বিজ্ঞানীরা এমন এক খনিজ আবিষ্কার করেছেন যার মাঝে একই সময়ে একাধিক উৎস থেকে শক্তি বের করে আনার মতো প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সৌর, তাপ এবং গতিশক্তিকে বিদ্যুতে পরিণত করা।
খনিজ পদার্থটি একটি নির্দিষ্ট গঠনের স্ফটিক খনিজ পেরোভস্কাইট (perovskite) পরিবারের অন্তর্গত এবং এই প্রথম গবেষকগণ কোন খনিজ চিহ্নিত করেছেন যা সহনীয় তাপমাত্রায় এই তিন উৎস থেকে শক্তি রূপান্তর করতে পারে। ২০০৯ সালে প্রথম পেরোভস্কাইট সৌর কোষ আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে এই খনিজকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তির পরবর্তী আলোচনার প্রধান বিষয় হিসেবে স্থান দেয়।
প্রচলিত সৌর কোষের চেয়ে পেরোভস্কাইট সৌর কোষ অধিকতর সুলভ ও কার্যকরী প্রমানীত হয়েছে এবং এদের কর্মদক্ষতা ৩.৮ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৬ সালে তা ২২.১ শতাংশে পৌঁছেছে। এটি বর্তমানে প্রচলিত সবধরনের সৌরকোষের মধ্যে সবচেয়ে কর্মদক্ষ ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।
তবে সৌর শক্তির একটি বড় সমস্যা রয়েছে, বিশেষ করে যে সব যন্ত্র ঘরের ভেতর ব্যবহৃত হয় সেগুলো পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায়না ফলে তাদের কার্যক্ষমতা কমে আসে।
যদিও পেরোভস্কাইট সৌর কোষের মতো অন্যান্য খনিজ ঘরে ব্যবহৃত বড় আকারের যন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম হয়না। তবে গবেষকগণ বলছেন এর মাধ্যমে তৈরি সৌরকোষ ল্যাপটপ, ফোন সহ সকল স্মার্ট যন্ত্রে ব্যবহার করা যাবে যা অতি শীঘ্রই আমাদের ঘর এবং শহরের রাস্তা-ঘাট ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে।
KBNNO নামের সবচেয়ে কর্মদক্ষ পেরোভস্কাইট একটি ফেরোইলেক্ট্রিক উপাদান আর তাই এটা ছোট ছোট বৈদ্যুতিক ডাইপোল দ্বারা তৈরি যা অনেকটা ক্ষুদ্র কম্পাস সূচের মতো কাজ করে। যখন কম্পাসকে কোন চুম্বকের সামনে উন্মুক্ত করা হয় তখন এর সূঁচ একটি নির্দিষ্ট দিকে ঘুরে যায়। একইভাবে ফেরোইলেক্ট্রিক উপাদান যখন কোন তাপমাত্রায় পরিবর্তিত হয় তাদের বৈদ্যুতিক ডাইপোল বেঁকে যায় এবং এটি থেকে বিদ্যুৎপ্রবাহ আরম্ভ করে। আর এই ব্যাবস্থা পাইরোইলেক্ট্রিসিটি নামে পরিচিত।
এছাড়াও KBNNO এর ফোটোভোলটাইক আর পিয়াজোইলেক্ট্রিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ফোটোভোলটাইক এর জন্য সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে এটি বিদ্যুৎপ্রবাহ উৎপন্ন করতে পারে এবং পাইজোইলেক্ট্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য কোন গতির কারণে যে চাপের সৃষ্টি হয় তা পরিবর্তিত হয়ে বিদ্যুতের রূপান্তরিত হয়।
পূর্বে তথাকথিত হাইব্রিড শক্তির উৎপাদনে উন্নতি সাধন করা হয়েছিলো কিন্তু এই খনিজের গঠনের মাঝে তিনটি উৎসের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকায় একে বিশেষত্ব দিয়েছে। একাধিক উৎস থেকে শক্তি আহরণ করার জন্য আপনাকে বিভিন্ন উপকণের স্তর যোগ করতে হবেনা। [ScienceAlert- অবলম্বনে]
-শফিকুল ইসলাম