হীরার তৈরী ব্যাটারি, চলবে ৫,০০০ বছর!

0
542

ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ও পদার্থবিদের একটি দল ইউরোপের একটি মর্যাদাপূর্ণ বার্ষিক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে নিউক্লীয় ক্ষমাতা সম্পন্ন এই হীরের ব্যাটারির তথ্য উপস্থাপন করেছেন যা নিউক্লিয়ার বর্জ্য থেকে উদ্ধারকৃত তেজস্ক্রিয়তা দিয়ে পরিচালিত হবে। গবেষক দলের মতে, এই কৌশলটি বৈদ্যুতিক প্রজন্মের সম্পূর্ণ নতুন এক পদ্ধতির প্রতিনিধিত্ব করবে, যা দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি, নিউক্লিয়ার বর্জ্য নিষ্কাশনের মাধ্যমে নিরাপদ শক্তি ব্যবহারের সুদূরপ্রসারী দিগন্তের দ্বার উন্মোচন হবে।

বৃটেনের নিউক্লিয়ার এনার্জি প্লান্টগুলোর চুল্লিতে শক্তি উৎপাদনে বিশালাকার সব গ্রাফাইটের ব্লক ব্যবহার করা হয়। যখন এসব ব্লক ব্যবহার করার পর সরিয়ে ফেলা হয় তখনও এগুলোর মাঝে যথেষ্ট পরিমাণে তেজস্ক্রিয়তা অবশিষ্ট থাকে এবং সেই অনুযায়ী এদের তেজস্ক্রিয়তা মুক্ত করতে হয়।

ব্রিস্টলের দলটি মূলতঃ এই গ্রাফাইটের ব্লক থেকে কার্বন-১৪ সমৃদ্ধ অধিকাংশ তেজস্ক্রিয়তা আলাদা করার একটি পথ খুঁজে পেয়েছেন। এর মাধ্যমে গ্রাফাইটের ব্লকগুলো কম তেজস্ক্রিয় হয়, তেজস্ক্রিয়তা মুক্ত করাও সহজ হয় এবং খরচ অনেক কমে যায়। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে ভূগর্ভের গুদামে প্রায় ৯৫,০০০ মেট্রিক টন গ্রাফাইট ব্লক মজুদ রয়েছে।

নিউক্লিয়ার বর্জ্য আলাদা করার পর প্রযুক্তিবিদগণ নিষ্কাশিত কার্বন -১৪ কে গ্যাসীয় আকারে কৃত্রিম হীরা তৈরীর কাজে ব্যবহার করবেন। মানুষের তৈরী এই হীরার আণবিক গঠন প্রাকৃতিক হীরার মতোই হবে। যদিও এরা একপর্যায়ে তেজস্ক্রিয় অবস্থায় ছিলো।

গবেষক দল বলেন, “মানবসৃষ্ট হীরাগুলোর একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তেজস্ক্রিয় ক্ষেত্রে স্থাপিত হওয়ার পর এরা বিদ্যুৎ প্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে। যেহেতু আমাদের হীরা তেজস্ক্রিয় কার্বন থেকে তৈরী তাই এরা নিজেদের ক্ষেত্র ব্যবহার কর অল্প পরিমাণে বিদ্যুৎ প্রবাহ উৎপন্ন করতে পারে। আর এটাই আমাদেরকে নিউক্লিয়ার চালিত একটি হীরার ব্যাটারি দিয়েছে।”

অবশ্য এ ব্যাটারীর একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে এগুলো এখনও অত্যন্ত তেজস্ক্রিয়। কিন্তু এতে  তেমন সমস্যা হবেনা। ব্রিস্টল দলটি একটি উপায় বের করেছে যার মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় হীরাটিকে একটি নিষ্ক্রিয় হীরার ভেতর এমন ভাবে আবৃত করে রাখা হবে যেখানে শক্তি উৎপন্ন হবে ঠিকই কিন্তু তেজস্ক্রিয়তা অবরুদ্ধ থাকবে। এই নতুন আবৃত হীরাটির একটি কলার চেয়েও কম তেজস্ক্রিয়তা রয়েছে।

দলটি আরও বলেন, “এখানে কোন  গতিময় অংশ নেই, কোন রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন নেই এবং কোন নির্গমনও নেই। এটি সরাসরি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করবে। যেহেতু মানুষের জানামতে হীরের চেয়ে কঠিন কোন বস্তু নেই, তাই অন্য কোন উপাদান দিয়ে তেজস্ক্রিয় কার্বন -১৪ কে সহজে সুরক্ষা প্রদান করতে পারবেনা।”

দলটির হীরের ব্যাটারির নকশা বা প্রটোটাইপে বিকিরণের উৎস হিসেবে কার্বন -১৪’র পরিবর্তে নিকেলের একটি তেজস্ক্রিয় উপাদান ব্যাবহার করেছেন। কিন্তু বৃস্টল দলের গবেষণাকৃত উপাত্ত অনুসারে, নিকেল যদি ঠিকঠাক কাজ নাও করে কার্বনই  বদলি হিসেবে কাজ করতে সক্ষম হবে।

যদিও হীরের ব্যাটারি ১৫ জুলের অল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে অপরদিকে একটি প্রমাণ AA আকারের ব্যাটারি ৭০০ জুল পর্যন্ত শক্তি উৎপন্ন করে। বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন প্রতিনিধি আলিয়া মুঘল বলেন, এই হীরা ব্যাটারির প্রধান সুবিধা হচ্ছে এর দীর্ঘস্থায়ীত্ব। একটি প্রচলিত ব্যাটারির তুলনায় এই ব্যাটারি অল্প পরিমাণ শক্তি প্রদান করলেও ৫,৭৩০ বছরের অর্ধেক সময়ের মধ্যেই কয়েক মিলিয়ন জুল শক্তি উৎপন্ন করবে।

ব্রিস্টলের গবেষক টম স্কট বলেছেন, “আমরা এই ব্যাটারি এমন পরিস্থিতে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছি, যেখানে কোন প্রকার চার্জ দেয়া সম্ভব হয়না এবং প্রচলিত ব্যাটারি প্রতিস্থাপনও করা যায়না। অবশ্যই এই ব্যবহারের ক্ষেত্র হতে হবে স্বল্প ক্ষমতার বৈদ্যুতিক যন্ত্র, যেগুলোতে দীর্ঘ সময়ের জন্য শক্তির উৎসের প্রয়োজন পড়ে। যেমন, হৃদস্পন্দন সচল রাখার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রে, উপগ্রহ, অতি উচ্চতার ড্রোন, অথবা মহাকাশযানের মতো জায়গায়।” [Seeker -অবলম্বনে]

শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.