নিউক্লিয়ার ফিউশন সৃষ্টিতে বিশ্ব রেকর্ডঃ পরিচ্ছন্ন শক্তি উৎপাদনের আরেকটি বাধা অতিক্রম

0
538

পরিষ্কার এবং টেকসই শক্তির উৎস হিসেবে নিউক্লিয়ার শক্তিকে পূর্বের তুলনায় আমাদের হাতের নাগালের কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য বিজ্ঞানীরা নিউক্লিয়ার ফিউশন থেকে জ্বালানী উৎপাদনের ‘প্রধান উপকরণ’ প্লাজমা চাপ তৈরীতে বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করেছেন। [ফিউশন পারমাণবিক শক্তি সম্বন্ধে জানতে এই লিংকে দেখুন।]

এই নতুন রেকর্ডটি পূর্বের রেকর্ডের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেড়ে ২.০৫ এটমসফিয়ারে উন্নিত হয়েছে, যা পূর্বে ছিল ১.৭৭ এটমসফিয়ার। সর্বশেষ রেকর্ড সহ উভয় রেকর্ডই MIT কাস্টম বিল্ট Alcator C- মডুলাস চুল্লিতে অর্জন করা হয়ছিল। আমাদের বসত বাড়িতে শক্তি পৌছানোর জন্য একটি নিউক্লিয়ার ফিউশন চুল্লী স্থাপন এখনও বহু দূরের কথা, তবুও এই বর্ধিত চাপ এর বিক্রিয়ার হার বৃদ্ধির সমার্থক। এতে প্রমাণ করে যে, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক একটি চুল্লী নির্মানের অনেক কাছাকাছি পৌছে যাচ্ছি আমরা।

এটা বিজ্ঞানীদেরকে আরও ভালোভাবে সামনের অগ্রসর হওয়ার সংকেত বলে দিচ্ছে। প্রিন্সটন প্লাজমা পদার্থবিজ্ঞান গবেষণাগারে পদার্থবিদ ডেল মিড বলেন, “এটি একটি অসাধারণ কৃতিত্ত্ব যা MIT-র Alcator C-মডুলাস প্রোগ্রামের উচ্চতর সাফল্যকে উজ্জ্বল করেছে। প্লাজমা চাপের এই রেকর্ড উচ্চ চৌম্বকীয় ক্ষেত্র পদ্ধতিকে একটি আকর্ষণীয় ব্যবহারিক ফিউশন শক্তির পথ হিসেবে আইনসিদ্ধ করে।”

২.৫ এটমসফিয়ারের রেকর্ডে পৌঁছুতে গিয়ে MIT-র গবেষকগণ চুল্লীর তাপমাত্রা দুইবার ৩৫ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াসে নিয়ে গিয়েছিলেন যা সূর্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রার সমান। আর এর জন্য প্লাজমা প্রতিসেকেন্ডে ৩০০ ট্রিলিয়ন ফিউশন প্রতিক্রিয়া উৎপাদন করে যা ২ সেকেন্ড স্থায়ী ছিলো।

সামগ্রিক চাপ উৎপাদনে প্লাজমা চাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যার জন্যে MIT-র গবেষক দল এতো উৎসাহিত। নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রতিক্রিয়া তৈরির জন্য চাপের মাত্রাকে চ্যালেঞ্জের দুই-তৃতীয়াংশ ধরা হয়।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আমরা যে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ এবং কার্যত সীমাহীন শক্তির উৎস খুঁজছি নিউক্লিয়ার ফিউশন আমাদের সেটা দিতে পারে। এটা মূলত সূর্যে যা ঘটে চলেছে তারই প্রতিরূপ হবে এই পৃথিবীতে। এটি মূলত একটি ক্ষুদ্র উপাদানকে কয়েক মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করার মাধ্যমে প্লাজমার মতো অতি উত্তপ্ত গ্যাসের সৃষ্টি করে।

একটি অতি শক্তিশালী চৌম্বকীয় ক্ষেত্র ব্যাবহার করে সাধারণ বস্তু থেকে পৃথক প্লাজমা এবং এটাই আপনার শক্তির উৎস। আর একেই আপনি পৃথিবীতে মজুদ যতো নিউক্লিয়ার ও জীবাশ্ব শক্তির উৎস রয়েছে সব এক জায়গায় করে তার বিপরীত হিসেবে ব্যাবহার করতে পারেন।

আজকের দিনের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট (যা পরমাণুকে বিভক্ত করে) থেক নিউক্লিয়ার ফিউশন থেকে অসাদৃশ। নিউক্লিয়ার ফিউশন (যেখানে পরমাণু একসঙ্গে নিলীন হয়) কোন তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সৃষ্টি করেনা এবং সেখানে কোন বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা নেই।

শুনতে অসাধারণ লাগছে তাইনা? আর এ জন্যই সারা বিশ্বের সকল বিজ্ঞানীগণ কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাঁদের গবেষণাগারে ‘একটি নক্ষত্রের প্রতিলিপি’ তৈরী করার মতো কঠিন চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে।

বস্তুত আজকের দিনের মেশিনগুলো যে পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে তাঁর চেয়ে বেশি শক্তি খরচ করে থাকে অতিরিক্ত তাপমাত্রা যুক্ত থাকার কারণে। কিন্তু আমরা এসব কিছুর উন্নতি করে যাচ্ছই। যেমনটি MIT-র গবেষক দল করে দেখিয়েছেন।

দুর্ভাগ্যবশত, ২৩ বছর পর Alcator C- মডুলাস চুল্লী তার রেকর্ড ভঙ্গকারী পথ অতিক্রম করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যেখানে সরকার ITER মেশিন যা ফ্রান্সে তৈরী হতে যাচ্ছে সেখানে অর্থায়ন করছেন। আশা করা যাচ্ছে ITER মেশিনই হবে বিশ্বের প্রথম স্বনির্ভর নিউক্লিয়ার ফিউশন মেশিন।

অন্যান্য বিজ্ঞানীরা আরেকটি নকশার উপর কাজ করে যাচ্ছেন এবং একটি জাদুকরি ফর্মূলা খুঁজছেন যা নিউক্লিয়ার ফিউশনকে স্বনির্ভর করে তুলবে। MIT-র গবেষক দল এ মাসের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা ফিউশন কনফারেন্সে তাঁদের রেকর্ড-ভাঙ্গা পরীক্ষার ফলাফলগুলি উপস্থাপন করেন।

-শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.