অতিরিক্ত ওজন মস্তিষ্কের বয়স বাড়িয়ে দেয় দশ বছর

0
525

স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন বর্তমান সময়ের মানুষদের অন্যতম প্রধান একটি শারীরিক সমস্যা। পৃথিবীতে এখন প্রতি ৩ জন মানুষের মাঝে একজন অতিরিক্ত ওজনধারী। এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ধারণা করা হয়,ওজন বৃদ্ধির ফলে মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ফলে বিভিন্ন রোগজীবাণু বাসা বাঁধে শরীরে। তাই ওজন বাড়লে সেটি শরীরের উপর মারাত্নক প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় যা জানা গেছে তা আরও ভীতিকর। নিউরোবায়োলজি অব এজিং সাময়িকীতে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে,একজন মধ্যবয়সী মোটা মানুষের মস্তিষ্কের বয়স তার সমবয়সী চিকন মানুষের চেয়ে ১০ বছর বেশি বলে মনে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে,একজন ৫০ বছরের মোটা মানুষের মস্তিষ্কে ৬০ বছরের চিকন মানুষের সমপরিমাণ হোয়াইট ম্যাটার ক্ষয় হয়। এই শ্বেত বস্তুই মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশকে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করে রাখে।

মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে মস্তিষ্কের শ্বেত বস্তু কমতে থাকে-এটা অনেক আগেই গবেষণায় জানা গেছে। এই শ্বেত বস্তু মূলত স্নায়ুকোষের সংযোগকারী শাখা প্রশাখা নিয়ে গঠিত। এই শাখা প্রশাখাগুলোকে অ্যাক্সন বলে। অ্যাক্সন দিয়ে তৈরি হওয়ায় একে মস্তিষ্কের হাইওয়ে বা প্রধান সড়ক বলা যেতে পারে। কারণ এর মধ্য দিয়েই মস্তিষ্কে সৃষ্ট তড়িৎ উদ্দীপনাগুলো চলাচল করে ও পরবর্তীতে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

গবেষকরা এই বিষয়ে পরীক্ষার জন্য ৫২৭ জন মানুষকে নির্বাচন করেন। তাদের বয়স ছিল ২০ থেকে ৮৭ এর মধ্যে। শরীরের ওজনের ওপর ভিত্তি করে তাদেরকে মোটা ও চিকন- ২টি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। এরপর অংশগ্রহণকারী প্রতিটি মানুষের মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হয়। স্ক্যান রিপোর্টে দেখা যায়,মধ্যবয়স থেকে চিকন মানুষের তুলনায় মোটা মানুষের মস্তিষ্কের সংকোচন দ্রুতহারে ঘটতে থাকে। আর তাদের মস্তিষ্কের সংকোচন এমনভাবে ঘটে যে সেটাকে দেখলে ১০ বছর বেশি বয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কের মত মনে হয়।

তবে এটার সুস্পষ্ট কারণ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। গবেষকরা এক্ষেত্রে সম্ভাব্য ২টি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন।তারা ধারণা করছেন, শারীরিক স্থূলতার কারণেই হয়ত মস্তিষ্কের এই পরিবর্তন ঘটে অথবা মস্তিষ্কের এই পরিবর্তনের কারণেই হয়ত মানুষ মোটা হয়ে যায়।

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রদাহও এর সাথে জড়িত থাকতে পারে। কারণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।এর ফলে মানুষের শরীরে এমন কিছু যৌগ তৈরি হয় যেগুলো শরীরের বিভিন্ন টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যার প্রভাব পড়ে শরীরের উপর।এর ফলেই শরীরে এক ধরনের প্রদাহ বা ব্যথা সৃষ্টি হয়।যার কারণে মস্তিষ্কের সাদা পদার্থের ক্ষয় হয়। যেহেতু ফ্যাটি টিস্যুগুলোর কারণেই শরীরে প্রদাহ উৎপন্নকারী উপাদান (সাইটোকাইনস) ও হরমোন (লেপটিন) তৈরি হয়,তাই গবেষকরা মনে করছেন এই ধারণাটি কিছুটা হলেও ওজন বৃদ্ধির কারণে মস্তিষ্কের অবনতির কারণ ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করবে।

৫৬ বছর বয়সী চিকন মানুষের মস্তিষ্ক (বাম) এবং ৫০ বছর বয়সী মোটা মানুষের মস্তিষ্ক (ডান)।গ্রে ম্যাটারকে হলুদ রং দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে।
৫৬ বছর বয়সী চিকন মানুষের মস্তিষ্ক (বাম) এবং ৫০ বছর বয়সী মোটা মানুষের মস্তিষ্ক (ডান)।সাদা পদার্থকে রং দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা আরেকটি বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়েছেন। সেটি হচ্ছে,মধ্যবয়স থেকেই এই প্রভাব কার্যকর হয় কেন? তাদের ধারণা,আমাদের জীবনের এই ধাপে শরীরের মাঝে হয়ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক পরিবর্তন ঘটে যার ফলে তখন মস্তিষ্কের আকার শরীরের ওজন দ্বারা সহজেই প্রভাবিত হতে পারে। তবে এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে পরীক্ষার মাধ্যমে দেখার চেষ্টা করছেন যে,ওজন কমালে এর প্রভাব বিপরীতমুখী হয় কিনা।

তবে সুখবর হচ্ছে,মস্তিষ্কের শ্বেত বস্তুর পরিমাণ কমে গেলেও এটি মোটা মানুষের জ্ঞান বুদ্ধির উপর কোন প্রভাব ফেলে না। তাই বুদ্ধিবৃত্তিক যে কোন কাজে এমনকি আইকিউ টেস্টেও স্থূল ব্যক্তিরা সমবয়সী চিকন মানুষের সমান দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারবে। তাই শরীর মোটা মানেই যে মাথামোটা (বোকা)-এটা ভাবার কোন সুযোগ নেই।

-নাসরুল্লাহ্ মাসুদ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.