কোয়ান্টাম ফিজিক্স-১৭ : আলোর কণা ফোটন

3
987

[বইটির সূচীপত্র এবং সব খন্ডের লিংক একত্রে দেখুন এখানে]

১৯০৫ সাল। ততোদিনে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক তাঁর কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রকাশ করেছেন। তবে বিজ্ঞানী মহলে সাড়া ফেলতে পারেনি তখনো। কিন্তু সুইজারল্যান্ডের পেটেন্ট অফিসের অখ্যাত কেরানিটি কিন্তু অন্যরকম ভেবেছিলেন। অফিসে-বাড়িতে বসেই তিনি থিয়োরি অব রিলেটিভিটির খসড়া কসছেন মনে মনে আর খাতা-কলমে। তৈরি করছেন ব্রাউনীয় গতির যুৎসই ব্যাখ্যাও। একইসাথে ভাবছেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব নিয়েও। তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল, আলোক-তড়িৎ ক্রিয়ার ব্যাখ্যা খোঁজা। এজন্য তিনি ক্ল্যাসিক্যাল মেকনিক্স ছেড়ে হাত বাড়ালেন কোয়ান্টামের। আর সেজন্য প্রথম যে ভাবনাটি আইনস্টাইনের মাথায় এলো,  সেটা এক যুগান্তকারী। আলো শক্তি ঠিক আছে, তরঙ্গ ও ঠিক আছে। একই সাথে কণাও। আইনস্টাইন বললেন একথা। অর্থাৎ বিজ্ঞানে আবার ফিরে এলো আলোর কণাতত্ত্ব। তবে নিউটনের কণাতত্বের সাথে আইনস্টানের কণাতত্ত্বের কোনো মিল নেই। আলো কণা হিসেবে আখ্যায়িত করলেন আইনস্টাইন। তবে সেই কণা দিয়ে আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া ব্যাখ্যা করার জন্য চিরার কণাবিদ্যা বা তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্বের দিকে হাত বাড়ালেন না। বরং বিকিরণের জন্য ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক যে কোয়াণ্টাম তত্ত্ব দিয়েছিলেন সেটা দিয়েই ব্যাখ্যা করলেন আলোক-তড়িৎক্রিয়া। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক আলোর ক্ষুদ্র শক্তি গুচ্ছকে বলেছিলেন প্যাকেট বা কোয়ান্টাম। আইনস্টাইন আলোর সর্বনিম্ম শক্তির সেই প্যাকেটকেই বললেন আলোর কণা। সেই কণার নাম দিলেন ফোটন কণা। ফোটন ভরহীন কণা। তবে গতিশীল ফোটনের ভরবেগ আছে বলে উল্লেখ করলেন আইনস্টাইন। ভরবেগ ও শক্তি সম্পন্ন কণাকে তিনি তুলনা করলেন কামানের গোলার সাথে। কামানের গোলা প্রচন্ড বেগে কোনো বস্তুর গায়ে আঘাত হানে।  গুড়িয়ে দেয় সেই বস্তুকে। ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় আঘাত পাওয়া বস্তুটি। সেই বস্তুর টুকরো টুকরো অংশ প্রবল বেগে ছিটকে বেরিয়ে যায়। আইনস্টাইন বললেন, আলোর ফোটন কণা প্রবল বেগে কামানের গোলার মতো গিয়ে আঘাত হানে ধাতুর পরমাণুতে। তখন পরমাণুর ভেতর থেকে ছিটকে বেরিয়ে যায় ইলেট্রন কণা।

header

যে আলো ফটো-তড়িৎক্রিয়ায় অংশ নেয়, তার উজ্জ্বলতাও আলোক তড়িৎক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। আলোক রশ্মি যত উজ্জ্বল হবে তার ইলেকট্রন নির্গমনের ক্ষমতা তত বেশি থাকবে।

