ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নির্ণয়

2
5716

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল কোথায় সেটি বের করতে বিজ্ঞানীরা গণিতের সাহায্য নেন। অত্যন্ত চমৎকার একটি উপায়ে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নির্ণয় করা হয়। ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র সিসমোমিটারে ভূমিকম্পের দুই ধরনের তরঙ্গ, প্রাইমারী তরঙ্গ ও সেকেন্ডারী তরঙ্গ রেকর্ড হবার সাথে সাথে সময়ও রেকর্ড হয়। এ থেকে বোঝা যায় কোন তরঙ্গ কতটুকু দেরিতে এসে পৌঁছেছে। প্রাইমারী তরঙ্গ ও সেকেন্ডারী তরঙ্গের একটি নির্ধারিত বেগ আছে। সেকেন্ডারী তরঙ্গের বেগ প্রাইমারী তরঙ্গের প্রায় অর্ধেক (৬০%) । প্রারম্ভিক সময়ে এই দুই প্রকার তরঙ্গ একই সময়ে বিমুক্ত হয়। বেগের মাঝে পার্থক্য থাকার কারণে যাত্রা পথে একটু একটু করে তাদের মাঝে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। সিসমোমিটারে কত সময় পর দুটি তরঙ্গ ধরা পড়েছে সেটা হিসাব করে এই সময়ে কতটুকু দূরত্ব আগে তারা একসাথে থাকতে পারে এটা বের করা হয়।

এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে মাপক যন্ত্র থেকে কত দূরত্বে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে সে সম্বন্ধে জানা যায়। কিন্তু ঠিক কোন দিকে কোথায় হয়েছে সেটা জানা যায় না। যন্ত্র যদি ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের ফল দেয় তাহলে যন্ত্রের চারিদিকেই ১০০ কিলোমিটার আছে। ঠিক কোনদিকে হয়েছে সেটা জানতে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন স্থানে রাখা কয়েকটি সিসমোমিটারের রেকর্ড হিসাব করেন। মিটারে রেকর্ড করা দূরত্ব অনুযায়ী প্রত্যেককে কেন্দ্র করে বৃত্ত আঁকা হয়। প্রত্যেকটি বৃত্তের পরিধি যে একটা সাধারণ বিন্দুতে ছেদ করবে সেটাই হবে ভূমিকম্পের সঠিক উৎপত্তিস্থল। এখানেও ব্যবহার হচ্ছে গণিত (জ্যামিতি)। গণিতের মাঝে কোনো কারচুপি নেই। গণিতে নয়-ছয় হয়না। তাই একদম সূক্ষ্মভাবে এবং সঠিকভাবে বলে ফেলা যায় ভূমিকম্পের উৎপত্তি কোথায় হয়েছে।

bhoomi

তবে এই ক্ষেত্রে যেটা করতে হয় কমপক্ষে তিনটা বৃত্ত নিতে হবে। তার কমে হলে সঠিক অবস্থান পাওয়ার সম্ভাবনা একদমই কমে যাবে। তিনটা বৃত্ত কেন নিতে হবে সেটা মনে হয় খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে দুটি বৃত্তের সাধারণ ছেদবিন্দু একাধিক হতে পারে। একাধিক বিন্দু হতে একটা বিন্দুতে নিশ্চিত হতে হলে তিনটা বা তারও অধিক বৃত্ত কল্পনা করতে হয়।

তরঙ্গের তীব্রতা, তরঙ্গের দৈর্ঘ্য সহ আরও কয়েকটি কারণ হিসেব করে মূল কেন্দ্র বের করা হয়।

উল্লেখ্য পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটের পারস্পরিক সংঘর্ষের ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। সমস্ত পৃথিবীর উপরিপৃষ্ঠ কতগুলো বিচ্ছিন্ন প্লেট সমন্বয়ে গঠিত। প্লেটগুলো ধীরে ধীরে সঞ্চারমান। সঞ্চারমান হবার কারণে একের সাপেক্ষে অপরের সঞ্চলনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ১. অভিসারী চলন (দুটি প্লেট মুখোমুখি হয়ে পরস্পরের কাছে আসে), ২. অপসারী চলন (দুটি প্লেট পরস্পর থেকে দূরে সরে যাওয়া) ও ৩. পরিবর্তী চলন বা সাংঘর্ষিক চলন (দুটি প্লেট একে অপরের গা ঘেসে ঘেসে চলা)। তৃতীয় প্রকার চলনে ঘর্ষণের ফলে ভূ-অভ্যন্তরের সঞ্চিত বিপুল পরিমাণ শক্তি অবমুক্ত হয়ে যায় এবং শক ওয়েভ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। শক ওয়েভ আকারে ছড়িয়ে পড়া শক্তিকেই আমরা ভূমিকম্প হিসেবে দেখি। পদার্থবিদ্যার নিয়ম মেনে চলে বলে গাণিতিকভাবে এদেরকে বিশ্লেষণ করা যায়। যার কারণে সহজ গণিত ব্যবহার করেই এর উৎপত্তিস্থল সম্বন্ধে আমরা ধারণা পাই।

-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
3. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.