১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই মানুষ সর্বপ্রথম চাঁদে অবতরণ করে। এরপর কেটে গেছে প্রায় ৪ যুগ। কিন্তু এখনও কোন সাধারণ মানুষের পায়ের ধুলো পড়েনি সেখানে। কারণ এতদিন চাঁদে শুধুমাত্র গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানেরই মহাকাশযান পাঠানোর অনুমতি ছিল। এদের মধ্যে নাসা বেশ পরিচিত। এই প্রতিষ্ঠানগুলো সবই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চাঁদে অভিযান চালায়। তাই সরকারি লোকজন, বিজ্ঞানী ও মহাশূন্যচারী ছাড়া আর কারো পক্ষে চাঁদে যাওয়ার কথা চিন্তাও করা যেত না।
তবে সম্প্রতি মহাশূন্যে ভ্রমণে ইচ্ছুক মানুষদের জন্য অনেক বড় সুখবর দিল যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। তারা প্রথমবারের মত কোন ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে চাঁদের পৃষ্ঠে মহাশূন্যযান অবতরণের অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানটির নাম মুন এক্সপ্রেস। তারা ২০১৭ সালের শেষের দিকে এমএক্স-১ই নামের একটি ছোট মানুষবিহীন মহাকাশযান চাঁদে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। এই্ প্রতিষ্ঠানটি মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণের জন্য আগে থেকেই রকেট ল্যাব নামে আরেকটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল। কিন্তু এর অনুমতি পাওয়াটাই ছিল সবচেয়ে দুঃসাধ্য কাজ।
প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। তারা আশা করছে, চন্দ্রাভিযানে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সংযুক্তি মহাকাশ সম্পর্কিত গবেষণাকে আরও ত্বরান্বিত করবে। এর ফলে পূর্বের তুলনায় চাঁদে বেশি সংখ্যক মহাশূন্যযান পাঠানো যাবে। এর মাধ্যমে চাঁদে সঞ্চিত মূল্যবান বস্তু বা উপাদানসমূহ অনুসন্ধান করা সহজ হবে।
আমেরিকার বিমান বাহিনীর (এফএএ) বাণিজ্যিক মহাকাশ পরিবহন সংস্থা গত ৩ই আগস্ট এই অনুমোদন দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, মুন এক্সপ্রেস ইতিমধ্যে তাদের এই মিশনের জন্য মোটা অঙ্কের রাজস্ব প্রদানে সম্মত হয়েছে। প্রকৃত অর্থে মহাশূন্যের কোন মালিকানা নেই। তবে ১৯৬৭ সালের মহাকাশ বিষয়ক চুক্তিতে বলা আছে,যদি কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান মহাশূন্যে কোন অভিযানে অংশ নিতে চায়, তবে তাকে তার রাষ্ট্রের সরকারের অনুমতি নিতে হবে।
মুন এক্সপ্রেস মূলত গুগল আয়োজিত লুনার এক্সপ্রাইজের অংশ হিসেবে চাঁদে মহাকাশযান অবতরণের পরিকল্পনা করছে। এই প্রতিযোগিতায় মোট ১৬ টি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়ার কথা। এদের প্রত্যেকের লক্ষ্য চাঁদে মনুষ্যহীন রোভার পাঠানো যা চাঁদের পৃষ্ঠে চলাচল করতে সক্ষম হবে। এখন পর্যন্ত মাত্র দুইটি প্রতিষ্ঠান মহাশূন্য ভ্রমণের চুক্তির সাথে সম্মত হয়েছে। একটি হচ্ছে মুন এক্সপ্রেস, অপরটি ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠান স্পেস আইএল। বাকি ১৪ টি প্রতিষ্ঠানকে এতে অংশগ্রহণ করতে হলে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগেই এই চুক্তির আওতাভুক্ত হতে হবে।
প্রতিযোগিতায় জিততে হলে অংশগ্রহণকারী কোন দলের রোভারকে অবশ্যই চন্দ্রপৃষ্ঠে ৫০০ মিটার (১৬৪০ ফুট)পথ পাড়ি দিতে হবে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দল পাবে ২০ মিলিয়ন ডলার, আর রানার্স আপ দল পাবে ৫ মিলিয়ন। এছাড়াও তাদেরকে চাঁদের পৃষ্ঠে আরও বেশি দুর ভ্রমণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিগত সুবিধা প্রদান করা হবে।
যেহেতু চাঁদের পৃষ্ঠে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান কম (পৃথিবীর ছয় ভাগের এক ভাগ),তাই কোন বস্তুর ওজনও এখানে কমে যায়। ফলে চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে লাফ দিয়ে পুনরায় পৃষ্ঠে ফিরে আসার সময় বেশ ভাল দুরত্ব অতিক্রম করা সম্ভব। এ কারণে মুন এক্সপ্রেস তার রোভারকে লাফিয়ে চাঁদের পৃষ্ঠে পথ অতিক্রম করার জন্য প্রস্তুত করছে। অবশ্য তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা এখনও জানা যায়নি। স্পেসআইএলও অবশ্য একই পন্থা অবলম্বন করছে। তারাও আগামী বছরে একটি স্পেসএক্স রকেট চাঁদে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।
মুন এক্সপ্রেসের এই অভিযান সফল হবে-এটাই সকলের আশা। কিন্তু এই আশার মাঝেও কিছুটা সংশয় রয়েছে। কারণ তাদের মহাকাশযান উৎক্ষেপনে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান রকেট ল্যাব এর আগে কোন বাণিজ্যিক রকেট উৎক্ষেপন করেনি। যদি তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়,তা এক বিরাট মাইলফলক সৃষ্টি করবে। কে জানে ভবিষ্যৎ কি নিয়ে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য? হয়ত একদিন ব্যক্তিগত রকেটে চড়ে আমাদের মতই সাধারণ কোন মানুষ ঘুরে বেড়াবে চাঁদের মাটিতে।