ক্যান্সার কোষগুলো কেমোথ্যারাপি ফাঁকি দেয় চর্বি কোষে লুকিয়ে

0
550

নতুন একটি গবেষণা বলছে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ক্যান্সার কোষগুলো দেহের চর্বিকোষের ভেতর আশ্রয় নিতে পারে। ক্যান্সার কোষ নিধন করার জন্য প্রদান করা কেমোথেরাপি থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তারা চর্বির কোষের আবরণকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। লিউকেমিয়া রোগ নিয়ে গবেষণা করার সময় যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী দেখতে পান ইঁদুরের লিউকেমিয়া স্টেম কোষগুলো দেহের চর্বিকোষের অভ্যন্তরে নিজেদের লুকিয়ে রাখার আস্তানা গড়ে তোলে। এমতাবস্থায় কেমো থেরাপি প্রদান করা হলে চর্বির কোষগুলো এদের জন্য বাধা হিসেবে কাজ করে। অনেকটা ডাকাতের গোপন আস্তানার মতো। সারাদিন ক্ষতি করে বেড়াবে কিন্তু বিপদ দেখলে দূরের পাহারে গুহায় চুপটি মেরে বসে থাকবে।

উল্লেখ্য অস্ত্রোপচার বা রেডিওথেরাপি যখন কাজ করে না তখন ক্যান্সার নিরাময় করতে কেমোথেরাপি প্রদান করা হয়। কেমোথেরাপি মূলত একধরনের সাইটোটক্সিক (কোষ বিরোধী বিষ) যা ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়। এই থেরাপি প্রয়োগ করলে ক্যান্সার কোষের পাশাপাশি সাধারণ কোষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার কারণে এই ট্রিটমেন্ট গ্রাহকের চুল পড়তে দেখা যায়।

আর লিউকেমিয়া হচ্ছে রক্ত কোষের ক্যান্সার। এই রক্তকোষগুলো হাড়ের মজ্জা থেকে জন্ম নেয়। কেমোথেরাপির মাধ্যমে এই ধরনের ক্যান্সারগুলোর আরোগ্য লাভ করার হার কম।

শুধু প্রাচীর বা দেয়াল হিসেবেই নয়, নিজেদের জন্য অতিরিক্ত শক্তির যোগান দিতেও চর্বির মজুদের কাছে ঘেঁষে ক্যান্সারের কোষগুলো। ক্যান্সার দূর করার জন্য গবেষকরা যখন কেমোথেরাপি প্রদান করলেন তখন দেখতে পেলেন কিছু ক্যান্সার কোষ কেমোথেরাপির সাথে লড়াই করে টিকে থাকার জন্য চর্বি কোষের ফ্যাটি এসিডকে নিজেদের অতিরিক্ত শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে। চর্বি কোষের বাইরে অবস্থিত ক্যান্সার কোষ আর ভেতরে অবস্থিত কোষের তুলনামূলক কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে আসেন। পরবর্তীতে মানুষের বেলাতেও একই রকম ফলাফল দেখতে পান। গবেষকরা বলছেন এই পরীক্ষার মাধ্যমে পরিষ্কার হলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেন ক্যান্সারকে কোনোভাবেই নিরাময় করা যায় না।

চর্বি কোষে শুধু লুকিয়েই থেকেই ক্ষান্ত দেয় না, লুকিয়ে থাকার সময় চর্বি কোষগুলোকে এমনভাবে অভিযোজিত করে যেন তা তাদের দেয়ালের জন্য অধিক বাধা হিসেবে কাজ করতে পারে। lipolysis নামে একটি জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা এই কাজটি করে থাকে। গবেষক ক্রেইগ জর্ডান বলেছেন “এর পেছনের জীববিজ্ঞানটি চমৎকার। তারা নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে চর্বিকে পরিবর্তিত করতে রসদ যোগাচ্ছে।”

আবরণের ভেতরে কেমোথেরাপি কাজ করে না।
চর্বির আবরণের ভেতরে কেমোথেরাপি কাজ করে না।

University of Colorado Cancer Centre এর একদল বিজ্ঞানী ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করে এই বৈশিষ্ট্যটি খুঁজে পেয়েছেন। তাদের কাজের বিবরণ দিয়ে Cell Stem Cell জার্নালে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন।

লিউকেমিয়া ক্যান্সারের এই দিকটি ক্যান্সার চিকিৎসাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিছু কিছু রোগীকে কোনোভাবেই কেন আরোগ্য লাভ করানো যায় না তার ব্যাখ্যা পাবার পাশাপাশি তার চিকিৎসা পদ্ধতি কীভাবে করতে হবে তার ধারণাও পাওয়া গেল। ভবিষ্যতে প্রতিষেধক তৈরি সময় এই দিকটাও গুরুত্ব দিতে হবে। এমনভাবে প্রতিষেধক তৈরি করতে হবে যেন চর্বি কোষের ভেতরে গিয়েও ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে পারে।

-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.