মঙ্গলের বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন চিহ্নিত করলেন বিজ্ঞানীরা প্রায় চল্লিশ বছর পর। তবে অবাক করা ব্যাপারটি হল অক্সিজেন চিহ্নিত করতে মঙ্গলে যেতে হয়নি। মঙ্গলের অক্সিজেন চিহ্নিত করা হয়েছে পৃথিবীতে থাকা স্ট্র্যাটোস্ফেরিক অবজারভেটরি ফর ইনফ্রারেড এস্ট্রোনমি সংক্ষেপে SOFIA থেকে যেটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৩.৭ কিলোমিটার উপরে অবস্থান করে। যারা হুঁশ নিয়ে লাইনটি পড়ছেন তাদের কাছে কোন খবরটি অবাক করার তা এখন বিবেচনাধীন। ১৩.৭ কিলোমিটার উপর দিয়ে নিশ্চয়ই আমাদের কোনো বুদ্ধিমান বিজ্ঞানী স্যাটেলাইট চালাবেন না!
আবার এত উঁচুতে কোনো পর্বত বা স্থাপনাও নেই। আদতে SOFIA স্থাপন করা হয়েছে একটি Boeing 747SP জেট বিমানে। নাসা এবং জার্মান এরোস্পেস সেন্টারের যৌথ প্রয়াসে এই প্রজেক্টটি চলছে ৬ বছর ধরে। এই একখানা প্রজেক্ট আবার ইউনিভার্সিটি স্পেস রিসার্চ এসোসিয়েশনের অন্তর্ভুক্ত। এই এসোসিয়েশনটিতে যুক্ত আছে ১০৫টি ইনস্টিটিউশান যার অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের এবং কিছু ইউরোপীয়ান দেশের।
টেলিস্কোপটির কাজ হচ্ছে মঙ্গলের বায়ু থেকে আসা আলোর বর্ণালীবীক্ষণ করে অক্সিজেন খোঁজা। চিহ্নিত আণুবীক্ষণিক অক্সিজেন মঙ্গলের উপরিস্তর বায়ুমণ্ডল মেসোস্ফিয়ারে। সর্বশেষ ৭০ এর দশকে মেরিনার এবং ভাইকিং এর মঙ্গলাভিযানের সময় অক্সিজেনের খোঁজ মিলেছিল। পৃথিবীর আকাশের নীল রঙ দূরবর্তী অবলোহিত লাল তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো চিহ্নিত করার পথে একটি অন্তরায়। একারণে প্রয়োজন হয় উচ্চ সংবেদী যন্ত্র এবং একই সাথে আর্দ্রতামুক্ত পরিবেশ। সোফিয়া প্রজেক্টের বিজ্ঞানী পামেলা মারকাম বলেন, “দূরবর্তী অবলোহিত রশ্মি চিহ্নিত করতে পৃথিবীর আর্দ্র পরিবেশের উপরে থেকে পর্যবেক্ষণ করা একটি উপায়। আর্দ্রতা অবলোহিত রশ্মিকে শোষণ করে বলে শুষ্ক পরিবেশ ছাড়া কাঙ্ক্ষিত আলোকরশ্মি চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না।”
বোয়িং জেটপ্লেনটি ৩৭০০০ থেকে ৪৫০০০ মিটার উচ্চতায় ওড়ে। উক্ত উচ্চতায় পৃথিবীর জলীয়বাষ্পের অস্তিত্ব নাকচ করা যায়।
সোফিয়া কত বড়? একটা টেলিস্কোপ কত বড় বা কত শক্তিশালী তা বুঝতে কেবল একটা প্যারামিটার জানলেই হয়। সেটা হল তার ব্যাস। ব্যাস বেশি হলে লেন্স বা ডিসের বিস্তার বেশি হয়, ফলে বেশি আলো সংগ্রহ করতে পারে। আর যত বেশি আলো বা তরঙ্গ গ্রহণ করা যায় বস্তুর ততই স্পষ্ট ছবি তৈরী সম্ভব হয়। এই টেলিস্কোপটির ব্যাস ঠিক ১০০ ইঞ্চি।
এই পর্যবেক্ষণটি বলছে, বিজ্ঞানীদের পূর্বধারণাকৃত অক্সিজেনের পরিমাণ সাপেক্ষে বর্তমান তথ্যানুযায়ী তা অর্ধেক। বিজ্ঞানীরা এই গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার আশা করছেন লালগ্রহের বায়ুমণ্ডলকে আরো সূক্ষ্মভাবে জানার উদ্দেশ্যে। উক্ত বোয়িং বিমানটির বেইস স্টেশন ক্যালিফোর্নিয়ার পামডেলে অবস্থিত নাসার আর্মস্ট্রং ফ্লাইট রিসার্চ সেন্টারে।
পৃথিবীতে থেকে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন থেকে আলাদা করার ডিটেক্টরটির কাজ করেছে জার্মান রিসিবার ফর এস্ট্রোনমি এট টেরাহার্টজ ফ্রিকুয়েন্সিস। এই প্রযুক্তির উপর করা গবেষণাপত্রটি ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল Astronomy and Astrophysics জার্নালে।
-শাহরিয়ার কবির পাভেল