দীর্ঘদিন ধরেই গবেষকগণ পৃথিবীতে পানির উৎস নিয়ে ভাবছেন। কিছু গবেষণার তথ্য মতে মহাবিশ্ব শুরুর প্রাথমিক সময়ে পৃথিবী এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চল বেশ শুষ্ক ছিলো। এর মানে হলো পৃথিবীতে পানি এসেছে সৌরজগতের বাইরের দিকের অন্য উৎস যেমন মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যবর্তী স্থানে বিদ্যমান গ্রহাণু প্রভৃতি হতে। অন্য আরেক গবেষণায় দেখা যায় পৃথিবীতে প্রাপ্ত পানি আর গ্রহাণুপুঞ্জে প্রাপ্ত পানির মধ্যে মিল রয়েছে। কাজেই গ্রহাণুকে পৃথিবীর পানির একটি সম্ভাব্য উৎস হিসেবে ধারনা করা হচ্ছে বেশ কিছু কাল ধরেই।
তবে বিতর্ক রয়েছে গ্রহাণু হতে পৃথিবীতে পানি স্থানান্তরের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে। সম্প্রতি ইকারাস নামক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে পৃথিবীর পানি এসেছে গ্রহাণুপুঞ্জ বেল্টের ছোট ছোট গ্রহাণু হতে এবং সেই সাথে এই গ্রহাণুপুঞ্জের বেল্ট পেরিয়ে বৃহস্পতি শনিগ্রহের প্রদক্ষিণরত অঞ্চল হতে। এই গবেষণাটি চালানো হয় প্রাথমিক মহাবিশ্বের কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে।
এই গবেষণাপত্রের লেখক ইউনিভার্সিটি অব বোরড্যুর জ্যোতির্বিদ শন রেমন্ড এক বিবৃতিতে বলেন, “বৃদ্ধিরত দানব গ্রহগুলো সদ্য কথা বলতে শিখেছে এমন শিশুদের মতো। তারা খাবার এদিক সেদিক ছুঁড়ে মারে। প্রাথমিক অবস্থায় বৃহস্পতি বা শনির মতো দৈত্যাকার গ্রহগুলো মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে নিকটবর্তী গ্রহাণুগুলোর স্থিতিশীল গতিপথ বদলে বিভিন্ন দিতে ছুঁড়ে মারে ফলে এদের কক্ষপথ বৃত্তাকার অবস্থা হতে উপবৃত্তাকার হয়ে যায়। গ্রহাণুগুলো কদাচিৎ দানবগ্রহগুলোর টানে এদের উপর আঁছড়ে পরত। এর বদলে এরা প্রচন্ড টানে ধাক্কা অনুভব করতে এবং সৌরজগতের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যেত। এদের মধ্যে একটি অংশ গ্রহাণুপুঞ্জের বেল্টে আবদ্ধ হয়ে প্রদক্ষিণ শুরু করত কিন্তু একটা অংশ অন্যান্য পাথুরে গ্রহ যেমন পৃথিবীতে এসে পড়ত এবং এদের পৃষ্ঠে পানির সঞ্চয় করত।”
আমাদের সৌরজগত অন্যান্য নক্ষত্র ব্যাবস্থার তুলনায় বেশ পৃথক। সাধারণত, সৌরজগতের বড় বড় গ্যাসীয় দানব গ্রহগুলো এদের নক্ষত্রের কাছাকাছি অবস্থানে থেকে প্রদক্ষিণরত থাকে। কিন্তু আমাদের সৌরজগতে গ্যাসীয় দানবগুলো এর কিনারার দিকে অবস্থান করে প্রদক্ষিণরত আছে। রেমন্ড বলেন তাঁদের পরবর্তী গবেষণার বিষয়বস্তু হবে কেন অন্যান্য নক্ষত্র ব্যবস্থার সাথে সৌরজগতের এই ভিন্নতা তা খতিয়ে দেখা। [seeker.com অবলম্বনে]
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক