নেপচুনের কক্ষপথ পেরিয়ে কুইপার বেল্ট এলাকায় নতুন একটি বামন গ্রহের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া গেছে। নতুন আবিষ্কৃত এই বামন গ্রহটির নাম রাখা হয়েছে 2015 RR245। এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদদের একটি দল এই বামন গ্রহটির সন্ধান পায়। সন্ধান পাওয়া গেলেও তার অস্তিত্ব সম্পর্কে তখনই নিশ্চিত হয়ে যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই-এর মাউনা কিয়া পর্বতের শীর্ষে অবস্থিত Canada–France–Hawaii টেলিস্কোপ থেকে পর্যবেক্ষণকৃত তথ্য বিশ্লেষণ করে পরবর্তীতে এই অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সৌরজগতের বাইরের দিকে বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তু অনুসন্ধান করতে গিয়ে এর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। এই অনুসন্ধান প্রক্রিয়া এখনো চলমান আছে।
উল্লেখ্য, বামন গ্রহ বা Dwarf planet বলতে সৌরজগতের বিশেষ এক ধরনের বস্তুকে বোঝানো হয় যাদের আকার মোটামুটি একটি গ্রহের সমান কিন্তু তাদের কক্ষপথ স্বাধীন নয়। অর্থাৎ অন্যান্য গ্রহ যেমন স্বাধীনভাবে সূর্যের চারপাশে একটিমাত্র কক্ষপথে ঘুরে সেখানে বামন গ্রহরা তাদের চলার পথে কক্ষপথ সূর্যের পাশাপাশি অন্যান্য বস্তুর আকর্ষণ দ্বারাও প্রভাবিত। স্বাধীন কক্ষপথ না থাকার কারণেই মূলত প্লুটোকে গ্রহের মর্যাদা থেকে সরিয়ে বামন গ্রহের কাতারে নিয়ে আসা হয়েছিল।
আর কুইপার বেল্ট হচ্ছে নেপচুনের কক্ষপথ ছাড়িয়ে অনেকগুলো গ্রহাণুর সমন্বয়ে তৈরি একটি স্তর বা লেয়ার। এই স্তরের গ্রহাণুগুলো বরফ-সদৃশ এবং এই স্তর থেকেই বেশিরভাগ ধূমকেতুর জন্ম হয়।
গবেষকরা এখনো নিশ্চিত করে বলতে বলতে পারছেন না এর সত্যিকার আকার কেমন। তাদের ধারণা এর বেধ প্রায় ৪৩৫ মাইল (৭০০ কিলোমিটার)। যদি তাদের ধারণা সত্য হয়ে থাকে তাহলে এটি হবে কুইপার বেল্টের ১৮ তম বৃহত্তম বস্তু। এত বড় আকৃতির গ্রহাণু কমই আছে। এর আকৃতি সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে হলে আরো অনেক পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং এর পৃষ্ঠতল নিয়ে গবেষণা করতে হবে। এই গবেষণার সাথে জড়িত ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক এক বিবৃতিতে বলেন- “এটি ছোট ও উজ্জ্বল হতে পারে কিংবা বড় ও নিষ্প্রভও হতে পারে।”
সূর্যকে ঘিরে নতুন আবিষ্কৃত এই বামন গ্রহটির কক্ষপথ অসম্ভব পরিমাণ বড়। প্লুটো তার কক্ষপথকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ৭০০ বছর। নতুন বামন গ্রহটির কক্ষপথ আবর্তন করতে প্লুটোর চেয়েও বেশি সময় লাগে! এটি যখন কক্ষপথের অনসুর বিন্দুতে থাকে অর্থাৎ সূর্যের সবচেয়ে কাছে অবস্থান করে তখন এটি সূর্য থেকে ৩৪ AU দূরে থাকে। পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব যত তার চেয়ে ৩৪ গুণ বেশি দূরে অবস্থান করে এটি। দূরতম বিন্দুতে এটি সূর্য থেকে ১২০ AU দূরে সরে যায়, যা অসম্ভব পরিমাণ বেশি। এ থেকে অনুমান করা যায় এর কক্ষপথ কতটা বিস্তৃত। বর্তমানে RR245 বামন গ্রহটি সূর্যের কাছাকাছি অবস্থানে আছে। একদম নিকটে অবশ্য নেই। সর্বোচ্চ পরিমাণ নিকটে যাবে ২০৯৬ সালে।
Outer Solar System Origins Survey (OSSOS) কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সাল থেকে সৌরজগতের বাইরের দিকের অংশে বিভিন্ন বস্তু অনুসন্ধান করে যাচ্ছে। এই কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আবিষ্কৃত প্রথম বামন গ্রহটি RR245। তাদের অনুসন্ধান এখনো চলছে। আশা করা যায় তারা সৌরজগতের আরো অনেক অনাবিষ্কৃত জিনিসের সন্ধান দিতে পারবে আমাদের।
– সিরাজাম মুনির শ্রাবণ