ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে মুরের সূত্র। যা ১৯৭১ সালে তড়িৎ প্রকৌশলী গর্ডন মুর আবিষ্কার করেন। এই সূত্রের মূল বক্তব্য ছিল,যন্ত্রের কর্মদক্ষতা বাড়াতে আনুমানিক প্রতি ২ বছর অন্তর অন্তর ক্ষুদ্র সমন্বিত বর্তনীতে (আইসি সার্কিট)ট্রানজিস্টরের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বাড়াতে হবে। তার এই অনুমানটি ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সঠিক বলে গৃহীত হয়ে আসছে। কম্পিউটারের মাইক্রোপ্রসেসর থেকে শুরু করে মেমরী চিপ,সেন্সর,ডিজিটাল ক্যামেরার পিক্সেল তৈরিতে মুরের সূত্র মেনে চলা হয়।
মুরের সূত্রের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ট্রানজিস্টরের আকার। এক্ষেত্রে বর্তনীর আকার অপরিবর্তিত থাকে কিন্তু তাতে প্রতি ২ বছর পর পর পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ সংখ্যক ট্রানজিস্টর লাগাতে হয়। স্বভাবতই ট্রানজিস্টরের আকার পূর্বের তুলনায় অর্ধেক হতে হবে। তাই সূত্র মানতে ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানীগুলো প্রতিনিয়ত ট্রানজিস্টরের আকার ছোট করতে কাজ করে যাচ্ছে।
তবে তারা কয়েক বছর পর হয়ত মুরের সূত্রের সাথে আর তাল মেলাতে পারবে না। সম্প্রতি অর্ধপরিবাহী ভিত্তিক শিল্প সংস্থাগুলো (ইন্টেল,এএমডি,গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ ইত্যাদি)তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এই কথা স্বীকার করেছেন। তাদের ধারণা,২০২১ সাল নাগাদ ট্রানজিস্টরের আকার আর ছোট করা সম্ভব হবে না। কারণ সিলিকন ট্রানজিস্টরের আকার আরও ছোট করলে তারা আর্থিকভাবে খুব একটা লাভবান হবেন না।তাই তারা এই সূত্রের সাথে সম্পর্ক শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।বছরের শুরুতেই ইন্টেল তাদের সিলিকন চিপের অগ্রগতির প্রক্রিয়া ধীর করার কথা জানায়। এমনকি তাদের উদ্ভাবিত ক্ষুদ্রতম ট্রানজিস্টর (যা মাত্র ১০ ন্যানোমিটার দীর্ঘ) তারা ২০১৬ এর পরিবর্তে ২০১৭ সালে বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে। সংস্থাটির বিবৃতি অনুসারে সর্বোচ্চ আর ৫ বছর তারা ট্রানজিস্টরের আকার কমাতে কাজ করতে পারে।
মুরের সূত্রের বিকল্প কি হবে? এটা নিয়ে প্রযুক্তিবিদদের মাঝে অনেক উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। তবে অনেকে এখনই সিলিকন চিপ প্রযুক্তির বিলুপ্তির আশঙ্কা করছেন না। কম্পিউটারের দক্ষতা এখন অনেক উপায়েই বাড়ানো সম্ভব। এক্ষেত্রে চিপগুলোর মাঝে কাজগুলো ভাগ করে দেওয়া যেতে পারে। ফলে একটি চিপ একটি নির্দিষ্ট সময়ে শুধুমাত্র একটি কাজে অংশ নেবে। এর ফলে সবগুলো কাজ দ্রুত করতে গিয়ে ট্রানজিস্টরের যে সময় লাগত,সেটা কমে আসবে।এছাড়াও ট্রানজিস্টরের গঠনগত পরিবর্তনও আনা যেতে পারে।নির্মাতারা ট্রানজিস্টরের ঘনত্ব বাড়াতে বহুস্তরসম্পন্ন বর্তনীর কথা ভাবছেন,যেখানে স্তরগুলো একে অপরের উপরে অবস্থান করবে। অনেকটা চার-পাঁচতলা দালানের মত।সেক্ষেত্রে জমির পরিমাণ একই রেখে সেখানে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বাড়ানো যায়। একই পদ্ধতি অনুসরণ করে বর্তনীর আকার না বাড়িয়ে তাতে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা ও ঘনত্ব বাড়ানো যেতে পারে।
তাই মুরের সূত্র হয়ত এক সময় থেমে যাবে। কিন্তু মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা?সেটা কখনই থামবে না।
–নাসরুল্লাহ্ মাসুদ
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
3. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া