প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা টিকটিকির লেজের পুনরায় সৃষ্টির সাথে জড়িত কোষগুলো সনাক্ত করেছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা মানবদেহের স্নায়ুরজ্জু ক্ষতিগ্রস্থ হলে তা পুনঃরুৎপাদনের পদ্ধতি উদ্ভাবনে অগ্রগতির আশা করছেন।
অটোটমি (Autotomy) নামক একটি প্রক্রিয়ায় কিছু টিকটিকিকে লেজ খসিয়ে ফেলার সক্ষমতা অর্জন করতে দেখা যায়। শিকারীর কাছ থেকে হুমকীর সম্মুখীন হলেই এ ঘটনাটি ঘটানো হয়। খসে পড়া লেজটি কিছুক্ষণ নড়তে থাকে, ফলে শিকারীর দৃষ্টি বিচ্যুত হয় এবং এই ফাঁকে টিকটিকি নিরাপদ স্থানে সরে যায়।
এটি সুনির্দিষ্টভাবে টিকটিকি বা গিরগিটির একটি বৈশিষ্ট্য, তবে কিছু প্রজাতির স্যালম্যান্ডারও এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। লেজ খসানোর পর হতে গিরগিটির লেজটি পুরনায় বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয় এবং নতুন করে গজিয়ে যায়। গেকো নামক গিরগিটির ক্ষেত্রে এটি পুনরায় জন্মাতে ৩০ দিন সময় লাগে। অন্যান্য টিকটিকির ক্ষেত্রে সময় লাগে আরো কম।
বিজ্ঞানীরা, বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে জড়িতরা এই ক্ষেত্রে যে বিষয়ে আগ্রহবোধ করেছেন তা হলো স্তন্যপায়ীর মতো টিকটিকির স্নায়ুরজ্জু পিঠেই শেষ হয়ে যায় না বরং লেজ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। তার মানে হলো যখন টিকটিকি লেজ পুনর্জন্মানোর প্রক্রিয়া শুরু করে তখন সেই সাথে স্নায়ুরজ্জুও বৃদ্ধি পেতে হয়। ধুর্ত এই সরীসৃপগুলো কীভাবে স্নায়ুরজ্জু পুনরোৎপাদন করে, বিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে সেই প্রক্রিয়াটি জানতে আগ্রহী।
অধ্যাপক ম্যাথু ভিকারিয়াস এই প্রসঙ্গটি এভাবে ব্যাখ্যা করেন, ” আমরা জানি গেকোর স্নায়ুরজ্জুর পুনোরুৎপাদন ঘটে, তবে আমরা জানতাম না কোন কোষগুলো এর পেছনে অবদান রাখে। মানুষ স্নায়বিক আঘাত নিয়ন্ত্রনে খুবই আনাড়ি তাই আমি আশা করছি গেকোর কাছ থেকে এই বিষয়ে কিছু শিখতে পারব যার মাধ্যমে মানুষের স্নায়ুরজ্জুর আঘাত নিজে নিজে নিরাময় করা যাবে।”
বিজ্ঞানীরা শিকারীর মতো আচরণ অণুকরণ করে গবেষণাগারে একটি লেপার্ড গেকোর লেজটি খসিয়ে দেন এবং কোষীয় পর্যায় কী ঘটনা ঘটে তা পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁরা দেখতে পান গেকোর স্নায়ুরজ্জুতে রেডিয়াল গ্লিয়া নামক এক বিশেষ ধরনের স্টেম কোষ থাকে। এই কোষগুলো সব মেরুদন্ডী প্রানীর মধ্যেই পাওয়া যায় এবং প্রানীর প্রাথমিক স্নায়ুতন্ত্র গঠন করে, কিন্তু এরপরই নিশ্চুপ হয়ে যায়।
তবে যখন টিকটিকির লেজ খসে যায় তখন অন্য কোনো কিছুর প্রণোদনায় এরা আর নিশ্চুপ থাকে না বরং সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরা নতুন কিছু প্রোটিন তৈরি করে এবং দ্রুত সংখ্যায় বৃদ্ধি পায়। ফল এক পর্যায়ে গিয়ে স্নায়ু রজ্জু মেরামত হয়ে যায়।
শুধু যে লেজের স্নায়ুতন্ত্রই এরা মেরামত করতে পারে তা নয়, বরং অন্যান্য অংশের এমনটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র আঘাতপ্রাপ্ত হলেও টিকটিকি তা মেরামত করতে পারে। এই কারণেই বিজ্ঞানীরা বেশী উৎসাহবোধ করছেন।
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক