কৃষ্ণগহ্বর-১ : ফিরে দেখা ইতিহাস

0
944

১৮৮৩ সাল। ফিলোসফিক্যাল ট্রানজাকশন অব দ্য সোসাইটির পত্রিকায় বৃটিশ জ্যোতির্বিদ জন মিশেল একটি গবেষণাপত্র লেখেন। মিশেল অদ্ভুত এক বস্তুর কথা বলেন সেখানে। ভীষণ ভারী বস্তুটা, আমাদের সূর্যের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। সেই সঙ্গে যদি ঘনত্বও খুব বেশি হয়, মিশেল বলেন, সেই নক্ষত্রের মহাকর্ষীয় বল হবে অনেক শক্তিশালী। কতটা শক্তিশালী? সেটা ঠিকঠাক গণনা করে বলতে পারেননি মিশেল। বলেছিলেন, এতটাই বেশি সেই মহাকর্ষ টান, সেখান থেকে আলো পর্যন্ত বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না। আর আলোই যদি বেরোতে না পারে, সেই নক্ষত্রকে আমরা কখনোই দেখতে পাব না। কিন্তু মিশেল এই ধারণা কেন করলেন?
মিশেলের এই ধারণার পেছনে ছিল নিউটনের আলোর কণাতত্ত্ব। নিউটন মনে করতেন, আলোক রশ্মি শুধুই রশ্মি নয়, কণাও। আর আলো যেহেতু কণা, তাই আলো বোধ হয় তাঁর গতিসূত্র মেনে চলে। মেনে চলে মহাকর্ষ তত্ত্বও। নিউটনের আলোর কণা তত্ত্ব বহুদিন পর্যন্ত রাজত্ব করে।

মিশেলও নিউটনের সঙ্গে একমত ছিলেন। মিশেলের পক্ষে ছিল নিউটনের মুক্তিবেগ। নিউটন বলেছিলেন, পৃথবী কিংবা সূর্যের মতো ভারী বস্তুগুলো মহাকর্ষ বল দিয়ে ছোট বস্তুগুলোকে নিজের বুকে আটকে রাখে। ছোট বস্তুকে যদি সেই মহাকর্ষ টান এড়িয়ে মহাশূন্যে ছুটে যেতে হয়, তাহলে তাকে পৃথিবীর মুক্তিবেগের চেয়ে বেশি গতিতে ছুটতে হবে। পৃথিবীর মুক্তিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ১১ দশমিক ২ কিলোমিটার (৭ মাইল)। রকেটের বেগ সেকেন্ডে ১১ দশমিক ২ কিলোমিটারের বেশি। তাই রকেট পৃথিবীর মহাকর্ষ টান কাটিয়ে মহাকাশে চলে যেতে পারে। মিশেল বলেন, সেই ভারী নক্ষত্রটার ভর এতটাই বেশি হবে, তার মুক্তিবেগ হবে আলোর গতির চেয়ে বেশি। তাই সেটার মহাকর্ষক্ষেত্র থেকে আলোও বেরিয়ে আসতে পারবে না। মিশেল সেই ভারী আলোখেকো বস্তুটার নাম দিলেন ডার্ক স্টার বা কৃষ্ণতারা।

জন মিশেল

মিশেলের এই ধারণার পেছনে ছিল নিউটনের আলোর কণাতত্ত্ব। নিউটন মনে করতেন, আলোক রশ্মি শুধুই রশ্মি নয়, কণাও। আর আলো যেহেতু কণা, তাই আলো বোধ হয় তাঁর গতিসূত্র মেনে চলে। মেনে চলে মহাকর্ষ তত্ত্বও। মিশেলও নিউটনের সঙ্গে একমত ছিলেন। মিশেলের পক্ষে ছিল নিউটনের মুক্তিবেগ। নিউটন বলেছিলেন, পৃথবী কিংবা সূর্যের মতো ভারী বস্তুগুলো মহাকর্ষ বল দিয়ে ছোট বস্তুগুলোকে নিজের বুকে আটকে রাখে। ছোট বস্তুকে যদি সেই মহাকর্ষ টান এড়িয়ে মহাশূন্যে ছুটে যেতে হয়, তাহলে তাকে পৃথিবীর মুক্তিবেগের চেয়ে বেশি গতিতে ছুটতে হবে। পৃথিবীর মুক্তিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ১১ দশমিক ২ কিলোমিটার (৭ মাইল)। রকেটের বেগ সেকেন্ডে ১১ দশমিক ২ কিলোমিটারের বেশি। তাই রকেট পৃথিবীর মহাকর্ষ টান কাটিয়ে মহাকাশে চলে যেতে পারে। মিশেল বলেন, সেই ভারী নক্ষত্রটার ভর এতটাই বেশি হবে, তার মুক্তিবেগ হবে আলোর গতির চেয়ে বেশি। তাই সেটার মহাকর্ষক্ষেত্র থেকে আলোও বেরিয়ে আসতে পারবে না। মিশেল সেই ভারী আলোখেকো বস্তুটার নাম দিলেন ডার্ক স্টার বা কৃষ্ণতারা।
মিশেলের কথায় যুক্তি ছিল। তাই সেই ধারণায় আকৃষ্ট হলেন ফরাসি বিজ্ঞানী পিয়েরে সাইমন ল্যাপ্লাস। একটা বই প্রকাশ করেন তিনি। নাম সিস্টেম অব দ্য ওয়ার্ল্ড। সেই বইয়ে ল্যাপ্লাস অঙ্ক কষে মিশেলের কৃষ্ণতারার বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলেন। নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব আর মুক্তিবেগের সূত্র ধরেই ছিল তাঁর সব প্রচেষ্টা। তিনি বলেছিলেন, পৃথিবীর সমান ঘনত্বের একটা নক্ষত্র, কিন্তু তার ব্যাস সূর্যের ব্যাসের ২৫০ গুণ। তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি হবে বিরাট। সেটা এতই বেশি, তা থেকে আলো বেরিয়ে আসতে পারবে না।
মিশেলের কথায় যুক্তি ছিল। তাই সেই ধারণায় আকৃষ্ট হলেন ফরাসি বিজ্ঞানী পিয়েরে সাইমন ল্যাপ্লাস। ১৭৮৫ সালে একটা বই প্রকাশ করেন তিনি। নাম সিস্টেম অব দ্য ওয়ার্ল্ড। সেই বইয়ে ল্যাপ্লাস অঙ্ক কষে মিশেলের কৃষ্ণতারার বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলেন। নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব আর মুক্তিবেগের সূত্র ধরেই ছিল তাঁর সব প্রচেষ্টা।

