প্রতিটি সুকেন্দ্রিক কোষের ক্রোমোসোমের সূত্রকগুলোর প্রান্ত নির্দেশক ডিএনএর একটি অংশ থাকে, একে টেলোমিয়ার বলে। এই অংশের ডিএনএর বেজগুলোর নির্দিষ্ট পুনরাবৃত্তিমূলক ক্রম থাকে (5′-TTTAGGG-3′)। টেলোমিয়ার দুটি কাছাকাছি সূত্রকের মধ্যে একীভবন রোধ করে ক্রোমোসোমের পরিচয় রক্ষা করে। কিন্তু এই কাজটির জন্য জীবকে বড় ধরনের মূল্য দিতে হয়। কারণ ক্রোমোজোমের অন্যান্য অংশের মত এই অংশ কোষ বিভাজনের সময় প্রতিলিপি তৈরি হয় না, ফলে প্রতিবার কোষ বিভাজনের সময় এর আকার ছোট হয়ে আসে। এভাবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ বিভাজনের পর টোলেমিয়ারের আকার এত ছোট হয়ে যায় যে কোষগুলো আর সংখ্যায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় না (চিত্র-১)। ফলে শরীরের কোনো কোষ মারা গেলে তাকে প্রতিস্থাপনকারী নতুন কোষ উৎপন্ন হয় না এবং জীবের শরীর একসময় বৃদ্ধ হয়ে স্বাভাবিক কর্মকান্ড ব্যাহত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অপর দিকে প্রাককেন্দ্রিক কোষে (ব্যক্টেরিয়া ইত্যাদি) টেলোমিয়ার না থাকায় তারা অনির্দিষ্টকাল বিভাজিত হতে পারে।
তবে কিছু কিছু জীব এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এদের শরীরে টেলোমারেজ নামের এক ধরনের এনজাইম থাকে যা টেলোমিয়ারের আকার হ্রাস প্রতিহত করে যার ফলে এদের দেহকোষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিভাজিত হতে পারে এবং ক্ষয় পূরণ করতে পারে। যেমন: গলদা চিংড়ি। এই চিংড়ির দেহে বার্ধক্য আসে না ফলে এরা অনির্দিষ্টকাল বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং বড় হতে থাকে। সবচেয়ে বড় যে গলদা চিংড়িটি ধরা পড়েছে তার বয়ছ ছিলো ৭০ বছর এবং ওজন ১২ পাউন্ড (চিত্র ২)। এই চিংড়িগুলো কেবল মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বা অন্যের খাদ্য হয়ে মারা যায়।
অবশ্য টেলোমারেজ এনজাইমটি অন্যান্য প্রানী এবং উদ্ভিদেও পাওয়া যায়। প্রানীর জননকোষে টেলোমারেজ সক্রিয় থাকায় বংশবৃদ্ধির ফলেও নতুন জীবের দেহে এবং জননকোষে পুর্ণাঙ্গ টেলোমিয়ার যুক্ত কোষ তৈরি হয় এবং তা বংশ রক্ষা করে। অধিকাংশ উচ্চ শ্রেনীর উদ্ভিদের দেহে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
দেহের বার্ধক্যের কারণ আবিষ্কারের পর বার্ধক্য প্রতিরোধেরও একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই ক্ষেত্রে গলদা চিংড়ি অনুপ্রেরক হতে পারে। যদি মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর দেহকোষে টেলোমারেজ সক্রিয় করা যায় তাহলৈ বার্ধক্য থামিয়ে দেওয়া যেতে পারে। অদূর ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই চিকিৎসাবিজ্ঞান এই পর্যায়ে উন্নীত হবে।
⚫ বিজ্ঞানপত্রিকা ডেস্ক
[…] ডিএনএ প্রতিলিপির সময় টেলোমিয়ার ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যায়। ছবিঃ বিজ্ঞান পত্রিকা। […]