খাদ্যে বিষক্রিয়ার জীবাণুকে শক্তিশালী ক্যান্সার প্রতিরোধীতে রূপান্তর

0
459

ক্যান্সার ঝুঁকি আমাদের আশেপাশেই ঘুরাঘুরি করছে কারণ এটি কার্যতই শরীরের নিজস্ব সুরক্ষা পদ্ধতির কাছে অদৃশ্য থাকে। রোগ প্রতিরোধ পদ্ধতি বা ইমিউন সিস্টেম দূষিত কোষগুলিকে সনাক্ত করতে পারেনা কারণ এরা কোন বাইরের আক্রমণকারী নয়। ক্যান্সারকে আক্রমণ করতে ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করার জন্য বিজ্ঞানীরা ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহারসহ নানারকম প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে বিজ্ঞানীরা সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার উন্নতি সাধন করেছেন যার সাহায্যে একটি শক্তিশালী ইমিউন প্রতিক্রিয়াকে মানুষের ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে সক্রিয় করে তুলবে। এজন্যে বিজ্ঞানীরা ক্যান্সার কোষকে একটি টিউমারের সাথে ইঁদুরের দেহে প্রতিস্থাপন করেন এবং প্রথমবারের মতো তা মেটাস্টেসাইজিং ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেয়েছে। যদি এই কৌশল মানুষের ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপন করা যায় তবে ক্যান্সার প্রতিরোধে ব্যাক্টেরিয়াল থেরাপির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হতে পারে।

ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সংক্রমক রোগ বিশেষজ্ঞ রয় কার্টিস বলেন, “এই দলটি একটি নিখুঁত এবং যথাযথ কাজ করেছে।” কারণ ব্যাকটেরিয়া প্রায়শই নেক্রোটিক, অক্সিজেন বিহীন কোষে বসবাস করে থাকে যাদের উপস্থিতি কিছু জটিল টিউমারে দেখা যায়। আর বিজ্ঞানীরা ক্যান্সারে আক্রান্ত টিস্যুকে সহজেই এসব জীবাণু দিয়ে ‘নিশানা’ করতে পারবেন। ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন এরূপ কৌশলের একটি চিকিৎসার (মূত্রাশয় ক্যান্সার চিকিৎসার থেরাপি) অনুমোদন দিয়েছে এবং আরও কয়েকটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দন্ড আকৃতির সালমোনেলা নামক একধরনের ব্যাক্টেরিয়াজাতীয় জীবাণু প্রবেশের কারণে মারাত্মক খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়ে থাকে। ২০০৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার চোন্নাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ ক্যান্সারের মোকাবেলায় নতুন এক শক্তিশালী প্রতিনিধি খোঁজ করেছেন। এছাড়াও তাঁরা দক্ষিণ কোরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের শেলফিসে Vibrio vulnificus ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণের প্রতিশেধক খুঁজছিলেন। যখন তারা Vibrio নিয়ে কাজ করছিলেন তখন খেয়াল করলেন ইমিউন কোষ থেকে আসা একটি বিশেষ শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া সাঁতার কাটার লেজ- ফ্ল্যাজেলামের প্রোটিনে আলোড়নের সৃষ্টি করে। তাই তারা ক্ষতি করেনা এমন এক সংস্করণের সালমোনেলা টাইফিমারিয়াম নিয়ে একে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করলেন এবং প্রোটিন হতে আড়াল করার জন্য জেনেটিক্যালি সংস্কার করেন যা FlaB নামে পরিচিত।

জং জু মিন এবং জু হেং রীর তত্ত্বাবধানে একটি দল ক্যান্সারের উপর সম্পাদিত সালমোনেলার প্রভাব দেখার জন্য স্থাপন করেন। একটি পরীক্ষার সেটে মানুষের মলদ্বারের ক্যান্সারসহ FlaB কে ২০ টি ইঁদুরের উপর প্রবেশ করান। তিন দিন পর বিজ্ঞানীরা দেখতে পেলেন যে, যদিও ইঁদুরগুলির যকৃৎ, ফুসফুস এবং স্প্লিন্স থেকে ব্যাকটেরিয়াটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে তবুও টিউমার যুক্ত কোষটি সালমোনেলার সাথে ঘোরাঘোরি করছে। ১২০ দিন পর ২০ টি ইঁদুরের মধ্যে ১১টি ইঁদুরের টিউমারই শনাক্ত করার মতো অবস্থায় ছিলোনা। যার ফলে পরীক্ষার পরবর্তী দিনগুলিতে ইঁদুরগুলি স্বাস্থ্যবান থেকে যায়। পরীক্ষাগারের ইদুরগুলির মধ্যে যাদের FlaB সুপ্ত অবস্থায় ছিলো না তারা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং অবশেষে ক্যান্সারে মারা যায়।

পরবর্তীতে গবেষকগণ মানুষের মূত্রাশয়ের মেটাস্টেসাইজিং ক্যান্সার কোষ বিভিন্ন সেটের ইঁদুরের মধ্যে প্রতিস্থাপন করেন। এদের মধ্যে ৮ টিকে সুপ্ত FlaB সালমোনেলা দিয়ে, ৭টিকে FlaB সংস্করণ ছাড়া চিকিৎসা করা হয় এবং অন্যান্যদের চিকিৎসাবিহীন রাখা হয়। ২৭ দিন পর চিকিৎসাবিহীন এবং এস. টাইফিমারিয়াম FlaB সংস্করণ ছাড়া ঐসব ইঁদুর ১২ টির মতো প্রাথমিক স্তরের ক্যান্সারে সংক্রমিত হয়। অন্যদিকে FlaB দ্বারা চিকিৎসাকৃত ইঁদুরের মধ্যে মাত্র চারটির দ্বিতীয় স্তরের টিউমার ছিলো এবং বেশিরভাগেরই মেটাসটেসাইজিং স্থানান্তরের কোন সম্ভাবনা দেখা যায় নি।
মিন এবং রীর মতে প্রোটিনই সম্ভবত ক্যান্সার ছড়িয়ে যাওয়া রোধে প্রধান ভূমিকা রাখছে বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয় স্তরের TLR5 অণু সক্রিয় করতে FlaB ভালো কার্যকর হয়েছে যা ইমিউন কোষকে আরও বেশী আক্রমণাত্বক হতে সাহায্য করেছে।

আপাতত গবেষক দলটি পশু মডেলটিতে আরও কৌশলগত পরিমার্জন অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু মিন ও রী আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই মানুষের উপর প্রায়োগিক চিকিৎসায় ক্যান্সারের মোকাবেলায় FlaB ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারীতার পরীক্ষা চালানোর পরীকল্পনা করছেন। [সায়েন্স- অবলম্বনে]

-শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.