শুধু মাত্র চিন্তার মাধ্যমেই কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি উদ্ভাবিত !

0
608

আপনার মুখ নড়ুক আর নাই নড়ুক এই মুহুর্তে আপনি মনে মনে ঠিকই কথা বলছেন।

এই লেখাটি মনে মনে পড়তে থাকলে আপনার স্বরযন্ত্র, চোয়াল আর মুখের পেশীগুলা উঠানামা করবে যেগুলো প্রকৃতপক্ষে এক ধরণের পরোক্ষ নড়াচড়া । এই পরোক্ষ নড়াচড়া গুলি হল মৌনশব্দ যার সংকেত মস্তিষ্ক গ্রহণ করতে পারে । পরোক্ষ নড়াচড়ার মাধ্যমে সংকেত রূপে মস্তিষ্ক কর্তৃক গৃহীত  এই মৌন কথাবলা বা উক্তিকে বলা হয় “সাবলোকালাইজেশন”। দ্রুত পঠনকারী যারা সারাদিন এই অভ্যাসে অভ্যস্ত, তারা আপনমনে পড়তে থাকে এবং  শব্দ কল্পনা করতে সক্ষম।

MIT এর গবেষকেরা এই সাবলোকালাইজেশনকে ব্যবহার করে আপনার ভেতরের ঘটনাবলিকে পাঠোদ্ধার করার উদ্দেশ্যে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। সেই উদ্দেশ্যেই তারা তৈরি করেছেন  ‘AlterEgo’  নামক উদ্দীপ্ত বুদ্ধিমত্তার পরিধানযোগ্য হেডসেট। যেটি এইসব সাবলোকালাইজেশনকে ব্যবহার করে সেটিকে  ডিজিটাল আদেশে পরিনত করতে সক্ষম।

MIT এর মিডিয়া ল্যাব এর বিবৃতি অনুযায়ী, এই ডিভাইসটি ব্যবহারকারীর নীরব আদেশকে হেডসেটে প্রেরণ করতে পারে, এমনকি কোনো শব্দ চিন্তা করলেও। একটি স্নায়ু নেটওয়ার্ক পেশি নড়াচড়াকে উক্তিতে পরিণত করার মাধ্যমে সম্পূর্ণ হাত ও কণ্ঠস্বর দ্বারা ব্যবহারকারীর আদেশকে কাজে পরিণত করে।

MIT মিডিয়া ল্যাবের গ্রাজুয়েট ছাত্র ও এই প্রকল্পের গবেষক অর্ণব কাপুর বলেন “এই প্রকল্পের কাজের জন্য একটি  IA ডিভাইস তৈরি করা হয় যা  প্রকৃতপক্ষে একটি উদ্দীপ্ত বুদ্ধিমত্তার ডিভাইস । আমাদের চিন্তা ছিল আমরা কি মানুষের ভেতরের মৌন চিন্তা গণনাকারী কোন প্ল্যাটফর্ম করতে পারি, যা মানুষ এবং মেশিনকে কোন উপায়ে মিলাতে পারবে এবং যা আমাদের নিজেদের চিন্তার একটি বিস্তৃত রূপ হিসেবে কাজ করতে পারবে ?”

AlterEgo কীভাবে কাজ করে?

আপনি AlterEgo কে কয়টা বাজে জিজ্ঞেস করতে চাইলে প্রথমে যে শব্দটি চিন্তা করবেন তা হল “সময়”। এ সময় আপনার মুখ এবং চোয়ালের পেশীর ক্ষুদ্র-নড়াচড়াকে (micro-movement) মস্তিষ্ক শব্দে পরিণত করে। AlterEgo হেডসেটের নিচেরদিকের ইলেক্ট্রোড আপনার মুখের বিপরীতে চাপ দেয় এবং নড়াচড়াকে রেকর্ড করে, তারপর ব্লুটুথ এর মাধ্যমে তাকে বাইরের কম্পিউটারে প্রেরণ করে। একটি স্নায়বিক নেটওয়ার্ক এই সংকেতগুলোকে একই উপায়ে ভাষা থেকে টেক্সট প্রোগ্রামে প্রক্রিয়াজাত করে এবং সাড়া দিয়ে বলে এখন সময় “১০:৪৫”।

অন্য একটি ব্যাপার হল AlterEgo তে কোন কানের বাড (earbud) নেই। এর পরিবর্তে একজোড়া “bone conductor headphones” বা হাড় পরিবাহী হেডফোন থাকে যার বিপরীতে আপনার মস্তিষ্ক কানের ভিতর দিয়ে মুখের অস্থির মধ্যদিয়ে ভাইব্রেশন বা কম্পন প্রেরণ করে। এই প্রভাব আপনার এবং কম্পিউটারের নীরব কথোপকথন যেখানে ফোন বা ল্যাপটপ ত্যাগের প্রয়োজন নেই।

MIT এর মতে এই নতুন প্রযুক্তিটির পূর্ব পরীক্ষাগুলো আশাপ্রদ ফলাফল দেখিয়েছে। একটি ছোট পরীক্ষায় দেখা যায়, AlterEgo পরিধানকারী ১০জন স্বেচ্ছাসেবী দৈবভাবে একটি লিস্টের সংখ্যাসূচক ৭৫০টি অংক পড়ে ফেলতে সক্ষম । গবেষকগণের মতে, AlterEgo ৯২শতাংশ যথার্থতার সাথে অংশগ্রহণকারীদের অংক পড়া ব্যাখ্যা করে।

MIT গবেষক এবং সিনিয়র লেখক পাত্তেই মায়েস বলেন, “আমরা আসলে আমাদের সেলফোন ইলেকট্রিক ডিভাইস ছাড়া বাঁচতে পারিনা। কিন্তু বর্তমানে এসব ডিভাইসের ব্যবহার খুবই সংহতিনাশক। আমি এবং আমার শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় ধরে কিছু নতুন বিষয় ও নতুন অভিজ্ঞতার উপর পরীক্ষা করেছি যার মাধ্যমে এই ডিভাইসগুলো মানুষকে অসাধারণ কিছু জ্ঞান ও সেবা দিয়ে লাভবান করে। “এই ডিভাইস বর্ণনাকারী গবেষণাপত্রটি  Association for Compiting Machinary’s (ACM) Intelligent User Interface সম্মেলনের মার্চে প্রদর্শিত হয় এবং ACM এর গবেষণা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। [Livescience অবলম্বনে]

-সুরাইয়া তাসনীম নির্ঝরা

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.