যে আলোর কম্পাঙ্ক যত বেশি, তার শক্তিও তত বেশি। সুতরাং সেই আলো ধাতুর ওপর যে ধাক্কা দেবে সে ধাক্কার জোরও তত বেশি হবে। সুতরাং ইলেক্ট্রন বের করার ক্ষমতা সেই আলোর বেশি থাকবে। একসাথে দুটো সমস্যার সমাধান হলো। আলোক-তড়িৎক্রিয়ার সমস্যাটা মিটল। সেই সাথে কোয়ান্টাম তত্ত্বও প্রতিষ্ঠিত হলো শক্তপোক্তভাবে। আলোক তড়িৎ-ক্রিয়া ব্যাখ্যার পর থেকে তরুণ বিজ্ঞানীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন বিজ্ঞানের এই নতুন শাখাটিতে। এর ১৬ বছর পর ১৯২১ সালে আইনস্টাইন পেয়েছিলেন নোবেল পুরস্কার। হ্যাঁ, আইনস্টাইন তাঁর বিখ্যাত আবিষ্কার থিওরি অব রিলেটিভিটির জন্য নোবেল পাননি। পেয়েছিলেন ফটো-তড়িৎক্রিয়া ব্যাখ্যার জন্য। আইনস্টাইন ঠিক আগের বছর নোবেল পেয়েছিলেন প্ল্যাঙ্ক। তবে প্ল্যাঙ্ক কিন্তু বিকিরণের কোয়ান্টাম তত্ত্ব ব্যাখ্যা করার পর খুব বেশি এগুতে পারেননি।

আলোক তড়িৎক্রিয়ার যেসব সমস্যা ছিল, সেগুলোর সমাধান বেরুলো ফটো-তড়িৎক্রিয়ার হাত ধরে। সমস্যাগুলোর ওপর এক চোখ বুলিয়ে নিতে পারি। বেগুনি আলো সোডিয়াম ধাতুর ওপর আপতিত হলে ইলেক্ট্রন নির্গত হয়। তরঙ্গ তত্ত্বের হিসাব বলে বেগুনি আলো সোডিয়ামের ওপর আপতিত হওয়ার সাথে সাথে ইলেক্ট্রন নির্গত হবে না। সময় লাগবে প্রায় ৫০০ দিন। কিন্তু পরীক্ষায় দেখা যায় মুহূর্তের মধ্যেই ইলেক্ট্রন নির্গত করছে সোডিয়াম ধাতু।

এবার আইনস্টাইনের ব্যাখ্যাটা একটু দেখে নেওয়া যাক। আইনস্টাইন বললেন, আলোর একটা ফোটন কণা গিয়ে আঘাত করে ধাতুর একটা পরমাণুর ওপর। সেই পরমাণু ফোটনের সবটুকু শক্তি শুষে নেবে। ফোটনের শক্তি শুষে নিয়েছে পরমাণু। সেটা তো কাজে লাগাতে হবে। শক্তি পরমাণুতে ঢোকার পর চুপচাপ বসে থাকে না। সেই শক্তির একটা অংশ ব্যায় হয় পরমাণুর কক্ষপথে থেকে একটা ইলেকট্রনকে সরিয়ে ফেলতে। বাকি শক্তিটুকুও পড়ে থাকবে না পরমাণুর ভেতরে। ইলেকট্রনকেও তো গতি অর্জন করতে হবে। সেই গতিশক্তি সে পাবে কোথায়? ফোটন থেকে শোষণ করা বাকি শক্তিটুকু পরমাণু থেকে গ্রহণ করবে ইলেক্ট্রন। গতিপ্রাপ্ত হয়ে ছুটে বেরিয়ে যাবে পরমাণু থেকে। যে আলোর কম্পাঙ্ক মত বেশি। সেই আলোর ফোটনের শক্তিও তত বেশি। সুতরাং খুব দুর্বল শক্তির ফোটন আঘাত করলে ইলেক্ট্রন পরমাণু থেকে আলগা হয়ে বেরিয়ে যাবে ঠিকই, কিন্তু ছুটে বেশি দূর যেতে পারবে না। একেবারে দুর্বল শক্তির ফোটন, ধরা যাক অবলোহিত আলোর ফোটন পরমাণুতে আঘাত করল। তাতে ইলেক্ট্রনের বন্ধন নড়বড়ে হবে কিন্তু ইলেকট্রনকে গতিশীল করতে পারবে না। তাই দুর্বল আলোর ক্ষমতা নেই আলোক-তড়িৎক্রিয়া ঘটানোর।

আইনস্টাইনের ব্যাখ্যাটা একটু দেখে নেওয়া যাক। ধরা যাক একটা ফোটন কণা আঘাত করবে ধাতুর একটা পরমাণুকে। প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম তত্ত্বানুসারে ফোটনের শক্তি E=hν………….(১)
h=প্ল্যাঙ্ক ধ্রবক
ν=ফোটনের কম্পাঙ্ক
আবার আইনস্টাইন দেখিয়েছেন আলোর স্থির ভর শূন্য কিন্তু গতিশীল অবস্থায় আলোর ভরবেগ আছে। সেই ভববেগ আইনস্টাইন P দিয়ে প্রকাশ করলেন।

