈবালগুলোই সামুদ্রিক জীবজগতের শক্তির প্রায় একমাত্র উৎসও বটে। খাদ্যচক্রের একেবারে শুরুতেই রয়েছে এরা। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে একদা অক্সিজেন ছিলো না, শৈবালই পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ২১% অক্সিজেন যুক্ত করেছে যা পরবর্তীতে প্রাণীর বিকাশের পথ সৃষ্টি করেছে।

শুধু প্রানীর উদ্ভবেই নয়, ভবিষ্যতে খোদ মানব প্রজাতির টিকে থাকার ক্ষেত্রেও শৈবালের ভূমিকাকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শৈবালকে দেখা হচ্ছে ভবিষ্যতের জ্বালানী সমস্যা সমাধানের একটি বড় উৎস হিসেবে। মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডে বিপর্যস্ত পবিবেশ দূষনের বিরুদ্ধে শৈবাল বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কয়েক শতাব্দী ধরে শৈবাল সার হিসেবে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। বেশ কিছু শৈবাল পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং পুষ্টি চাহিদা মেটাতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তাছাড়া শিল্পক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু দ্রব্য শৈবাল থেকে সংগৃহীত হয়।

পেন্টাগনের উদ্যোগে শৈবাল চাষ করা হচ্ছে জেটফুয়েল তৈরির জন্য।
পেন্টাগনের উদ্যোগে শৈবাল চাষ করা হচ্ছে জেটফুয়েল তৈরির জন্য।

কাজেই দীঘিতে পানি যোগান দেওয়ার জন্য শৈবাল গর্ব করতে না পারলেও অন্য অনেক ক্ষেত্রেই তা পারে বৈ কী!

-ইমতিয়াজ আহমেদ
সম্পাদক, বিজ্ঞান পত্রিকা
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]

1 মন্তব্য

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.