যদি আপনার রাতের ঘুম পরিপূর্ণ না হয় তবে আপনি প্ল্যাসিবো ঘুমের (placebo sleep) সাহায্য ঘুম পূর্ণ করতে পারেন। প্ল্যাসিবো ঘুম এমন একটি পদ্ধতি যার সাহয্যে আপনি না ঘুমালেও অন্য কেউ অথবা আপনি নিজেই আপনার ঘুম সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরী করবেন। অর্থাৎ, আপনার মনে হবে আপনি ঘুমিয়েছেন, কিন্তু আসলে ঘুমান নি।
প্রাত্যহিক জীবনে ঘুম একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। সঠিক মাত্রার ঘুম ভালো অনুভূতি এবং শরীরকে কর্মক্ষম করে তুলতে সাহায্য করে। কিন্তু অনেকের কাছেই দৈনন্দিন ব্যবস্ততার মাঝে পরিমাণ মতো ঘুমিয়ে নেয়া সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। তাই এই ঘুমের ঘাটতি পূরণে আপনাকে ভাবতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে আপনার রাতের ঘুম ভালো হয়েছে ও পরিমাণ মতো বিশ্রাম নিয়েছেন। আর অবিশ্বাস্যভাবে এটা অনেক ভালো ফলাফল দেয়।
নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল ব্যক্তিকে বলা হয়েছে তাদের রেম ঘুম (REM sleep, Rapid eye movement sleep) [যা ঘুমের পঞ্চম বা চূড়ান্ত পর্যায়] ভালো হয়েছে তারা জ্ঞান সম্পর্কীত পরীক্ষায় ভালো করে যদি তাদের ঘুম ভালো নাও হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কোন ঔষধ কিংবা থেরাপি ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না, শুধু তাদের মাঝে ঘুম সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করা হয়। গবেষক এরিক হরউটজ তাঁর ব্লগে এসম্পর্কে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন।
প্রাথমিক এক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ঘুম সম্পর্কে ভালো ধারণা তৈরী করার জন্য ঘুমের গুণাগুণ [REM sleep] এবং জ্ঞান সম্পর্কীত পরীক্ষার ফলাফলের মধ্যে সম্পর্কের বিষটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়া হয়। এবং বলা হয় রেম ঘুম সাধারণত এক রাতের সমগ্র ঘুমের ২০ থেকে ২৫ ভাগ হয়ে থাকে। এছাড়াও অংশগ্রহণকারীদের বলা হয় একটি যন্ত্রের সাহায্যে তাদের নাড়ি স্পন্দন, হৃদ কম্পন এবং মস্তিষ্কের কম্পাঙ্ক মাপা হবে এবং পরে এই তথ্য সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করে তাদের পূর্বের রাতের রেম ঘুমের পরিমাণ বের করা হবে। যদিও যন্ত্রটি ছিল মেকি এবং এ বিষয়টি অংশগ্রহণকারীদের নিকট গোপন রাখা হয়। (এক্ষেত্রে অল্প সংখ্যক অংশগ্রহণকারীর মনে এই [মেকি] যন্ত্র সম্পর্কে সন্দেহ ছিল)। কিছুসংখ্যক অংশগ্রহণকারীদের বলা হয় তারা রেম ঘুম-এ শতকরা ১৬.২ পেয়েছে (গড় ঘুমের নিম্ন পর্যায়) এবং কিছু সংখ্যক অংশগ্রহণকারীদের বলা হয় তারা রেম ঘুম-এ শতকরা ২৮.৭ পেয়েছে (গড় ঘুমের সর্বোচ্চ পর্যায়)। এছাড়াও কিছু সংখ্যক অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞেস করা হয় গত রাতে তাদের ঘুম কেমন হয়েছিল।
