“ভালোবাসার সবটুকু সৌরভ নিংড়ে নেওয়া শেকসপিয়ারের কোনো চতুর্দশপদী মতো কিংবা এটি নান্দনিক তেলচিত্রের মতো যাতে মানবসৌন্দর্য কেবল চামড়াতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং আরো গভীরে, অয়লারের সমীকরণটিও অস্তিত্বের খুব গভীরেই নিহীত।“ স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতবিদ কেইথ ডেভলিন এই কথাগুলো ২০০২ সালে তাঁর “সবচেয়ে সুন্দর সমীকরণ” নামক রচনায় উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু কেনই বা অয়লারের সমীকরণটি এতো মন্ত্রমুগ্ধকর আর এর মানেই বা আসলে কী?
প্রথমতঃ এই সমীকরণে “e” একটি অমূলদ সংখ্যা, অর্থাৎ এটিকে কখনোই দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যাবে না। আমরা যদি দশমিক ব্যবস্থায় লেখার চেষ্টা করি তবুও এই সংখ্যাটিকে লিখে শেষ করা যাবে না। এটি শুরু হয় এভাবে, ২.৭১৮২৮….। এই সংখ্যাটি বিভিন্ন ধরনের সূচকীয় বৃদ্ধি বা হ্রাস, পতঙ্গের বংশবিস্তার হতে শুরু করে তেজস্ক্রিয় ক্ষয় প্রভৃতি নির্দেশ করে। গণিতে এই সংখ্যাটি বিভিন্ন অসীম ধারায় ব্যবহৃত হয়, যেমন: এটি শূন্য থেকে অসীম পর্যন্ত সব পূর্ণসংখ্যার বিপরীতের সমষ্টির সমান। এই সংখ্যাটি যেন হঠাৎ হাজির হয়ে গণিতের বিপুল সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ সূত্রে বসে গেছে।
একই কথা বলা যায় “π” এর জন্য। গণিতের ইতিহাসে যে কয়টি রাশি সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত, সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে গুরুত্ববহ পাই সেগুলোর মধ্যে একেবারেই উপরের দিকে আছে। একটি বৃত্তের পরিধি এবং ব্যাসের অনুপাতকে পাই (π) বলা হয়। π একটি ধ্রূব সংখ্যা। অর্থাৎ যেকোন একটি বৃত্তের পরিধি এবং একই বৃত্তের ব্যাসের অনুপাতের মান সর্বদাই একই হবে।এর মান ৩.১৪১৫৯২৬…..অষ্টাদশ শতাব্দীতে জন হেইনরিখ ল্যম্বার্ড কর্তৃক আবিষ্কৃত হয় যে π একটি অমূলদ সংখ্যা। অর্থাৎ π কে কোনোভাবেই দুটি পুর্ণসংখ্যার অনুপাত রূপে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এর আগে পর্যন্ত এটিকে শুধু দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাতরূপেই দেখা গেছে।যেমন 22/7, 333/106, 355/113, 52163/16604, এবং 103993/33102 ইত্যাদি। এর মধ্যে সবচেয়ে বহূল ব্যবহৃত রূপটি হচ্ছে 22/7 যেটি π এর খুবই স্থুল একটি আসন্ন মান। বর্তমানে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে πএর মান দশমিকের পর কয়েক ট্রিলিয়ন ঘর পর্যন্ত বের করে ফেলা হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া এখনো চলছে।
অপরদিকে “i” মূলদতো নয়ই, এমনকি কোনো বাস্তব সংখ্যাই নয়, বরং তথাকথিত কাল্পনিক সংখ্যা, যার মান পাওয়া যায় -১ এর বর্গমূল থেকে। এটি কাল্পনিক কেননা, বাস্তবে এমন কোনো সংখ্যা পাওয়া যায় না যার বর্গ ঋনাত্মক হবে। যেহেতু কোনো সংখ্যার বর্গ করলে -১ উৎপন্ন হয় না, তাই -১ এর বর্গমূলও বাস্তব নয়। এই কারণে একে কাল্পনিক হিসেবে ধরা হয় এবং i দিয়ে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু কাল্পনিক হলেও গণিতে এর তাৎপর্য অপরিসীম। গণিতের অনেক সমীকরণেই ঋনাত্মক সংখ্যার বর্গমূল চলে আসে, তাই প্রতীক হিসেবে এই সংখ্যাটি অপরিহার্যভাবে ব্যবহৃত হয়।
এই তিনটি সংখ্যার প্রতীককে একত্রে ব্যবহার করে অভাবনীয় ভাবে অতি সরল একটি ফলাফল পাওয়া যায়। যদি e এর সূচক হিসেবে i এবং π এর গুণফল বসানো হয় তাহলে এদের একত্রে মান হয় -১ এবং সমীকরণে যেমন দেখা যাচ্ছে এর সাথে ১ যোগ করে যোগফল পাওয়া যায় ০। তিনটি অদ্ভুতুড়ে সংখ্যা মিলে এমন একটি সরল ফলাফল তৈরি করবে তা প্রায় অবিশ্বাস্য, কিন্তু অয়লারের সমীকরণটি প্রমাণীত সত্য। এটাই এই সমীকরণের মাহাত্ব্য।
-ইমতিয়াজ আহমেদ
সম্পাদক, বিজ্ঞান পত্রিকা
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
3. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া
e^iπ+1=0
বা,e^iπ=-1
বা,e^π=i√(-1)
লক্ষ্য করলে দেখবেন এখানে e^π একটি বাস্তব সংখ্যা কিন্তু i√(-1) একটি কাল্পনিক সংখ্যা। একটা বাস্তব সংখ্যা কিভাবে একটা কাল্পনিক জটিল সংখ্যার সমান হয়?
দ্বিতীয় লাইন থেকে তৃতীয় লাইনে গেলেন কী করে?
¡√(-1) বলতে (-1)^(1/¡) বুঝিয়েছি।