ঋনাত্মক ভরবিশিষ্ট পদার্থ, যাকে সামনে ধাক্কা দিলে পেছনে চলে আসে!

3
892

প্রবাহী পদার্থগুলোর আচরণ প্রায়শঃই অদ্ভুত ঠেকে। তাদের যেমন আচরণ করার কথা অনেক সময় তেমন আচরণ করে না এবং বিজ্ঞানীরা মাঝে মাঝে এদের নতুন নতুন আচরণ আবিষ্কার করেন। সম্প্রতি এর সাথে যুক্ত হয়েছে তথাকথিত সুপার ফ্লুইড (superfluid) যা ঠেলে দিলে সামনের দিকে না গিয়ে বিপরীত দিকে ত্বরিত হয়।

ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি বিজ্ঞানীদল এই ধরনের ফ্লুইড নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁরা রুবিডিয়ামের পরমাণুতে লেজার নিক্ষেপ করে শীতল করেছেন! যদিও আমরা লেজার রশ্মিকে বস্তু উষ্ণকরার ক্ষেত্রেই ব্যবহার জানি কিন্তু নিয়ন্ত্রিত ও সতর্ক ব্যবহারের মাধ্যমে এদের পরমাণুকে শক্তি নিঃসরণে বাধ্য করার কাজে ব্যবহার করতে পারি এবং এভাবে শক্তি নিঃসরণ করে একটি বস্তুকে শীতল করে তুলতে পারি। এভাবে লেজারের মাধ্যমে শক্তি নিঃসরণ করতে করতে পরমাণু পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি নেমে যেতে পারে।

রুবিডিয়ামের পরমাণুকে বিজ্ঞানীর দল এভাবেই পরম শূন্য তাপমাত্রার খুব কাছাকাছিতে শীতল করেছেন। এই তাপমাত্রায় পরমাণুগুলো কণাধর্মের তুলনায় তরঙ্গ ধর্ম বেশী প্রদর্শন করে। বস্তুর এইধরনের ধর্ম প্রথম বর্ণনা করেন দুই প্রথিতযশা বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং আলবার্ট আইনস্টাইন।

পরমাণুর অত্যাচার শীতল হওয়াতেই শেষ  নয়। রুবিডিয়ামের পরমাণুুগুলো শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি নেমে গেলে এরা অন্যান্য মৌলিক কণিকার সাথে ঘুর্ণনরত থাকে, যেমন করে গ্রহ ও নক্ষত্র ঘূর্ননরত থাকে। এই অবস্থা একটি কণার ঘূর্ণন পরিবর্তন করে দিলে এরা পরিবেশের সাথে স্বাভাবিকের তুলনায় ভিন্ন ধরনের আচরণ করে। এই পর্যায়ে তাই ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা পুনরায় লেজার নিক্ষেপ করে রুবিডিয়ামের নিউক্লিয়াসের ঘুর্ণন পরিবর্তন করলেন।

ফলস্বরূপ এই পরমাণুগুলোর ভর হয়ে গেল ঋনাত্মক। ভুল পড়েন নি, এখানে ঋনাত্মক ভরের কথাই বলা হচ্ছে। এই বিষয়টি নিঃসন্দেহে অভিনব। আমরা ভর মেপে থাকি কিলোগ্রামে। আপনার নিজের শরীরের একটি নির্দিষ্ট কিলোগ্রাম পরিমান ভর আছে এবং তা স্থান-কালের বক্রতায় কিছুটা অবদান রাখে। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু ঋনাত্মক ভরের বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করা একটু কষ্টসাধ্য। ছোটবেলায় আমরা গণিতের সমস্যা সমাধানে দেখেছি, অনেক সময় দুটি সমাধান আসে, যার একটি ধনাত্মক এবং অপরটি ঋনাত্মক। এর মধ্যে আমরা ঋনাত্মকটি বর্জন করে ধনাত্মকটি গ্রহন করে এসেছি। এই পর্যায়ে এসে আমাদের হয়তো সেই ঋনাত্মক মানটি নিয়েও চিন্তা করতে হতে পারে।

ঋনাত্মক ভরের বিষয়টি আরো আগে থেকেই পদার্থবিজ্ঞানে অন্তর্ভুক্ত ছিলো, তবে তা কেবল তাত্ত্বিকভাবে। এই প্রথম বাস্তবিকক্ষেত্রেও বিজ্ঞানীরা ঋনাত্মক ভরের প্রদর্শন করলেন। তাঁরা যেই বস্তুটি তৈরি করেছেন তা অনেকটা স্বাভাবিক ধনাত্মক ভরের বস্তুর উল্টো আচরণ করে। আপনি যদি স্বাভাবিক ভরের একটি গোলককে সামনে ঠেলে দেন তাহলে তা সামনেই যেতে থাকবে। কিন্তু ঋনাত্মক ভরের বস্তুকে সামনে থেকে দিলে উল্টো সেটি আপনি যেদিক থেকে ঠেলেছেন সেদিকেই আসতে থাকবে।

এমনটি খুবই স্বাভাবিক যে ঋনাত্মক ভরের বস্তু ইতিমধ্যেই বিদ্যমান আছে, তবে তা আমাদের অগোচরে। বিজ্ঞানীদের বর্তমান আবিষ্কারে ঋনাত্মক ভরের বস্তুকে আরো পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে দেখার সুযোগ তৈরি হলো। আমাদের প্রকৃতিক অনেক রহস্য এখনো উন্মোচিত নয়, যার মধ্যে রয়ছে ব্ল্যাকহোল বা ডার্ক এনার্জির গঠন। ঋনাত্মক ভরের পরীক্ষা-নীরিক্ষা হয়তো এসবের রহস্য উন্মোচনে সহায়ক হতে পারে। [iflscience.com অবলম্বনে]

-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক

3 মন্তব্য

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.