যাদের বলা হয়েছিল রাতে তাদের ভালো ঘুম হয়েছে তারা Paced Auditory Serial Addition Test (PASAT) নামে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে। এই পরীক্ষায় অসংখ্য সংখ্যা একত্রিত করার কাজ যুক্ত ছিল। সেই সাথে মৌখিক সাবলীলতা পরীক্ষাও ছিল যা Controlled Oral Word Association Task (COWAT) নামে পরিচিত। অপরদিকে যাদের বলা হয়েছিল তাদের রাতের ঘুম ভালো হয়নি তারা এসব পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করে।
অপরদিকে এই একই পরিসংখ্যান তাদের সাথে মেলেনি যারা নিজেদের ঘুমের সম্পর্কে বলেছিল। এক্ষেত্রে যারা বলেছিল তাদের ঘুম ভালো হয়েছে তারা সাধারণতই PASAT পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করেছে।এরা মনে করছিলো রাতে অল্প সময়ই তারা তন্দ্রায় মানে ঘুমের প্রথম পর্যায়ে ছিল।
এরিক হরউটজ উপসংহারে বলেন, অনুসন্ধানগুলি এই নীতিকে সমর্থন করে যে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহনের মানসিকতা উভয়ই জ্ঞান সম্পর্কীয় পরীক্ষায় প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। এটি কোন ব্যক্তির স্বাস্থ্য এবং চেতনা নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে ইঙ্গিত করে। যদিও আপনি কতটা সঠিকভাবে আপনার প্রকৃত ঘুম নির্ণয় করতে পারেন তা স্পষ্ট নয়। তবুও এ লেখা থেকে ধারণা করা যায়, “যদি আপনি নিজেকে বোঝাতে সক্ষম হন যে আপনার আপনি ভালো ঘুমুচ্ছেন, অবসর নিচ্ছেন কিংবা পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছেন সেটা আপনার মানুষিক এবং শারীরিক দক্ষতার উন্নতি করতে পারবেন। যদি আপনার রাতের ঘুম কিংবা বিশ্রাম ঠিকভাবে নাও হয়ে থাকে।”
অনুরূপ এক গবেষণা যা ‘সাইকোলজিক্যাল সাইন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয় সেখানে বলা হয়েছে, গবেষকরা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য এই দুইয়ের মাঝে মনষিকতা গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছে যা এই দুয়ের মাঝে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করে। হোটেল হাউজকিপারদের বলা হয়েছিল তাদের কাজের মাঝে ভালো শারীরিক ব্যায়াম রয়েছে। এর ফলে এক দল তাদের কাজে ভালো ফলাফল করতে লাগলো এবং আরেকদল যারা মনে করতো তাদের কাজের মাঝে কোন ব্যায়াম বা শারীরিক উন্নতি নেই তাদের কাজের ফলাফল নাটকীয় ভাবেই তেমন কোন উন্নতি করেনি। হার্বাট বিশ্ববিদালয়ের মনস্তাত্ত্বিক বলেন, “শারীরবৃত্তীয় স্বাস্থ্য পরিবর্তন প্রত্যক্ষ্য বা পরোক্ষ্য কিনা এটা পরিষ্কার না হলেও মনোস্থিরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তীত হয়।” এই বিশেষ গবেষণা আপনার স্বাস্থ্যগত উন্নতিতে মনোস্থিরের দিকে বিশেষভাবে দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
সার্বিকভাবে এই গবেষণা প্ল্যাসিবো ইফেক্টের ক্ষমতা উন্মোচিত করেছে। আপনার মনসিকতা জ্ঞান সম্পর্কীত অবস্থা প্রভাবিত করে। অর্থাৎ যদি কেউ আপনাকে একটি বিশেষ চিকিৎসা সম্পর্কে বলে যে এটা কাজ করবে এবং আপনি মানষিক ভাবে এটা বিশ্বাস করে নেন তবে এটা আসলেই কার্যকরী হয়।
-শফিকুল ইসলাম
[ফেসবুক প্রোফাইল]