নরয়ের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে তাদের সামুদ্রিক খাদগুলো। দুই ধারে উঁচু পর্বত আর মাঝখানে সমুদ্রের এক চিলতে অংশ। এরকম খাদ বা খাঁড়ি নরওয়েতে ১ হাজার ১৯০ টা আছে। সৌন্দর্যের কারণে এগুলো সহজেই সকলের মন কেড়ে নেয়। কিন্তু ভালোবাসার হলেও শীতকালে এগুলো নাগরিকদের চালাচলে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি করে। বিশেষ করে শীতে পানি বরফ হয়ে গেলে তখন যাত্রীদের ভোগান্তির সীমা থাকে না। যাত্রীরা সরাসরি এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে যেতে পারে না, অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়। ফলে এক ঘণ্টার ভ্রমণ ক্ষেত্রবিশেষে শেষ হতে মাঝে মাঝে এক দিন লেগে যায়।
এই ভোগান্তির দিন মনে হয় শেষ হতে যাচ্ছে। যদি একটি উঁচু দরের প্রকৌশল উদ্যোগ সফল হয় তাহলে আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না নরওয়েজিয়ানদের। এই দেশটি প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যেখানে জলের মাঝে নিমগ্ন অবস্থায় ভাসমান থাকবে গাড়ি চলাচলের রাস্তা। এই উদ্যোগ সম্পন্ন হলে পৃথিবীর মাঝে এটি স্বতন্ত্র একটি প্রকৌশল হিসেবে অবস্থান করে নিবে। এর আগে কোথাও এমন ধরনের নির্মাণকাজ করা হয়নি। এটি সম্পন্ন হলে ২১ ঘণ্টার পথ পাড়ি দেবার সময় নেমে আসবে ১১ ঘণ্টাতে।
Sognefjord নামের সমুদ্রখাঁড়িতে মানুষের চলাচল অনেকটা কষ্টকর ছিল। ঐ অঞ্চলের মানুষেরা চাইলেও স্থলপথ ব্যবহার করতে পারতো না। এক পাড় থেকে আরেক পাড়ে যেতে হলে বাধ্য হয়েই ফেরি করতে হতো। স্থলপথ ব্যবহার করে যেতে চাইলে অনেক বেশি পরিমাণ পথ ঘুরে যেতে হতো। ভাসমান টানেল পথ তাদের মূল্যবান সময়টিকে রক্ষা করতে পারে।
Norwegian Public Roads Administration এই ধরনের ভাসমান রাস্তার পরিকল্পনা করে ২০১১ সালে। নতুন ও ব্যতিক্রম হওয়াতে এটি নিয়ে তখন থেকে অনেক আলোচনা-পরিকল্পনা হয়। কীভাবে করলে ভালো হবে, কোন ধরনের ডিজাইন এর জন্য উপযুক্ত হবে ইত্যাদি। এর জন্য ভাসমান সেতু বা ঝুলন্ত সেতুর প্রস্তাবও করা হয়। কারণ সেতুর চেয়ে টানেলই বেশি ব্যয়বহুল। তবে এখনো এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
টানেল নির্মাণের সুবিধা হচ্ছে এটি সংবেদনশীল প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানানসই হবে। জাহাজ বা অন্যান্য নৌযান পার হতেও এটি কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। পাশাপাশি এটি Sognefjord অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেরও কোনো বিঘ্ন ঘটাবে না।
এটি যদি সম্পন্ন হয় তাহলে এতে দুটি পাইপের মতো অংশের ভেতর দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে। এই পাইপ বা টিউব দুটিকে ভাসিয়ে রাখবে উপরে ভাসমান বাতাসে ভর্তি অনেকগুলো বড় বড় ক্যাপস্যুল। একটু পর পর তাদের মাঝে থাকবে সংযোগ বীম যা ভারসাম্য রক্ষা করবে।
সামনের বছর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে ঐ এলাকায় টানেল হবে নাকি অন্যকিছু হবে। তবে খরচের কথা বিবেচনা না করে নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখা উচিৎ। এতে করে অন্যান্য এলাকায় এরকম টানেল নির্মাণ করার জন্য ভালো মন্দের পরীক্ষা হয়ে যাবে।
-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