খেয়াল করে দেখেছেন কিনা, কোনো দিকে তাকালে মাঝে মাঝে প্যাঁচানো স্বচ্ছ জিনিস বা জিনিসের ছিটাফোঁটা দেখা যায়। ঐ জিনিসটিতে দৃষ্টি নিবন্ধ করতে চাইলে তা অন্যত্র চলে যায়। ক্ষান্ত দিয়ে আবার মূল বস্তুতে দৃষ্টি ফেরালেই আবার স্বচ্ছ জিনিসটি ফিরে আসে। কখনোই এর উপর ফোকাস করা যায় না। দৃষ্টিসীমায় আশ্চর্য আচরণ করে। স্বচ্ছতার মাত্রা বেশি হবার কারণে যে বস্তুর দিকে তাকিয়েছেন তাতে কোনো আড়াল পড়ে না কিন্তু প্যাঁচানো বস্তুর উপস্থিতি ঠিকই বুঝা যায়।
আপনার দৃষ্টির মাঝে এমনটা হয়? ভয় পাবার কিছু নেই। মস্তিষ্ক মাতাল আচরণ করছে না। আকার আকৃতিতে পোকা বা কেঁচোর মতো হলেও এগুলো ঐরকম কিছু নয়। আপনার চোখে কোনো ক্ষুদ্র পোকা বাস করছে না। চোখের এই ঘটনাটি স্বাভাবিক। একে বলা হয় muscae volitantes, ল্যাটিন এই শব্দ-যুগলকে বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘উড়ন্ত মাছি’ (flying flies)।
এই জিনিসগুলোর তৈরি হয় মূলত চোখের অভ্যন্তরের ক্ষুদ্র টিস্যু বা প্রোটিনের আবরণ কিংবা রক্তকণিকার কারণে। কোনো বস্তু থেকে আলোক রশ্মি যখন চোখের রেটিনায় এসে পড়ে তখন এই পথের মাঝে যদি এই উপাদানের কোনো একটা আড়াল হিসেবে পড়ে তখন তার ফলাফল হিসেবে দৃষ্টিক্ষেত্রে স্বচ্ছ কোনোকিছুর উপস্থিতি দেখা যায়।
প্রশ্ন হতে পারে প্রতিবন্ধকতা থাকলে তার প্রভাবে তো লক্ষ্যবস্তু কিছুটা আড়াল হবার কথা, কিন্তু এখানে স্বচ্ছ হচ্ছে কেন? এই ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক বস্তুগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বচ্ছ হয়ে থাকে। তার উপর আরেকটা ব্যাপারও কাজ করে। খেয়াল করলে দেখা যাবে পাখি যখন ভূমি থেকে খুব উপর দিয়ে উড়ে তার ছায়া পড়ে না। এখানে আলোকবিজ্ঞানের কিছু নিয়ম কাজ করছে। চোখের বেলায় টিস্যু, প্রোটিনের দলা বা রক্তকণিকার আড়াল করা ছায়া না পড়ার কারণটা অনেকটা উপরে থাকা চিলের ছায়া না পড়ার মতোই।
এই বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত TED-Ed এর চমৎকার একটি শিক্ষামূলক ভিডিও আছে। আগ্রহোদ্দীপক এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্য খুব বেশি নয়, সহজেই দেখা নেয়া যাবে।
যদি এই জিনিসগুলো ভালোভাবে দেখতে চান তাহলে হালকা ধাঁচের এক রঙের কোনো পর্দার উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করেন। যেমন একদম সাদা করে রাখা কম্পিউটারের স্ক্রিন কিংবা একদম পরিষ্কার নীল আকাশের দিকে তাকাতে পারেন। এতে করে জিনিসগুলোকে হয়তো ফোকাস করা যাবে না কিন্তু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা যাবে ঠিকই।
মাঝে মাঝে কারো কারো ক্ষেত্রে এরকম বস্তুগুলো কিছুটা অস্বচ্ছও হতে পারে। ঐ পরিস্থিতিতে মনে হবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বস্তু সাপের চলার মতো এদিক ওদিকে সামান্য দ্রুত বেগে চলাচল করছে। এমন হলেও আসলে ভয় পাবার কিছু নেই। চোখের রক্তনালী খুব সরু হয়ে থাকে। শ্বেত রক্তকণিকাগুলো অন্য রক্তকণিকা থেকে বড় হয়ে থাকে। তুলনামূলকভাবে বড় আকৃতির কণিকা যখন সরু রক্তনালী দিয়ে যায় তখন দিয়ে যায় তখন নালীর পথ এক অর্থে সবটাই দখল হয়ে যায়। পেছনে লোহিত রক্তকণিকা জমতে শুরু করে। সম্মিলিত অবস্থায় শ্বেত কণিকার পেছনে পেছনে চলতে থাকে। লোহিত কণিকা অস্বচ্ছ পদার্থ। তারা যখন সম্মিলিত অবস্থায় থাকে তখন আলোকরশ্মি তাদের অতিক্রম করতে পারে না। তাই চোখের দেখায় মনে হয় কালো রকমের কী যেন চলাফেরা করছে।
তবে যদি এমন হয় যে স্বচ্ছ বা অস্বচ্ছ বস্তুর আকার খুবই বড় এবং সবসময়ই দৃষ্টিক্ষেত্রে দেখা যায় তাহলে এটি চোখের সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ঐ পরিস্থিতিতে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
⚫ সিরাজাম মুনির শ্রাবণ
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
এই ব্যাখ্যাটা আমি অনেক দিন ধরে খুজসিলাম । খুব ভালো লাগলো । এতদিন মনে করতাম জিনিস টা বোধহয় শুধু আমারই হয় ………
কিছু দিন ধরে এটা মাথায় ঘুরছিল। আজ উত্তর টা পেয়ে গেলাম।
অনেক দিন পরে আমি কিছু অজানা তথ্য পেলাম যা ছিল অজানা
সেই ছোট্ট বেলা থেকে আমি এটা লক্ষ করছিলাম আজ ব্যাখ্যা পেলাম। ধন্যবাদ।।
আমিও এই সমস্যায় পড়েছি।