শাকপাতাকে মানব হৃদযন্ত্রের টিস্যুতে রূপান্তর

0
418

সম্প্রতি গবেষকগণ মানুষের হৃদযন্ত্রের শিরায় রক্ত পরিবহনের জন্য একটি শাক পাতাকে কোষ বা টিস্যুতে রূপান্তরিত করে তা ব্যবহারে সফল হয়েছেন।
কিন্তু শুধুমাত্র কোন কোষ গুচ্ছের চাষ একটি সমস্যার সমাধানের অংশ মাত্র। কোনধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া এগুলো নিয়মিত রক্ত সরবরাহ ছাড়া সচল হতে পারবে না।

একটি সুক্ষ রক্তনালীর নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা অত্যন্ত দুরূহ কাজ, বিশেষত যখন এটা সুক্ষ নলের ভেতরে হয়ে থাকে যা মাত্র ৫ থেকে ১০ মাইক্রোমিটার চওড়া। ধমনী সাধারণত অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে যা গবেষণাগারে বেড়ে উঠা টিস্যু নমুনায়ও তৈরী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

আর এখন ওরসেস্টার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে একটি দল অতি ক্ষুদ্র শিরা নেটওয়ার্ক/যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করে শাকপাতাকে একটি জীবন্ত হৃদযন্ত্রের টিস্যুতে রূপান্তরিত করেছেন। এই ধরনের নলাকার নেটওয়ার্ক আপনি উদ্ভিদের মধ্যেও খুঁজে পাবেন।

বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণাপত্রে বলেন, “উদ্ভিদ এবং প্রাণীর তরল পদার্থ, রাসায়নিক পদার্থসমূহ এবং ম্যাক্রোমলিকিউলস পরিবহনে বিভিন্ন মৌলিক পন্থা অবলম্বন করে থাকে তবে এদের সংবহনতান্ত্রিক যোগাযোগ কাঠামোর মধ্যে বিস্ময়কর মিল রয়েছে।”

গোড়া থেকে একটি সংবহন তন্ত্র তৈরী করার পরিবর্তে গবেষকগণ তাঁদের শাকপাতা থেকে শুধুমাত্র পাতাকে জুড়ে রাখার কাঠামোটুকু রেখে বাকি সবুজ উদ্ভিদের সকল উপাদান ছাঁটাই করে ফেলেন। উদ্ভিদের সেলুলোজ গবেষনাগারে চাষ করা নমুনার জন্য সেরা উপাদান, কারণ এটি নিয়ে বৃহৎ আকারে গবেষণা করা হয়েছে যা জীবিত টিস্যুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর এসব উদ্ভিদ হাতের কাছেই পাওয়া যায় ও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সহজে উৎপাদন করা যায়। এই গবেষনার জন্য বিজ্ঞানীরা আক্ষরিক অর্থে শাকপাতাটিকে বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসেন।

শাকপাতার সুক্ষ সংবহন তন্ত্রে প্রবেশ করার জন্য দলটি Decellularisation নামক পদ্ধতি ব্যবহার করে পাতা থেকে উদ্ভিজ্জ কোষ দূর করেন। এসম্পর্কে প্রধান গবেষক জসুয়া গার্শক বলেন, “ আমি এর আগে মানুষের হৃদযন্ত্রের উপর Decellularisation এর কাজ করেছি এবং যখন আমি পাতাটির বোটার দিকে তাকাই তখন এটি আমাকে একটি মহাধমনীর কথা স্বরণ করিয়ে দেয়। তখনি আমার মনে হলো এই বোটা দিয়েই তো আমি তরল প্রবাহিত করতে পারি। কাজটি করার সময় এর কার্যকরিতা নিয়ে আমাদের সন্দেহ থাকলেও এর প্রতিস্থাপন অতি সহজেই হয়ে যায়।”


গবেষকদের ধারণা, অধিকতর গবেষনার মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভিদ বিভিন্ন টিস্যুর কাজে ব্যবহার করা যাবে। উদাহরণস্বরূপ- কাঠের কাঠামো হাড়ের প্রকৌশলে সহয়ক হতে পারে।
সমগ্র কার্যক্রম নিচের ভিডিওটিতে দেখা যেতে পারে।

বর্ধিষ্ণু টিস্যুর জন্য উদ্ভিদের ব্যবহার এটাই প্রথম নয়। এর আগে কানাডার অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পেলিং গবেষণাগারে এক ফালি আপেলের মাঝে মানুষের কান বেড়ে উঠছে। আর এটা শুধু জৈবিক টিস্যুতেই ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, গত মাসে গবেষকগণ বৈদ্যুতিক সংবহন পরিচালনার মাধ্যমে একটি ‘সাইবর্গ রোজ’ উৎপাদন করেন। এছাড়া বিজ্ঞানীরা থ্রিডি প্রিন্টার ব্যবহার করে রক্ত ধমনী তৈরী করার চেষ্টা করছেন এবং পুরো রক্তনালী যোগাযোগ ব্যবস্থা মুদ্রণে সীমিত আকারের সফলাতার খবরও পাওয়া গিয়েছে।

তবে সময়ই বলে দেবে এদের মধ্যে কোন পদ্ধতিটি গবেষণাগারের বাইরে সবচেয়ে বেশি বাস্তব প্রমাণ হয়। [সায়েন্সএলার্ট- অবলম্বনে]

-শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.