স্টিকার সদৃশ থার্মোমিটার মিলি-কেলভিন পর্যন্ত তাপমাত্রা মাপতে পারে

0
494
এই ডিভাইস ত্বকের কোনো ক্ষতি করে না।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ের বিজ্ঞানীরা এমন একধরনের তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র তৈরি করেছেন যা সবসময় হাতে লাগিয়ে চলাফেরা করা যাবে। এই বিশেষ থার্মোমিটার হাতে লাগিয়ে রাখলে তা হবে অনেকটা স্টিকার বা ট্যাটু লাগিয়ে রাখার মতোই হালকা ও স্বাভাবিক। ক্ষুদ্র এই থার্মোমিটারে ব্যবহার করা হয়েছে ন্যানো আকৃতির সেন্সর, যার ফলে একে ক্ষুদ্র ও কাগজের মতো পাতলা রাখা সম্ভব হয়েছে।

শুধু এতটুকু সুবিধা দিয়েই এই দায়িত্ব শেষ নয়; এই থার্মোমিটার ব্যবহার করে দেহের তাপমাত্রা মিলি-কেলভিন পর্যন্ত নিখুঁতভাবে পরিমাপ করা যাবে। দেহে যদি তাপমাত্রার খুব সূক্ষ্ম পরিমাণ হেরফেরও হয় তাহলে তাও ধরা পড়বে বিশেষ এই থার্মোমিটারে। গবেষকদের দাবী চিকিৎসাক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের এই বৈশিষ্ট্যকে খুব ভালোভাবে কাজে লাগানো যাবে। চিকিৎসার পাশাপাশি প্রাত্যহিক ব্যবহারেও এটি ব্যবহার করা যাবে। এ সম্বন্ধে গবেষকরা নেচার ম্যেটেরিয়ালস জার্নালে একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন।

ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন রজার্সের নেতৃত্বে একদল গবেষক এই যন্ত্র বা ডিভাইস তৈরি করেছেন। তাঁরা পরীক্ষামূলকভাবে দুই ধরনের ডিভাইস তৈরি করেন। প্রথম ডিভাইসে এক স্তরের কিছু ক্ষুদ্র সেন্সর ব্যবহার করেন যা স্বর্ণের পাতলা পাতের মাধ্যমে লাগানো থাকে। এদিক থেকে স্বর্ণের বিশেষ একটি গুণ আছে। স্বর্ণকে পাতলা করতে করতে অত্যন্ত সরু করে ফেলা যায়, যা অন্যসব ধাতুর বেলায় কমই করা যায়। এখানে ব্যবহৃত পাত ২০ ন্যানোমিটার পাতলা এবং ২০ মাইক্রোমিটার লম্বা। স্ট্যান্ডার্ড মাইক্রোলিথোগ্রাফিক টেকনিক ব্যবহার করে এই ডিভাইস তৈরি করা হয়েছে। এটি তাপমাত্রার খুব ক্ষুদ্র পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করতে পারে।

তাদের তৈরি করা দ্বিতীয় প্রকার ডিভাইসটিতে কয়েক স্তরের সেন্সর ব্যবহার করা হয়। এতে যে ডায়োড ব্যবহার করা হয় তা সিলিকন ন্যানো-মেমব্রেনকে নির্দিষ্ট ছাঁচে ডোপিং করে তৈরি করা। এটি তুলনামূলকভাবে বেশি শক্তিশালী। উভয় ডিভাইসেই পাতলা তথা ক্ষুদ্রতার বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

এই ডিভাইস তৈরির সাথে জড়িত গবেষক জন রজার্স এটি সম্পর্কে বলছেন “সেন্সর যুক্ত এই ডিভাইসটির অনেক ভৌত তাৎপর্য আছে। কারণ এটি বাহ্যত অনেকটা মানুষের চামড়ার মতোই; মানুষের ত্বকের মতোই নমনীয়, স্থিতিস্থাপক ও ঘনত্ব সম্পন্ন। ফলস্বরূপ, এটি যখন কারো ত্বকে স্থাপন করা হবে তখন ঐ ব্যক্তি বুঝতেই পারবে না যে সে একটি শক্তিশালী যন্ত্রকে সাথে নিয়ে চলাফেরা করছে যা অতি-ক্ষুদ্র তাপমাত্রাও পরিমাপ করতে পারে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হয় এরকম রোগীর জন্য এই যন্ত্র খুব উপকারে আসবে। এটি ত্বকে লাগালে ত্বকের কোনো ক্ষতি হয় না। লাগানোর সময় বা খোলার সময়ও কোনো ঝামেলা হয় না। রোগীর শরীরের অভ্যন্তরের তথ্য এমনকি রক্তনালীতে চলাফেরা করা রক্তের প্রবাহ সম্পর্কেও তথ্য দিতে পারবে এই ডিভাইসটি।

এই ডিভাইস ত্বকের কোনো ক্ষতি করে না।
এই ডিভাইস ত্বকের কোনো ক্ষতি করে না।

এখানেই এই ডিভাইসের শেষ নয়। এর সাথে উত্তপ্ত হবার একটি সেন্সর যুক্ত আছে। আভ্যন্তরীণ শক্তি ব্যবহার করে এটি গরম হতে পারে। আর এটি যেহেতু একটি থার্মোমিটার তাই আশেপাশের তাপমাত্রা সম্পর্কে ধারণা করতে পারে। তার উপর এটি উত্তপ্ত হলে সেই উত্তাপ ত্বকে তথা গায়ে লাগে। তার মানে প্রয়োজনের সময় চাইলে এটি ব্যবহার করে শরীরকে উত্তপ্তও করে নেয়া যেতে পারে।

ন্যানো হিটার।
ন্যানো হিটার।

ধীরে ধীরে আমরা হয়তো এমন প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি যেখানে মানুষ এমন পোশাক পড়বে যা এয়ার কন্ডিশনের মতো কাজ করবে। উত্তাপ দরকার হলে উত্তাপ দিবে শীতলতা দরকার হলে শীতলতা দিবে। [nanotechweb.org অবলম্বনে]

– সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.