গ্যালিলিওর টেলিস্কোপে সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্ব প্রতিষ্ঠা

0
558

প্রাচীন গ্রীসের দার্শনিক এরিস্টার্কাস প্রথম সৌরকেন্দ্র বিশিষ্ট সৌরজগতের ধারনা ব্যক্ত করেছিলেন যদিও এরিস্টটল ও টলেমীর প্রভাবে সেই মতবাদ চাপা পড়ে যায়। শেষোক্ত দুজন ধারনা করতেন পৃথিবীই মহাবিশ্বের কেন্দ্রে। টলেমী পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের একটি মডেলও তৈরি করে প্রচার করেন। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারনাই প্রচলিত থাকে। বাইবেলেও পৃথিবীকে কেন্দ্র করে অন্যান্য স্বর্গীয় বস্তুগুলোর প্রদক্ষিণের কথা বলা হয়। দীর্ঘ সময় পরে কোপার্নিকাস পুনরায় সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের ধারনা দেন বিভিন্ন বস্তুর গতিপথ পর্যবেক্ষণ করে।

১৫৪৩ সালে তিনি বই আকারে তাঁর সেই পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেন। কোপার্নিকাসের প্রচেষ্টা ছিল টলেমির মডেলের একটি বিকল্প দাঁড় করানো তাই তাঁর মডেলেও বেশ কিছু ভুল-ভ্রান্তি থেকে যায়। যেমন: তিনি ভেবেছিলেন গ্রহগুলোর গতিপথ বৃত্তাকার, কিংবা বৃত্তাকার পথে গ্রহগুলোর গতি সুনির্দিষ্ট। এই মডেলটি তৎকালীন ধর্মীয় সংস্থায় তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয় যাঁরা মনে করতেন পৃথিবী স্রষ্টার বিশেষ সৃষ্টি এবং এটি মহাবিশ্বের কেন্দ্র। তাছাড়া তখন পর্যন্ত আপাতদৃষ্টিতে সবকিছু পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে বলেই মনে হত।

স্ট্যান্ডে বসানো গ্যালিলিওর টেলিস্কোপ
স্ট্যান্ডে বসানো গ্যালিলিওর টেলিস্কোপ

কিন্তু গ্যালিলিওর কর্মকান্ডে এই পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারনা পুরোপুরি ভুলুন্ঠিত হয়ে যায়। গ্যালিলিও একেবারে প্রথম দিকের টেলিস্কোপ প্রস্তুতকারকদের একজন। তাঁর তৈরি টেলিস্কোপের মাধ্যমেই প্রথম চাঁদের উঁচু-নীচু পৃষ্ঠ, পাহাড়-পর্বত দৃশ্যমান হয় এবং তার ভুমিসদৃশ বিষয়গুলো সুস্পষ্ট হয়। কিন্তু এই টেলিস্কোপটির সবচেয়ে বড় ভূমিকা বৃহস্পতি পর্যবেক্ষণে।

গ্যালিলিও বৃহস্পতি গ্রহ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এর চারটি উপগ্রহ আবিষ্কার করেন এবং প্রথমবারের মতো পৃথিবীর মানুষ দেখতে পায় যে পৃথিবী ছাড়াও অন্য কোনো বস্তুকে ঘিরেও কিছু কিছু বস্তু প্রদক্ষিণ করে। এর ফলে পৃথিবী যে মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত সেই আত্মতুষ্টি বিশালভাবে ধাক্বা খায়। খ্রীষ্টধর্মের কেন্দ্রীয় নেতারা এই ধারনা মেনে নিতে পারেন নি এবং তাঁদের আক্রোশের ফলাফল হিসেবে গ্যালিলিওকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়।

বৃহস্পতির ছোট-বড় মিলিয়ে ৬৭ টি উপগ্রহ অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হলেও গ্যালিলিওর আবিষ্কৃত চারটিই সবচেয়ে বড় এবং সহজে দৃশ্যমান। সাধারণ মানের দূরবীন দিয়েই বৃহস্পতিসহ এই চারটি উপগ্রহ দেখা সম্ভব। এই উপগ্রহগুলোর নাম আয়ো (Io), ইউরোপা (Europa), ক্যালিস্টো (Callisto) এবং গ্যানিমিড (Ganymede)। গ্যালিলিওর টেলিস্কোপটির বিবর্ধন ক্ষমতা ছিলো মাত্র ২০x। এই ধরণের বিবর্ধনের টেলিস্কোপ দিয়ে চারটি উপগ্রহসহ বৃহস্পতির একটি দৃশ্য পাওয়া যেতে পারে নিচের ছবির মতো। আগ্রহীরা আকাশে চোখ রাখতে পারেন।

12227588_851466651617312_6402669344700838683_n

-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.