বিজ্ঞান পত্রিকা

আপনার মাত্রাতিরিক্ত কফিপানের জন্য ডিএনএ দায়ী!

আমাদের প্রত্যেকেরই কফি পানের অভ্যাসে ভিন্নতা রয়েছে এটা কোন অজানা বিষয় নয়। কারও কাছে এই কফি পানের কোনো লাগাম নেই আবার কেউ কেউ সারা দিনে এক কাপেই সীমাবদ্ধ থাকেন অথবা একবারও খান না। তবে বিজ্ঞানীদের কাছে আপনার এবং কফি পান করার মাঝের সম্পর্কটা ব্যাখ্যা করার একটি উপায় রয়েছে। হয়তো জিনের বৈচিত্র্যের প্রভাবে শরীরের ক্যাফেইন ভেঙ্গে আমাদেরকে চাঙ্গা করা এসব পানীয় কম বা বেশি পান করার ব্যাপারে উৎসাহিত করার জন্য দায়ী হতে পারে।

যুক্তরাজ্যের এডেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন, যে সকল মানুষের জিনে PDSS2 নামে একপ্রকার ডিএনএ-র বিভিন্নতা রয়েছে তারা কম কফি পান করেন তাদের তুলনায় যাদের এই জিনে  ভিন্নতা নেই। বিষয়টি এমন দাড়াচ্ছে জিনের ভিন্নতাই শরীরের ক্যাফেইন কার্যক্রমের গতি ধীর করে।

প্রজননবিদ্যা বিশেষজ্ঞ নিকোলা পিরস্তু টাইম-কে বলেন, “ধারণা করা হচ্ছে যেসকল মানুষ এধরনের জিনের অধিকারী তাদের বিপাক ক্রিয়া ক্যাফেইনকে ধীর করে ফলে তারা কম কফি পান করে। ক্যাফেইনের ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার জন্য তারা কম ক্লান্তি বোধ করে এবং বেশি সজাগ থাকে এজন্য তাদের কম কফি পান করতে হয়।”

গবেষকগণ দক্ষিণ ইতালির ছোট্ট এক গ্রামে বসবাসরত ৩৭০ জন মানুষের জেনেটিক গঠনপ্রণালী দেশের উত্তর-পূর্ব এলাকায় বসবাসরত ৮৪৩ জন মানুষের ডিএনএর সাথে তুলনা করে দেখেছেন। অংশগ্রহণকারীদের উপর একটি জরিপ চালানো হয়েছিলো তাতে তারা সারাদিন কি পরিমাণ কফি পান করেছে সে প্রশ্নটাও ছিল। তাঁরা দেখতে পান যেসকল অংশগ্রহণকারীর জিনে PDSS2 ভিন্নতা রয়েছে তারা দৈনিক এক কাপ কফি কম পান করেছে।

যখন বিজ্ঞানীরা এই ফলাফল নেদারল্যান্ডের ১,৭৩১ জন মানুষের উপর প্রতিস্থাপন করেন তাঁরা একইরকম ফলাফল দেখতে পান। ডিএনএতে ভিন্নতা থাকার কারণে তারাও কম কফি পান করেন। যদিও এক্ষেত্রে পান করা কফির কাপের সংখ্যা কম ছিলো। গবেষকরা ইতালীয় এবং ডাচদের ভোগের পরিমাণ লক্ষ্য করেন, দেখা যায় ইতালীয়রা ডাচদের থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট কাপে কফি পরিবেশন করেন। আর সাধারণতই বড় কাপগুলোতে বেশি পরিমাণ কফি থাকে।

পিরস্তু দি টেলিগ্রাফ-কে বলেন, “আমি মনেকরি এই গবেষণাটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন, অভ্যাস এসবের উপর জেনেটিক্স এর একটি বিশেষ প্রভাব রয়েছে তার ধারণাকে সমর্থন করে এবং এটা মানুষের আচরণ কেমন হয় শুধু বুঝতেই সাহায্য করে না বরং কেন করে সেটাও বুঝতে সাহায্য করে। এই নির্দিষ্ট ঘটনায় মনে হচ্ছে ক্যাফেইনই যে কফি পান করার প্রধান জৈবিক চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সে ধারণাকে সমর্থন করে।”

এটাই প্রথমবার নয়, গবেষকরা এর আগেও আমাদের কফি পান করা এবং জেনেটিক কোডের মাঝে বিদ্যমান সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। ২০১৪ সালে ১২০,০০০ জন মনুষের অংশগ্রহণে একটি বড় গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছিল এবং তাঁরা দেখতে পেয়েছিলেন জিনের ভিন্নতা মানুষকে পরিমিত কফি পানে উৎসাহিত করে। আর এটা নির্ভর করে কত দক্ষভাবে তাদের শরীরের বিপাক ক্যাফেইন প্রক্রিয়াকরণ করে ফলে পান করা থেকে অনুকূল ফলাফল আসে।

আরও গবেষণালব্ধ তথ্যের প্রয়োজন পড়বে এই আবিষ্কার যাচাই করার জন্যে। কিন্তু আমরা আমাদের কফি এবং ডিএনএ-র মধ্যে যত বেশি সম্পর্ক জানতে পারবো ততোই ভালো হবে। যেহেতু এটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

পিরাস্তু বলেন, “আমাদের গবেষণার ফলাফল বিদ্যমান গবেষণার সাথে একত্রিত হয়ে এই নির্দেশ করছে যে, আমাদের কফি খাওয়ার জন্য অগ্রসর হওয়ার কারণ আমাদের জিনের সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকতে পারে। আমাদের আরো বড় গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে এই আবিষ্কারটি নিশ্চিত করার জন্যে এছাড়াও, PDSS2 এবং কফি পান করার মাঝে কোন শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে কিনা সেটাও নিশ্চিত হতে হবে।”

-শফিকুল ইসলাম

Exit mobile version