অন্ধ ইঁদুরের দৃষ্টি ফিরিয়ে আনলেন বিজ্ঞানীরা

0
350

কিছু পরিমাণ ইঁদুরের মস্তিষ্কের সাথে চোখের সংযোগ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সংযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়াতে ইঁদুরগুলোর দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেল। বিজ্ঞানীরা বিশেষ উপায়ে মস্তিষ্কের সাথে চোখের স্নায়ুর সংযোগ ঘটিয়ে সেই ইঁদুরগুলোর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে এনেছেন। স্নায়ুর সংযোগ পুনঃস্থাপিত করে ইঁদুরের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনার ঘটনা এটাই প্রথম। কারণ এই পরীক্ষায় যে কাজটি করা হয়েছে, ধারণা করা হতো তা সম্ভব নয়।

সাধারণ কোষ যেমন বিভাজনের মাধ্যমে নিজেদের বৃদ্ধি করে চলে স্নায়ুর কোষগুলো সেরকম বিভাজিত হতে পারে না। তাই মস্তিষ্কের কোনো কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই ক্ষতি পূরণ হবার কোনো উপায় থাকে না। এতদিন পর্যন্ত ধারণা করা হতো মস্তিষ্কের স্নায়ুর সংযোগ বা এক্সন একবার নষ্ট হয়ে গেলে তা পুনরায় আর ঠিক করা যায় না। কিন্তু ইঁদুরকে নিয়ে করা এই পরীক্ষার মাধ্যমে গবেষকরা দেখিয়েছেন mTOR নামক এক প্রকার প্রোটিন অণুর মাধ্যমে এক্সনকে ক্রমবর্ধমানভাবে উদ্দীপিত করে গেলে তা এক্সনকে নতুনভাবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়ায় বিচ্ছিন্ন হওয়া সংযোগ অল্প অল্প করে ধীরে ধীরে সংযোগ লাভ করে।

দেখার শক্তি ফিরে আসার জন্য এই উদ্দীপনা যথেষ্ট নয়। অর্থাৎ এর ফলে যে পরিমাণে সংযোগ স্থাপিত হয় তা কেন্দ্রীয় মস্তিষ্কের সাথে তথ্য আদান প্রদানের জন্য অপ্রতুল। মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় অংশের সাথে চোখের স্নায়ুর সংযোগ স্থাপিত না হলে দৃষ্টিশক্তি পুনরায় স্থাপিত হবে না।

mTOR প্রোটিনের কার্যপ্রণালীকে মূল চাবিকাঠি হিসেবে ধরে নিয়ে গবেষকদল জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে তৈরিকৃত একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এই পদ্ধতির মাধ্যমে অধিক পরিমাণ mTOR প্রোটিন উৎপাদন করা হয়, যা রেটিনাল স্নায়ুর ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে অধিক পরিমাণ উদ্দীপনা প্রদান করে। অধিক উদ্দীপনার ফলে বলে যায় একধরনের চাপে পড়েই এক্সনের মাঝে সংযোগ স্থাপিত হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৩ সপ্তাহ সময় লাগে। এই সময়টিতে ইঁদুরদেরকে খাঁচায় রেখে কালো লাইনের প্রজেকশন দেখানো হয়, যা তাদের দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তিত অবস্থার সাথে ধীরে ধীরে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে।

অপটিক স্নায়ু কোষে এক্সনের পুনরায় সংযোগ স্থাপন। মেজেন্টা ও সবুজ রঙে চিহ্নিত।
অপটিক স্নায়ু কোষে এক্সনের পুনরায় সংযোগ স্থাপন। মেজেন্টা ও সবুজ রঙে চিহ্নিত।

ইঁদুরের দৃষ্টিশক্তি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। যে ইঁদুর নিয়ে তারা কাজ করছিলেন তারা ছিল অর্ধ অন্ধ। অর্থাৎ একটি চোখ ভালো। একটি চোখ ভালো থাকলে ইঁদুররা নষ্ট চোখকে বাদ দিয়ে দেয়। একদমই গণনার বাইরে নিয়ে যায়। সব কাজ ঐ একটি চোখ দিয়েই সম্পন্ন করে। তাই গবেষকরা বিশেষ প্রোটিন অণুর উদ্দীপনা প্রদান করলেও তার প্রভাব দেখতে পাচ্ছিলেন না। পরে ভালো চোখটাকে বন্ধ করে রেখে অনেকটা জোর করে অন্ধ চোখটিকে ব্যবহার করার জন্য নির্দেশনা দেন, এবং ইতিবাচক ফলাফল পান।

এক্সনের মাঝে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সংযোগ পুনরায় স্থাপনের এই এই ব্যাপারটি ইঁদুরের মাঝে করা হলেও এটি মানুষের কাজেও লাগতে পারে। মানুষের দৃষ্টিশক্তিতে প্রায়ই সমস্যা দেখা দেয়। এদের মাঝে যেগুলো এক্সনের সংযোগ সংক্রান্ত সমস্যা সেগুলোকে হয়তো এই পদ্ধতির মাধ্যমে সমাধান করে ফেলা যাবে। এমন ধরনের গবেষণার মাধ্যমেই তো এগিয়ে যায় চিকিৎসাবিজ্ঞান।

– সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.