মানুষ এখনো বিবর্তিত হচ্ছে বলে গবেষণায় প্রকাশ

0
862

প্রজাতি হিসেবে হোমো স্যাপিয়েন্স তথা মানুষের বয়স মাত্র ২ লক্ষ বছর। এই হিসেবে মানুষ এখনো বিবর্তিত হচ্ছে এটা খুব একটা অবাক করা খবর নয়, কারণ কোনো প্রাণীর উপর বিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া লক্ষ লক্ষ বছর ব্যাপী বিরাজ করতে পারে।

মানুষের বিবর্তন আসলে এখনো চলমান কিনা তা নিয়ে এতদিন ধরে বিতর্ক ছিল। এই বিতর্কে বিবর্তন না হবার পক্ষের পালাই ভারী ছিল। তাদের মতে আজ থেকে ৪০ হাজার বছর আগেই মানুষের শারীরিক বিবর্তন থেমে গেছে। মানুষের শারীরিক বিবর্তন প্রযুক্তিগত বিবর্তন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। কথাটা একটু কঠিন হয়ে গেল। অল্প কথায় পরিষ্কার করার চেষ্টা করি।

প্রজাতির বিবর্তন সাধিত হয় পরিবেশের তাগিদে। পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেবার জন্য পরিবেশ অনুসারে প্রজাতি বিবর্তিত হয়। যেমন কোনো ভৌগলিক অঞ্চলে যদি খুব গরম বিরাজমান থাকে তাহলে ঐ এলাকায় সেসকল মানুষেরাই টিকে থাকবে যাদের চামড়া সহনশীল তথা মোটা ও শক্ত। নাজুক ত্বকের অধিকারীরা লম্বা সময়ের স্কেলে বৈরি পরিবেশে ধীরে ধীরে অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে।

এমন পরিস্থিতিতে মানুষের কাছে যদি প্রযুক্তি থাকে তাহলে এমনটা নাও হতে পারে। যেমন মানুষের কাছে যদি ফ্যান বা তাপ নিয়ন্ত্রক থাকে তাহলে নাজুক ত্বকের মানুষেরাও কৃত্রিম যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে বৈরি পরিবেশে থাকতে পারবে। বৈরি অবস্থায় প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে নিজের শরীরের জন্য তথা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য কৃত্রিমভাবে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে নিবে। তার মানে পরিবেশের তাগিদ থাকা সত্ত্বেও মানুষ বিবর্তিত হচ্ছে না। প্রয়োজন অনুসারে নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি করে নিচ্ছে। এটাই বলছে প্রযুক্তিগত বিবর্তন এসে শারীরিক বিবর্তনকে থামিয়ে দিয়েছে।

তবে নতুন Proceedings of the National Academy of Sciences এ প্রকাশিত নতুন একটি গবেষণা বলছে আগের ধারণা সত্য নয়। মানুষ সত্যিকার অর্থে এখনো বিবর্তিত হচ্ছে।

অনেকগুলো দিক থেকে মানুষের স্থায়ী পরিবর্তন এসেছে। এদের মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয়টি হচ্ছে মানুষের ল্যাকটোজ হজম করার ক্ষমতা। ঐতিহাসিকভাবে মানুষ মায়ের বুকের দুধ খাওয়া ছেড়ে দেবার সাথে সাথে ল্যাকটোজ হজম করার ক্ষমতা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু মানুষ গরু ছাগল সহ অন্যান্য দুগ্ধ প্রদানকারী প্রাণী পালন করতে লাগলো, এবং তাদের দেয়া দুধ পান করতে লাগলো তখন থেকে ধীরে ধীরে মানুষের মাঝে ল্যাকটোজ হজম করার ক্ষমতা স্থায়ী হতে লাগলো। আজকের যুগে জরিপ চালালে দেখা যাবে পৃথিবীর প্রায় সকল এলাকার সকল মানুষই দুগ্ধজাত ল্যাকটোজ হজম করতে পারে। এটা মানবজাতির জন্য বিশাল এক অর্জন এবং উল্লেখযোগ্য বিবর্তন।

খালি গায়ে না থেকে শার্ট প্যান্ট পড়ছে বলে মানুষের বিবর্তন থেমে থাকেনি। মানুষ এখনো খালি গায়ের প্রাণীদের মতো বিবর্তিত হচ্ছে। ছবিঃ জর্জ ক্লার্ক।
খালি গায়ে না থেকে শার্ট প্যান্ট পড়ছে বলে মানুষের বিবর্তন থেমে থাকেনি। মানুষ এখনো খালি গায়ের প্রাণীদের মতো বিবর্তিত হচ্ছে। ছবিঃ জর্জ ক্লার্ক।

ল্যাকটোজ হজম করা ছাড়াও আরো অনেকগুলো নিয়ামকের উদাহরণ দেখিয়েছেন প্রকাশিত গবেষণাতে। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করার ক্ষমতা, উঁচু স্থানে নিম্ন অক্সিজেনে শারীরিক কার্যক্রম সচল রাখার ক্ষমতা, মস্তিষ্ক ছোট হবার উদাহরণ, নীল চোখের মানুষের উদাহরণ ইত্যাদি। তার উপর খুব সহজ একটা উদাহরণ দেয়া যায়, চীন বা জাপানের ১০০ বা ২০০ বছর আগের মানুষদের গড় উচ্চতা আর আজকের মানুষদের গড় উচ্চতা তুলনা করলে দেখা যাবে আজকের মানুষরা তাদের চেয়ে অনেক লম্বা। ঐ অঞ্চলের মানুষের জন্য এটা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

– সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.