পিয়েরে সাইমন ল্যাপ্লাস

তিনি বলেছিলেন, পৃথিবীর সমান ঘনত্বের একটা নক্ষত্র, কিন্তু তার ব্যাস সূর্যের ব্যাসের ২৫০ গুণ। তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি হবে বিরাট। সেটা এতই বেশি, তা থেকে আলো বেরিয়ে আসতে পারবে না। ল্যাপ্লাস  তাই আশঙ্কা করেছিলেন, মহাবিশ্বের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রটাকে আমরা কোনও দিনই দেখতে পাবো না! তাঁর মতে সবকিছু গিলে নেওয়া ওই নক্ষত্রটাই সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল। এ একথাটা কিন্তু আজও সত্যি।

নিউটন বলেছিলেন, আলো এক ধরনের কণা। আবার জার্মান বিজ্ঞানী হাাইগেনস বলেন, আলো তরঙ্গ। পরে প্রমাণ হয়, আলোর কণা ও তরঙ্গ দুই ধর্মই মেনে চলে। আলোর কণাকে বলে ফোটন। আইনস্টাইন দেখালেন, আলোর কণা ভরহীন (স্থিরভর)। আরও দেখালেন, আলোর কণাকে কখনও থামানো যাবে না। ভরযুক্ত কোনও বস্তুর বেগই আলোর বেগের সমান হতে পারে না। অথচ ব্ল্যাকহোল সেই আলোকে পর্যন্ত গ্রাস করে নেয়!

কথা হচ্ছে, যে জিনিসে আলো রেহায় পায় না, সে জিনিস দেখা যাবে কী করে? কোনও বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখের রেটিনায় আঘাত করে, তখন আমরা সেই বস্তুকে দেখতে পাই।
কিছু জিনিস নিজেরাই আলোর উৎস। যেমন একটা আগুনের কুণ্ডলি কিংবা আমাদের সূর্য। ওদের থেকে আলো সরাসরি আমাদের চোখে এসে পড়ে তাই আগুনের কুণ্ডলি কিংবা সূর্যকে আমরা দেখতে পাই। কিন্তু ব্ল্যাকহোল থেকে আলো বেরিয়েও আসে না আবার আলো প্রতিফলিতও হয় না। তাই ওকে দেখা যায় না।

তবে ল্যাপ্লাসের কল্পিত ওই উজ্জ্বল নক্ষত্রের সাথে আমাদের এখনকার ব্ল্যাকহোলের ফারাক বিস্তর। ব্ল্যাকহোল হতে হলে কোনও বস্তুকে পৃথিবীর ঘনত্বের হলে চলবে না। সূর্যের চেয়েও অনেক অনেক বেশি ঘনত্ব ব্ল্যাকহোলের। সূর্যের চেয়ে ২৫০ গুণ বেশি ব্যাস হতে হবে, আধুনিক ব্ল্যাকহোলের ক্ষেত্রে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। ল্যাপ্লাসের কল্পিত নক্ষত্রকে তাই কিছুতই ব্ল্যাকহোল বলা চলো না। ল্যাপ্লাসের পরেই শুরু ডার্ক স্টারের অন্ধকার যুগ।

চলবে…

-আব্দুল গাফফার রনি
বিজ্ঞান লেখক
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]

[এই লেখাটি কৃষ্ণগহ্বর ঃ এক মহাজাগতি রহস্যের ঊপাখ্যান বইয়ের অংশবিশেষ। বইটি ২০১৮ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশ করবে অন্বেষা প্রকাশন]

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.