প্যাট্রিক হার্ডসনের মুখের অবয়বে একপ্রকার স্থানান্তর হয়েছে এক বছর হলো। আর এ বিষয়টি নিয়ে তিনি কৃতজ্ঞ স্বরেই বললেন, “এই অস্ত্রোপচারটি সত্যিই আমার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি আমি আমার পরিবারের সাথে ডিজনি ওয়ার্ল্ডে বেড়াতে গিয়েছিলাম এবং আমার বাচ্চাদের সাথে সাঁতার কেটেছি। যা গত পনের বছরে সম্ভব হয়ে উঠেনি।”
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাঙ্গন মেডিকেল সেন্টার যেখানে ২০১৫’র আগষ্টে তার অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সেখানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হার্ডসন বলেন, “আমি অন্য দশজনের মতোই জীবন যাপন করতে পাচ্ছি। পরিবারের সাথে আগে যেসব কাজ করতে পারতাম না এখন তা করা সম্ভব হয়ে উঠছে। আমি যখন আমার বাচ্চাকে গাড়ি চালিয়ে স্কুলে নিয়ে যাই তখন আমার কেমন অনুভূতি হয় সেটা বলে বুঝাতে পারবোনা।”
নতুন মুখ সংযোগ করার পর তার নতুন চোখের পাতা, ঠোট সমন্বয় করাসহ পাকস্থলি থেকে শ্বাসনালী ও খাবার নল সরানো এবং কিছু বাড়তি ত্বক মুছে ফেলার জন্য কয়েকটি ছোটখাটো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়েছে। প্রত্যেকটি ছবিই প্রকাশ করছে হার্ডসন অস্ত্রোপচারের পূর্বে কেমন দেখতে ছিল আর বর্তমানে তার চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই যে, তিনি ২০০১ সালে একটি বড় দূর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, “এখন আর কেউ আমার দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকেনা, বাচ্চারা ভয়ে পালায়না। আমি অন্যদের মতোই সাধারণ মানুষ। আমি এখন অন্যদের সাহায্য করতে চাই বিশেষকরে আমার সহকর্মী অগ্নি-নির্বাপণকারীদের ও সশস্ত্র সার্ভিসের সদস্যদের এবং বলতে চাই আশা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এটা অত্যন্ত কার্যকর।”
এই যুগান্তকারী অস্ত্রোপচারের প্রধান রোগীই ছিলেন অগ্নি-নির্বাপণকর্মী। যিনি কর্মরত অবস্থায় একটি বভন ধ্বসে মারাত্মক আহত হয়েছিলেন এবং মুখ মন্ডলের পুরে যায়। ১৪ বছর মুখভর্তি ভয়ংকর দাগের সংঙ্গে সে বসবাস করার পর তার ভাগ্য সুপ্রশন্ন হয়। একটি সাইক্লোন ঝরে নিহত এক ব্যাক্তির মুখ তার মুখে প্রতিস্থাপন করা হয়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কর্তৃক উভয়ের উচ্চতা, রক্তের গ্রুপ, গায়ের রং ও ওজনের সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করার পরই দানকৃত মুখ প্রতিস্থাপনের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। একশো জন মানুষ দুটি দলে বিভক্ত হয়ে ২৬ ঘন্টা সময় নিয়ে অস্ত্রোপচারের কাজ সম্পন্ন করেন। হার্ডসনের মুখমন্ডলে নতুন মুখ প্রতিস্থাপন করতে প্রথমে তা নির্দিষ্ট আকারে কেটে নেয়া হয়। পরে তার গভীর মুখমন্ডলের শিরা, মাংসপেশী, রক্তনালী সংযুক্ত করা হয়।
এক্ষেত্রে হার্ডসনের বেঁচে থাকার সিম্ভাবনা ছিল মাত্র ৫০ ভাগ কিন্তু ভাগ্যক্রমে তিনি এটা পেরেছেন।
যাইহোক, হয়তো এখানেই গল্পের শেষ নাও হতে পারতো। যদিও চিকিৎসকগণ সবধরণের চেষ্টাই করেছেন যেন হার্ডসনের শরীর তার নতুন মুখকে প্রত্যাখ্যান না করে। যে কোন অঙ্গ প্রতিস্থাপন কিংবা তার ইমিউন সিস্টেম নতুন মুখকে আক্রমণ করার মত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থেকে গিয়েছিল। এই অবস্থা প্রতিহত করতে তাকে দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসার অংশ হিসেবে immunosuppressant পিল প্রদান করা হয়। তবে তার চিকিৎসকগণ নিশ্চিত যে ভবিষ্যতের কোন এক পর্যায়ে তার শরীর নতুন মুখকে প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করবে। immunosuppressants এর লম্বা কোর্স সচল রাখা হয়েছে এই পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে। কিন্তু এই প্রতিস্থাপন দলের প্রধান এডুয়ার্ডো রদ্রিগেজ খুবই আশাবাদি।
রদ্রিগেজ এক বিবৃতিতে বলেন, “হার্ডসনের উন্নতি আমারা বিস্মিত, এটা আমাদের সব প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল প্রত্যাখ্যান না করার ব্যাপারটা।”
হার্ডসন এখন তার নতুন মুখ নিয়ে খুব সুন্দরভাবেই জীবনযাপন করছেন এবং এখন পর্যন্ত তার শরীর মুখকে প্রত্যাখ্যান করার মতো কোন লক্ষণ প্রকাশ করেনি।
-শফিকুল ইসলাম