শুনতে অনেকটা রোমাঞ্চকর লোককথার গল্পের মতো মনে হলেও বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন, বয়ষ্ক দেহে কোন তরুণের রক্ত প্রবেশ করালে সে তার যৌবন পুনরায় ফিরে পেতে পারে। এমনকি সেই দেহ যদি মানুষের না হয় তবুও।
গবেষকগণ নতুন এক গবেষণায় ১৮ বছর বয়সী এক দল তরুণ ও সুস্থ মানুষের শরীর থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ১২ মাস বয়সী ইঁদুরের শরীরে প্রবেশ করিয়েছেন। এটি ইঁদুরের মধ্য বয়স বা মানুষের প্রায় ৫০ বছর বয়সের সমান।
ইঁদুরটির শরীরে সপ্তাহে দুই বার করে মোট তিন সপ্তাহ মানুষের রক্তের প্লাজমা প্রবেশ করানো হয়েছে। প্লাজমা হচ্ছে রক্তের তরল উপাদান যাকে আয়ুষ্কালের বৈশিষ্ট্যের জন্য বিবেচনা করা হয়।
এরপর, ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক বায়োফার্মাসিটিক্যাল কম্পানী আলকাহেস্ট এর একজন বিজ্ঞানী রক্ত প্রবেশ করানো ইঁদুরটির সঙ্গে একদল ৩ মাস ও ১২ মাস বয়ষ্ক ইঁদুরের(যাদের শরীরে প্লাজমা করানো হয়নি) আচরণের সাথে তুলনা করতে থাকেন।
নতুন রক্ত প্রবেশ করানো ইঁদুরটি তরুণ ইঁদুরের মতো আচরণ করতে শুরু করে এবং বিজ্ঞানীদের নিয়ন্ত্রনাধীন খোলায় জায়গায় অন্য কনিষ্ঠদের মতো চলাচল করতে থাকে।
গবেষকগণ ইঁদুরটিকে বার্ণস মেজ নামক একটি গোলকধাঁধা যন্ত্রের মাঝে রাখেন, যা দিয়ে তীক্ষ্ণদন্ত প্রাণীদের দূরত্ব সংক্রান্ত শিক্ষা এবং স্মৃতি পরিমাপ করা হয়।
দূর্বল স্মৃতি হওয়ার দরুণ বয়ষ্ক ইঁদুরটি বার্ণস মেজ যন্ত্রে দুর্বল ফলাফল করে। অন্যদিকে এই পরীক্ষায় চিকিৎসা করা ইঁদুরটি তরুণ ইঁদুরের মতো প্রতিক্রিয়া করতে দেখা যায় ।
আলকাহেস্টের একজন বিজ্ঞানী সাকুরা মিনামি নিউ সাইন্টিস্ট কে বলেন, “আমরা নবযৌবনের প্রভাব দেখতে পেয়েছি। অল্প বয়সী মানুষের প্লাজমা এই চেতনাকে উন্নত করে।”
প্লাজমাতে হাজার হাজার প্রোটিন রয়েছে। যখন কোন তরুণ প্লাজমা কিছু সংখ্যক প্রোটিন বহন করে তখন এটি টিস্যুকে নবযৌবন দিয়ে থাকে। বয়সের সাথে সাথে টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্থ অণুর প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে হারিয়ে যায়।
স্নায়ুবিজ্ঞানী এবং আলকাহেস্টের প্রতিষ্ঠাতা কারোলি নিকোলিচ বলেন, “প্রকৃতপক্ষে এবারই আমরা প্রথম আবিষ্কার করলাম, শতশত প্রোটিন রয়েছে যেগুলো বয়সের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে থাকে।”
তাহলে এই প্রোটিনগুলো আসলে কি? গবেষগণ এসবের বিস্তারিত এখনও জানাননি কিছু। তবে মিনামি বলেছেন, এই প্রোটিনগুলো শুধু শরীরের টিস্যুর উপরই প্রভাব বিস্তার করেনা সাথে মস্তিষ্কের উপরও এর সমান প্রভাব রয়েছে।
দলটি যখন প্লাজমা দেয়া ইঁদুরটির মস্তিষ্কের রক্তের সংমিশ্রণ পরীক্ষা করলেন এবং এর ফলাফল সমবয়সী অন্য সাধারণ ইঁদুরের সাথে তুলনা করলেন তখন তাঁরা দেখতে পেলেন চিকিৎসা প্রদত্ত ইঁদুরটির প্রচুর পরিমাণে নতুন স্নায়ুকোষ উৎপন্ন হয়েছে।
স্নায়ুকোষ গঠন হও্য়াকে নিউরোজেনেসিস বলা হয়ে থাকে, যা আমাদের শেখা ও মনে রাখার ক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর এই ইঁদুরটির মস্তিষ্ক এটাই নির্দেশ করছে যে, তরুণ প্লাজমা এই প্রক্রিয়াকে আরো তরান্বিত করে।মিনামি বলেন, “এটাকে অনেকটা নাটকীয় বলা যায়।”
গবেষণাটি এই সপ্তাহের সান দিয়াগোতে অনুষ্ঠিত Society for Neuroscience annual meeting এ উপস্থাপন করা হয়েছে। ২০১৪ সালের কয়েকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, অল্পবয়সী ইঁদুরের রক্ত বয়ষ্ক ইঁদুরের শরীরে প্রবেশ করালে তাতে এর চেতনা ও শক্তি উন্নত হয়। যদিও আলকাহেস্ট কম্পানিই প্রথম যারা কোন মানুষের রক্ত ইঁদুরের শরীরে প্রবেশ করিয়েছে।
আলকাহেস্ট এর গবেষকগণ এখন পরীক্ষা করতে চাচ্ছেন কোন অল্প বয়ষ্ক মানুষের রক্ত কোন বৃদ্ধ মানুষের শরীরে দেয়া যায় কিনা এবং তাতে একই ঘটনা ঘটে কিনা।
-শফিকুল ইসলাম