নির্গত ইলেক্ট্রনের বেগ v এবং ভর m। তাহলে ইলেক্ট্রনের গতিশক্তি হবে =১/২  mv^২………(২)
ভরশক্তির নিত্যতা সূত্র থেকে লেখা যায়,
ফোটনের শক্তি = ইলেক্ট্রনের গতিশক্তি + ইলেক্ট্রনকে পরমাণুর কক্ষপথ থেকে মুক্ত করতে যে শক্তি (ডথ০) ব্যয় হয় ইলেক্ট্রনকে মুক্ত করতে ব্যয় হওয়া শক্তি। অর্থাৎ,
E=১/২  mv^২+W০   ………..(২)
(১) ও (২) নং সমীকরণ থেকে লেখা যায়,
hν=১/২  mv^২+W০   ………..(২)
এই ছোট সহজ সমীকরণটার ভেতরেই লুকিয়ে রয়েছে আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার ব্যাখ্যা।

কীভাবে কোয়ান্টাম তত্ত্ব আলোক তড়িৎ ক্রিয়া ব্যাখ্যা করল সেটা একটু দেখে নেওয়া যাক। আলোর তরঙ্গ তত্ত্ব ব্যবহার করে দেখা যায় আলোক তড়িৎ ক্রিয়া সংঘঠিত হতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। পরীক্ষায় দেখা গেছে মুহূর্তের মধ্যেই আলোক-তড়িৎক্রিয়া সংঘঠিত হয়। সেটা এক ন্যানো সেকেন্ডর সময়ে। কোয়ান্টামে তত্ত্ব বলে একটা ফোটন পরমাণুর একটা মাত্র ইলেকট্রনকে আঘাত করবে। ইলেকট্রন ফোটন থেকে কিছু শক্তি ধার করে প্রবল বেগে বেরিয়ে আসে। একটা ফোটনের শক্তি একটা ইলেকট্রনই গ্রহণ করে। অন্যকোনো ইলেকট্রনকে সেই শক্তির ভাগ সে দেয় না। তাই ইলেকট্রন সেই শক্তি নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে ছুটে বেরিয়ে যেতে পারে। অন্য দিকে আলো যদি ফোটন কণা না হয়ে শুধু তরঙ্গগুচ্ছ হতো, তাহলে তার নির্দিষ্ট কোনো আকার থাকত না। তরঙ্গের শক্তি ভাগ হয়ে যেত পরমাণুর সব ইলেক্ট্রনে। এর ফলে নির্দিষ্ট একটা ইলেকট্রন পরমাণুর বন্ধন মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসার জন্য পেত না পর্যাপ্ত শক্তির যোগান। সবগুলো ইলেকট্রনই শক্তিস্তরভেদে কমবেশি আলগা হয়ে যেত। তখন সর্বশেষ শক্তি স্তবের ইলেক্ট্রনকে অপেক্ষা করতে হত আরোক তরঙ্গের ঝাঁক আসার অপেক্ষায়। এভাবে ক্রমাগত একের পর এক আলোর ঝাঁক এসে ধাতুর পৃষ্ঠতলের প্রতিটা পরমাণুর প্রতিটা ইলেক্ট্রনকে শক্তি যোগাতে বহু সময় লেগে যেত। সুতরাং আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার কালক্ষেপন না করার বৈশিষ্ট্য আলোর কোয়ান্টাম তত্ত্ব দিয়েই শুধু ব্যাখ্যা করা যায়।

আরেকটা ব্যাখ্যা দেখা যাক। আলোকে শুধু তরঙ্গ ধরে হিসাব করলে ইলেকট্রনের গতিশক্তি বাড়ানোর জন্য আলোর তীব্রতাও বাড়ানোর কয়বার হতো। বিষয়টা একটু খোলসা করে দেখা যাক। ধরা যাক, একটা ধাতুকে বেগুনি আলো দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে। আলোটা অত জোরালো নয়। তাই আলোক তরঙ্গ গিয়ে ইলেক্ট্রনকে আঘাত করবে, তারপর সেটা বেরুবে, এর জন্য সময় লাগবে, একসময় ধীরে ধীরে ইলেকট্রন পরমাণু থেকে নির্গত হবে। যেহেতু তরঙ্গের শক্তি সব ইলেকট্রনের ভেতর ভাগ হয়ে যাচ্ছে, তাই একটা সময় এক সাথে অনেকগুলো ইলেক্ট্রন মুক্ত হবে। তরঙ্গের শক্তি ভাগ হয়ে যাচ্ছে বলে ইলেক্ট্রন অনুজ্জ্বল বেগুনি আলো থেকে খুব দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যাবার জন্য পর্যাপ্ত শক্তি পাবে না। তাই অনুজ্জ্বল বা কম তীব্রতার আলোতে ইলেক্ট্রনের বেগ কম হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে আলোক তড়িৎ ক্রিয়ায় সেটা ঘটে না।

