বিজ্ঞান পত্রিকা

জলবায়ু পরিবর্তনে ছোট হয়ে আসছে মাছের আকার

বেশ কিছু বছর ধরে জেলেরা বলে আসছেন মাছের আকার হ্রাসের কথা। এই পর্যবেক্ষণের সত্যতা নিরুপিত হয় ২০১৪ সালে এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দেখা যায় বিগত ৪০ বছরে উত্তর সাগরের বেশ কিছু মাছের মজুদে মাছের আকার ক্রমাগত কমে আসছে।

গ্লোবাল চেঞ্জ বায়োলজি জার্নালে সাম্প্রতিক প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে মাছের এই আকার হ্রাসের একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে। এই গবেষণার নেতৃস্থানীয় গবেষক ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ড্যানিয়েল পলি জানিয়েছেন কানকোযুক্ত (gills) প্রানী তথা মাছ, হাঙ্গর, স্কুইড এবং গলদা চিংড়ির মধ্যেই মূলতঃ এধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কানকোর মাধ্যমে এই প্রানীগুলো অক্সিজেন গ্রহন করে।

পলির সহগবেষক উইলিয়াম চেউঙ ব্যাখ্যা করেছেন এই প্রানীগুলো শীতল রক্ত বিশিষ্ট। অর্থাৎ এদের শারীরিক তাপমাত্রা পরিবেশের সাথে ওঠানামা করে। যদি মহাসমুদ্রের তাপমাত্রা বেড়ে যায় তাহলে এদের শরীরেরও তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। যদি তাপমাত্রা মাছের সহনীয় মাত্রার মধ্যে থাকে তাহলে এই বৃদ্ধির কারণে তাদের শরীরের জৈবরাসায়নিক তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে এবং এর ফলে শরীরের শারীরবৃত্তীয় কর্মকান্ডের হারও বেড়ে যাবে।

শারীরবৃত্তীয় কর্মকান্ডের হারের সাথে শরীরের অক্সিজেন গ্রহণের পরিমান সম্পর্কিত। এবং স্বাভাবিকভাবে মাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এবং আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে এর অক্সিজেন গ্রহনের পরিমান বৃদ্ধি পায়। এই পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের গ্রহনের পরিমান কমিয়ে রাখা সম্ভব যদি মাছের শরীরের আকার সীমিত রাখা যায়। শরীরের আকার সীমিত থাকলে শারীরবৃত্তীয় কর্মকান্ডের হার বৃদ্ধি পেলেও সার্বিকভাবে মাছের অক্সিজেনের চাহিদার লাগাম টেনে ধরা যাবে।

কেউ কেউ হয়তো ভাবছেন মাছের অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে পানি হতে অধিক হারে অক্সিজেন গ্রহন করলেইতো চলে। কিন্তু এতেও সমস্যা আছে যার ব্যাখ্যা গবেষকগণ দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন মাছের কানকো, শরীরের অনুপাতে একই হারে বাড়ে না। কানকো কাজ করে পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল অনুযায়ী। একটি বস্তুর দৈর্ঘ্য যদি দ্বিগুণ করা হয় তাহলে প্রস্থ বাড়বে চারগুণ আর আয়তন বাড়বে আটগুণ। আয়তনের তুলনায় কানকো-পৃষ্ঠের আকার হবে বেশ কম। ফলে কানকোর মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত বেশী অক্সিজেন গ্রহনের উপায় হলো সার্বিকভাবে প্রানীর আয়তন কমিয়ে ফেলা। [livescience অবলম্বনে]

-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক

Exit mobile version