পিইটি (PET) জাতীয় প্লাস্টিকগুলো বোতল ইত্যাদি তৈরিতে বহুল ব্যবহৃত এবং এগুলো অতিমাত্রায় স্থিতিশীল হওয়ায় পরিবেশগতভাবে বিপত্তিকর মনে করা হয়। তবে সম্প্রতি গবেষকগণ এধরনের প্লাস্টিকের মোকাবেলায় একধরনের নতুন অণুজীব আবিষ্কার করেছেন যেগুলো খুব চমৎভাবে এইসব প্লাস্টিক খেয়ে ফেলতে পারে!
ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর সারা বিশ্বব্যাপী ৩৪২ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয় এবং এর মাত্র ১৪ শতাংশ পুনর্প্র্ক্রিয়াজাত (recycle) করা হয়। অধিকাংশ প্লাস্টিকই অতিধীরে ভাঙ্গতে থাকে কিন্তু পিইটি (পলিইথিলিন টেরেপথ্যালে্ট এর সংক্ষিপ্ত রূপ) এমনকি যাবতীয় প্লাস্টিকের চেয়ে আরো বেশী স্থিতিশীল এবং গবেষকদের মতে ২০১৩ সালে কেবল এই প্লাস্টিকটিই উৎপাদিত হয়েছে ৬১ মিলিয়ন টন।
ইতিপূর্বে কেবলমাত্র বিরল একপ্রজাতির ছত্রাকই ছিলো যা এই প্লাস্টিকটিকে পঁচাতে পারত। এই অবস্থায় বর্তমানে জাপানের একদল বিজ্ঞানী এই ব্যাক্টেরিয়া আবিষ্কার করলেন যেগুলো এই দৃঢ় প্লাস্টিকটিকে পচিয়ে দিতে পারে। জাপানের কিয়োতো ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির একজন ফলিত মাইক্রোবায়োলজিস্ট এবং এই গবেষণার সহ-গবেষক কোহেই ওদা বলেন, “এই ব্যাক্টেরিয়াই প্রথম নমুনা যা পিইটি সম্পূর্ন ভেঙ্গে কার্বন-ডাইঅক্সাইড ও পানিতে পরিণত করে।”
গবেষকগণ মাটি এবং প্লাস্টিক বোতল পুনরুৎপাদন কারখানা থেকে পিইটির আবর্জনার ২৫০ টি নমুনা সংগ্রহ করেন। তাঁরা ব্যাক্টেরিয়া খোঁজার জন্য এই নমুনাগুলো স্ক্যান করেন। তাঁরা এসবের মধ্য থেকে একটি ব্যক্টেরিয়া খুঁজে পান যার নাম দেওয়া হয় ideonella sakaiensis 201-F6, যা পিইটির একটি পাতলা পর্দাকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ছয় সাপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি ভেঙ্গে ফেলে। গবেষকগণ ধারণা করেন এসব কোষের কোনো অঙ্গানু নিশ্চয়ই এমন কোনো যৌগ নিঃসরণ করে যা প্লাস্টিককে গলিয়ে দেয়।
জিনগত এবং জৈবরসায়নগত বিশ্লেষণ থেকে প্লাস্টিক গলিয়ে দেওযার কাজে নিয়োজিত দুটি এনজাইম সনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে একটি এনজাইম প্লাস্টিক ও পানির বিক্রিয়ায় একটি মধ্যবর্তী যৌগ উৎপাদন করে এবং অপর এনজাইমটি পিইটিকে এর মূল সরল যৌগে পরিণত করে। এই আবিষ্কার বাস্তবিকভাবে বহুবিধ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা সম্ভব কেননা বিভিন্ন সরঞ্জামের মধ্যে ছত্রাকের চেয়ে ব্যাক্টেরিয়া অনেক সহজে প্রবিষ্ট করা যায়। ওদা বলেন, “আমরা বিপুল সংখ্যক পিইটিকে রূপান্তর করার একটি সহজ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারব বলে আশা করি।” ভবিষ্যতে গবেষকগণ এই অনুজীবগুলোর ক্ষমতা আরো উন্নত করতে পারার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ওদা বলেন, “এই এনজাইমগুলো কিভাবে বিবর্তত হলো তা অজানা এবং এদের সবচেয়ে নিকস্থ এনজাইমগুলোর সাথে এদের মিল সামান্যই”। গবেষকগণ তাঁদের গবেষনা ১০ মার্চ সায়েন্স জার্নালে প্রকাশ করেন।
⚫ বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক