বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে পুনঃছাপাযোগ্য কাগজ

0
422

প্রায় ১০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে চীনে উদ্ভবের সময় হতেই কাগজ তথ্য বিস্তারের মাধ্যম হিসেবে সভ্যতার বিকাশে এবং উন্নয়নে বিপুলভাবে অবদান রেখে আসছে। এমনকি বর্তমানের ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমের তথ্যের যুগেও কাগজের চাহিদার বিন্দুমাত্র কমতি নেই।

আমাদের মস্তিষ্ক কাগজের এবং পর্দার তথ্যকে ভিন্নভাবে প্রক্রিয়াকরণ করে। কাগজের তথ্যের সাথে অধিকতর আবেগীয় প্রক্রিয়া জড়িত এবং তাই মস্তিষ্কে সাড়া ফেলে বেশী যার সাথে আভ্যন্তরীণ অনুভুতি জড়িত। এর ফলে ছাপায় পরিবেশিত তথ্য ডিজিটাল মাধ্যমের তুলনায় অধিকতর কার্যকর এবং মস্তিষ্কে আরো প্রখর স্মৃতি তৈরি করতে পারে।

কিন্তু কাগজের বড় সমস্যা হলো এর উৎপাদনে পরিবেশের উপর বিপুল চাপ পড়ে যা টেকসই উন্নয়নের পথে বাধা। কাগজ তৈরি করতে হয় গাছ কেটে এংব উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও পরিবেশ দূষণের নানা উপাদান ছড়িয়ে পড়ে। বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা এমন পাঠযোগ্য মাধ্যম তৈরির চেষ্টা করছেন যার আঙ্গিক হবে গতানুগতিক কাগজের মতোই, পাশাপাশি এটি রিসাইকেল করা ব্যাতীতই বারংবার ছাপা যোগ্য হবে। এর মধ্যে একটি সম্ভাবনাময় উপায় হলো কাগজের উপর এমন কোনো পাতলা পর্দার রাসায়নিক প্রলেপ দেওয়া যা আলোর উপস্থিতিতে বর্ণ পরিবর্তন করবে যার মাধ্যমে কাগজের উপর তথ্য দৃশ্যমান হবে। ইতিপূর্বের প্রয়াসগুলো নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ ব্যয় ও উচ্চ বিষাক্ততা। তাছাড়া তথ্য সন্নিবেশনের ব্যবস্থাটিও সুচারুরূপে করা দুঃসাধ্য ছিলো।

তবে সম্প্রতি রিভারসাইড, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং চীনের শ্যানডং বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে নতুন একধরনের কালি উদ্ভাবন করা হয়েছে যা সাধারণ কাগজের উপর পাতলা পর্দা তৈরি করে আলোর উপস্থিতিতে এর উপর তথ্য সন্নিবেশ করবে। এটিকে বারবার মুছে ৮০ বার পর্যন্ত পূনঃব্যবহর করা যাবে। এই প্রলেপ দুটি ভিন্ন ধরনের ন্যানো কণিকার সমন্বয়ের কাজ করে। এর মধ্যে একটি কণিকা আলো থেকে শক্তি সংগ্রহ করে এবং অপর কণিকার বর্ণ পরিবর্তনের সূচনা সৃষ্টি করে। এই উদ্ভাবন পুনঃছাপাযোগ্য কাগজ উৎপাদনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

প্রলেপ তৈরি করার জন্য একটি একটি বস্তু খুঁজে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ যা সাধারণ অবস্থায় স্বচ্ছ হলেও বিশেষ অবস্থায় রূপ বদলে অস্বচ্ছ হয়ে যেতে পারে এবং আবার আগের অবস্থায় চলে যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে সাধারণ কাগজের মতোই যেকোনো পাঠযোগ্য লেখা কিংবা ছবি তৈরি করা যাবে কিন্তু পাশাপাশি এখানে তথ্যগুলো মুছে আবার কাগজটিকে সাদা করে ফেলা যাবে।

প্রুশিয়ান ব্লু নামক রঞ্জক কণিকা এবং এবং টাইটেনিয়াম ডাইঅক্সাইডের কণিকা ব্যবহার করে এই কাজটি করা হয়েছে। প্রুশিয়ান ব্লু এমনিতে নীল বর্ণের হলেও একটি অতিরিক্ত ইলেক্ট্রন সরবরাহ করলে বর্ণহীন হয়ে যায়। টাইটেনিয়াম ডাইঅক্সাইড অতিবেগুনী রশ্মির আলো শোষণ করে উত্তেজিত হয়ে প্রুশিয়ান ব্লু কণিকাকে ইলেক্ট্রন সরবরাহ করতে পারে এবং এই পদ্ধতিতে এটি বর্ণযুক্ত এবং বর্ণহীণ হয়ে কাগজে তথ্য তৈরি করতে এবং মুছে ফেলতে পারে। [Scientific American অবলম্বনে]

-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.