নির্গত ইলেকট্রনের গতিবেগ বাড়াতে হলে, তরঙ্গ তত্ত্ব মতে আলোর উজ্জ্বলতা অর্থাৎ তীব্রতা বাড়াতে হবে। একই রঙের আলোর কম্পাঙ্ক সবসময় এক। সে অনুজ্জ্বলই হোক আর তীব্রই হোক। অর্থাৎ আলোর তীব্রতার সাথে কম্পাঙ্কের সম্পর্ক নেই। তাহলে তরঙ্গ তত্ত্ব অনুযায়ী ইলেকট্রনের গতিশক্তিও আলোয় কম্পাঙ্কের ওপর নির্ভর করার কথা নয়। কিন্তুআলোক তড়িৎ ক্রিয়ার পরীক্ষা বলছে ভিন্ন কথা। দেখা যায়, আলোর কম্পাঙ্ক বাড়ালেই কেবল ইলেক্রট্রনের গতিশক্তি বাড়ে। অর্থাৎ বেগুনি আলোর চেয়ে অতি বেগুনি আলোয় ইলেক্ট্রনের গতিশক্তি বেশি হয়। আলো উজ্জ্বল কি অনুজ্জ্বল তার ওপর নির্ভর করে না ইলেক্ট্রনের গতিশক্তি।

কোয়ান্টাম তত্ত্ব বলে, একটা ফোটন যেহেতু একটা ইলেক্ট্রনকেই আঘাত করে সুতরাং ফোটনের শক্তি যত বেশি হবে ইলেক্ট্রনের গতিশক্তি তত বেশি হবে। আলোর কম্পাঙ্ক বাড়লেই কেবল ফোটনের শক্তি বাড়ে। তাই ইলেকট্রনের গতিশক্তি নির্ভর করে আলোর কম্পাঙ্কের ওপর। অন্যদিকে আলোর তীব্রতা বাড়লে ফোটনের পরিমাণও বেশি হয়। আলোও তত উজ্জ্বল হয়। বেশি বেশি ফোটন বেশি বেশি ইলেকট্রনকে আঘাত করতে পারে। তাই নির্গত ইলেকট্রনের সংখ্যাও বাড়বে আলোর তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে। কিন্তু তরঙ্গে তত্ত্বে বলা হচ্ছে উল্টো কথা।

রবার্ট অ্যান্ড্রুজ মিলিকান
রবার্ট অ্যান্ড্রুজ মিলিকান

আইনস্টাইনের ব্যাখ্যাকে আরেকবার পরীক্ষা করে দেখলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী রবার্ট অ্যান্ড্রুজ মিলিকন। যাচাই বাছাই করে দেখলেন আইনস্টাইনের সমীকরণ নির্ভুল। সুতরাং কোয়ান্টাম তত্ত্ব এবার আলোড়ন তুলল বৈজ্ঞানিক সমাজে। বেড়ে গেল ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের খ্যাতিও। মানুষের জীবনযাত্রায় বিরাট পরিবর্তন ঘটাল আলেক-তড়িৎক্রিয়া। টেলিভিশনে আমরা যে ছবি দেখি তা আলোক তড়িৎক্রিয়ারই ফল। আজকের স্মার্টফোন, কম্পিউটার সবকিছুতেই আলেক-তড়িৎক্রিয়ার জয়জয়কার। আলোর কণা-তরঙ্গ ধর্মের এই যে মিথস্কিয়া, পরবর্তীকালে এটাই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভিত গড়ে দেয়। যথা সময়ে সেসব আলোচনা করা হবে।
(চলবে)

[বইটির সূচীপত্র এবং সব খন্ডের লিংক একত্রে দেখুন এখানে]

-আব্দুল গাফফার রনি
বিজ্ঞান লেখক
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]

বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা

3 মন্তব্য

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.