কীটনাশক থেকে মৌমাছিদের রক্ষা করতে আলো থেরাপি

0
381

বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত ফসলের জন্য পরাগবাহী পতঙ্গ বিশেষ করে মৌমাছির গুরুত্ব অনেক। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এবং কিছু ক্ষতিকর পোকামাকড় ধ্বংস করতে নিয়োনিকোটিনয়িড জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এতে করে অন্যান্য পোকামাকড়ের সাথে প্রচুর পরিমাণে মৌমাছিও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যা সমগ্র বিশ্বের কৃষির জন্য মারাত্মক হুমকি বয়ে আনছে।

UCL এর নতুন গবেষণায় দেখা গেছে আলো থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসায় নিয়োনিকোটিনয়িড জাতীয় কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মৌমাছিদের রক্ষা করা যাবে এবং বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত মৌমাছিদের টিকে থাকার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।

ইউসিএল ইনস্টিটিউট অব অপথালমোলজির অধ্যাপক গ্লেন জেফরি বলেন, “বিশ্বব্যাপী কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী মৌমাছির জন্য নিয়োনিকোটিনয়িড কীটনাশক ক্রমাগত হুমকি বয়ে আনছে। আমার দল একটি ছোট যন্ত্রের উন্নতি সাধন করছে যা একটি বাণিজ্যিক মৌচাকে লাগানো যাবে। আর এর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত একটি অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হবে।”

এই কীটনাশকটি মাইটোকন্ড্রিয়াল কার্যক্রম ধ্বংস করে এবং এডিনসিন ট্রাইফসফেট (ATP) এর উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে উন্মুক্তভাবে মৌমাছির চলাফেরা করার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে এবং বেশিরভাগই না খেয়ে মারা যেতে থাকে।

গবেষকগণ বাণিজ্যিক মৌচাক থেকে চারটি দলে ভাগ করে আলো থেরাপির পরীক্ষায় ব্যবহার করেছিলেন, যার প্রত্যেকটি মৌচাকে ৪০০ টিরও বেশি মৌমাছি ছিল। দুটি দলকে দশদিন পর্যন্ত নিয়োনিকোটিনয়িড, ইমিডাক্লোপ্রিড কীটনাশকের এর সম্মুখীন করা হতো। সাথে একটি দলের মৌচাকে দিনে ১৫ মিনিট করে দুবার অবলোহিত বিকিরণের ((670nm)) মাধ্যমে দশদিন আলো থেরাপি দেয়া শুরু হতো।

উন্মুক্ত মৌমাছির দল যেগুলো বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে কিন্তু আলো থেরাপির সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়নি সেগুলো দ্রুতই দূর্বল হয়ে পড়ে এবং তাদের টিকে থাকার মাত্রাও আনুপাতিকহারে কমতে থাকে। আর যে মৌমাছি গুলোকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর আলো থেরাপির সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়েছিল তাদের টিকে থাকার অনুপাত উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হতে থাকে এবং অন্য সাধারণ মৌমাছির মতো জীবনযাপন করতে থাকে যেন তাদের বিষক্রিয়াই হয়নি। অন্য একটি দল ছিল যারা বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়নি কিন্তু আলো থেরাপি দেয়া হয়েছিল এবং তাদের টিকে থাকার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত দলটির থেকে ভালো ছিল। গবেষকগণ দেখতে পেলেন লাল বাতিটি মৌমাছির আচরণকে কোনপ্রকার প্রভাবিত করেনি, যেন তারা বাতিটিকে দেখতেই পায়নি।

অধ্যাপক জেফরি বলেন, “অন্যান্য গবেষণায় মাইটোকন্ড্রিয়াল পতন (যা বার্ধক্য থেকে তৈরি হয়) কমাতে দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো থেরাপি ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি এটা সে সকল মৌমাছির জন্যও উপকারী, যারা কীটনাশক দ্বারা প্রভাবিত হয়নি। সুতরাং আলো থেরাপি মৌমাছির জীবন রক্ষার্থে ব্যবহৃত হতে পারে এমনকি যদি কোন কলোনি নিয়োনিকোটিনয়িড কিটনাশকে উন্মুক্তভাবে থাকে তবুও এটা কার্যকর।”

যদিও আলো থেরাপি একটি প্রতিরোধমূলক পদ্ধতি হিসেবে বেশি ভাল কাজ করে তবে গবেষকরা এটাও জেনেছেন যে, এটা কীটনাশক জাতীয় সমস্যা প্রকাশ পেলেও তার চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে এর প্রয়োগ করা যাবে।

লন্ডন সিটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং UCL এর গবেষণা পরিচালক ড. মাইকেল পাওনার বলেন, “আমরা দেখেছি বিষাক্ত কীটনাশকে আক্রান্ত মৌমাছির উপর উজ্জ্বল লাল আলোর প্রভাবে দুর্বল অবস্থা থেকে সামলে উঠতে এবং সেই সাথে চলাচল শুরু করার মাধ্যমে পুণরায় খাবার খেতে সক্রিয় করে তুলে।”

UCL অপথ্যালমোলজিতে এ গবেষকগণ অবলোহিত বিকিরণের আলো থেরাপি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন কারণ এটি শুধুমাত্র মৌমাছিদের জন্যই উপকারী নয় সাথে অন্যান্য পশুসহ মানুষের জন্যও এই পদ্ধতি অনেক সফলভাবে প্রয়োগ করা যাবে। বিশেষ করে বার্ধক্যজণীত প্রভাবের বিপক্ষে এবং স্নায়ুবিক রোগসমূহের চিকিৎসায়ও প্রয়োগ করার জন্য।

অধ্যাপক জেফরি বলেন, “যখন একটি স্নায়ু কোষ অন্যান্য কোষের তুলনায় বেশি শক্তি ব্যবহার করে অথবা শক্তির অভাবে দূর্বল হয়ে পরে তখন লাল আলো থেরাপি মাইটোকন্ড্রিয়াল কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করে এর শক্তি জোগাতে সক্ষম হবে। মূলত এটি কোষের ব্যাটারীকে পুনরায় চার্জ করার কাজ করবে।”

-শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.