আমাদের মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথ গ্যালাক্সি একটি বড় আকৃতির গ্যাসীয় আবরণে আবৃত। অনেকটা পৃথিবীর ওজোন স্তরের মতো। ওজোন গ্যাসের স্তর যেমন পৃথিবীকে একটি অদৃশ্য আবরণের মাধ্যমে পুরোপুরি ঘিরে রেখেছে অনেকটা তেমনই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিকেও বিশাল আকৃতির গ্যাসীয় আবরণ চারদিক থেকে ছেয়ে রেখেছে। মিল্কিওয়েকে ঘিরে রাখা এই বলয়টি মিল্কিওয়ের কেন্দ্র থেকে কয়েক শত হাজার আলোক বর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত।
আকারে গ্যাসীয় হলেও বিস্তৃত এলাকা ব্যাপী এই বলয়টিতে থাকা পরমাণু সামগ্রিক ভর সমগ্র মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ভরের সমান। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি গতিশীল, এটি ঘূর্ণন সম্পন্ন করে। আগে ধারণা করা হতো মিল্কিওয়ে ঘূর্ণন সম্পন্ন করলেও এর সাপেক্ষে এর বহিরাবরণ স্থির থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের এক গবেষণা বলছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সাথে এর বলয়ও ঘূর্ণন সম্পন্ন করে।
মিশিগান ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিদরা প্রথমবারের মতো এই বলয়ের সামগ্রিক গতিবেগ পরিমাপ করেন এবং এ থেকে দেখতে পান যে এরা মিল্কিওয়ের সাথে সাথে ঘূর্ণন সম্পন্ন করে। গবেষকদের এই আবিষ্কার, গ্যালাক্সি কীভাবে গঠিত ও বিবর্তিত হয় সে সম্পর্কিত নানা জিজ্ঞাসার উত্তর দেবে। গ্রহ নক্ষত্র তথা গ্যালাক্সি যেহেতু এই ধরনের ধূলিকণার সমাবেশ থেকেই উৎপন্ন হয় সেহেতু এই ধরনের বলয়ের ধূলিকণা নিয়ে গবেষণা করলে গ্যালাক্সির উৎপত্তি ও বিবর্তন সম্পর্কে অনেক প্রশ্নেরই উত্তর পাওয়া সম্ভব।
গবেষণার প্রধান লেখক এডমান্ড হজ-ক্লাক একটি বিবৃতিতে বলেন “আগে সকলের ধারণা ছিল মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি যখন দ্রুতবেগে ঘূর্ণন সম্পন্ন করে তখন সেই তুলনায় এর গ্যাসীয় বহিরাবরণ স্থির থাকে। কিন্তু সেটি সত্য নয়, উষ্ণ গ্যাসের আধারও মিল্কিওয়ের সাথে ঘূর্ণন সম্পন্ন করে। তবে মিল্কিওয়ের মতো দ্রুতবেগে নয়, তুলনামূলকভাবে ধীরে।”
গ্যাসীয় বহিরাবরণের এই বৈশিষ্ট্য উদ্ঘাটন করতে বিজ্ঞানীদের অনেক সূক্ষ্মভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা-পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছে। কারণ, গ্যালাক্সি চাকতির মাঝে এমন সব নক্ষত্র আছে যা অতি উচ্চ তাপমাত্রা বিশিষ্ট। যদিও গ্যাসগুলোও বেশ উত্তপ্ত, তারপরেও অতি-উত্তপ্ত নক্ষত্রের তুলনায় এই উত্তাপ চাপা পড়ে যায়। বহিরাবরণের গ্যাসগুলোর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার সময় অতি উত্তপ্ত নক্ষত্রগুলো বাধা সৃষ্টি করে। এদের উত্তাপের নিচে চাপা পড়ে যায় আশেপাশের অন্যান্য বস্তুর বৈশিষ্ট্য।
তাঁরা তাদের কাজের বিবরণ দিয়ে Astrophysical Journal-এ একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে তারা বলেছেন গ্যাসের বহিরাবরণ প্রতি সেকেন্ডে ১৮০ কিলোমিটার বেগে ঘুরছে। যা গ্যাসের মেঘের গতি হিসেবে তুলনামূলকভাবে বেশি। উল্লেখ্য মিল্কিওয়ে চাকতির ঘূর্ণন গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ২৪০ কিলোমিটার। মূল ডিস্কের তুলনায় যদিও কম কিন্তু গ্যাস হিসেবে যথেষ্ট বেশি গতিবেগ আছে বহিরাবরণটির।
হজ-ক্লাক বলেন “এই গ্যাসীয় আবরণের ঘূর্ণন মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির উৎপত্তি ও গঠন সম্পর্কিত অনেক তথ্য প্রদান করে। এটি জানান দিচ্ছে গ্যাসীয় উত্তপ্ত অবস্থাই গ্যালাক্সির ডিস্কে গ্রহ-নক্ষত্র তৈরির উপাদান সরবরাহ করে থাকে।”
আগে ধারণা করা হতো আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূলিমেঘ যখন অতি-শক্তিশালী মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র দ্বারা আকর্ষিত হয় তখন গ্যালাক্সির গঠন শুরু হয়। শক্তিশালী মহাকর্ষের পেছনে নায়কের ভূমিকা পালন করে ডার্ক ম্যাটার। গ্যাসীয় বহিরাবরণের ঘূর্ণন আমাদেরকে একটা ইঙ্গিত দিচ্ছে কীভাবে একটি বিন্দুকে কেন্দ্র করে খুব দ্রুত গতিতেই একটি গ্যালাক্সি গঠিত হতে পারে। [IFLScience অবলম্বনে]
– সিরাজাম মুনির শ্রাবণ