বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো একটি মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেরুরজ্জুর প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করে দুটি পক্ষাঘাতগ্রস্থ রেসাস ম্যাকাক বানরকে পুনরায় দূরনিয়ন্ত্রিত হাঁটার সক্ষমতা দিতে পেরেছেন।
এই ব্যবস্থায় বেতারের মাধ্যমে দূর হতে কোড করা মস্তিষ্কের সংকেত পাঠানো হয় যা পেশীতে উদ্দীপনা তৈরির মাধ্যমে হাঁটার জন্য কর্মক্ষম করে। মস্তিষ্ক-স্নায়ু রজ্জুর সমন্বিত এই ব্যবস্থা যদিও শুধু বানরের উপরেই পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে তবু গবেষকগণ মনে করছেন এই প্রযুক্তি একদিন পক্ষাঘাতগ্রস্থ মানুষের উপরও প্রয়োগ করে হাঁটার সক্ষমতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।
ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী ডেভিড বর্টন বলেন, “আমরা যে ব্যবস্থাটি দাঁড় করেছি তাতে মস্তিষ্কের মটর কর্টেক্স থেকে রেকর্ড করে রাখা সংকেত ব্যবহার করা হয়েছে যাতে হাঁটাচলা সৃষ্টিকারী মেরুদন্ডের স্নায়ুতে বাইরে থেকে সংকেতের মাধ্যমে উদ্দীপনা দেওয়া যায়। ব্যবস্থাটি চালু অবস্থায় আমাদের গবেষনায় ব্যবহৃত বানরগুলো প্রায় স্বাভাবিক চলন প্রদর্শন করে।”
আমরা যখন হাঁটি তখন আমাদের মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্সে বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি হয় এবং তা স্নায়ুরজ্জুর মাধ্যমে নিচের দিকে নামতে থাকে। পায়ের উপরের অংশে পৌঁছে এগুলো আমাদের পায়ের মোটর নিউরনকে সমন্বয়ের মাধ্যমে পায়ের পেশীগুলোকে চালিত করে যার ফলে আমরা হাঁটতে পারি।
কিন্তু মেরুদন্ডের উপরের অংশে আঘাতের ফলে মস্তিষ্কের সাথে স্নায়ুরজ্জুর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে যার ফলে সংকেত আমাদের পায়ের সাথে যোগাযোগ সমন্বয় করতে পারে না।
গবেষকদলের লক্ষ হচ্ছে আঘাতপ্রাপ্ত স্নায়ুরজ্জুর এই সমন্বয়হীনতা দূর করে স্বাভাবিক চলনে সহায়তার লক্ষ্যে কাজ করা।
এই ব্যবস্থায় ব্রেইনগেট নামক পূর্ববর্তী একটি পদ্ধতিতে ছোট ইলেক্ট্রোডের সজ্জার মাধ্যমে মস্তিষ্ক হতে চলনের সাথে সম্পর্কিত মোটর কর্টেক্সের সংকেত রেকর্ড করে রাখা হয়। একটি তারবিহীন সেন্সর পরবর্তীতে এই সংকেত একটি কম্পিউটারে প্রেরণ করে এবং সেগুলোকে নতুন কোডে রূপান্তর করে। এই নতুন কোড পরবর্তীতে তারবিহীনভাবে মেরুদন্ডের নিন্মাংশে প্রেরন করা হয়, যেন স্নায়ুরজ্জুর আঘাতের অংশটি অতিক্রম করে যেতে পারে।
এই সংকেত পায়ের উপরের অংশে পুনরায় সংকেত প্রদান করে এবং স্বাভাবিক চলন নিশ্চিত হয়।
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক