বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গ্রস মাইকেল নামে একটি মিষ্টি মাখনের মতো কলা সারা পৃথিবীতে প্রচলিত ও জনপ্রিয় ছিলো। এটি মূলতঃ ল্যাটিন আমেরিকায় চাষ হতো, কিন্তু সময়ের সাথে হারিয়ে যায়। সেই সময় সারা পৃথিবীতে এটিই একমাত্র কলা ছিলো যেটি রপ্তানী হতো। দুর্ভাগ্যের বিষয়, উনিশ শতকের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়ায় পানামা ডিজিজ নামের এক প্রকারের ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, যা কয়েকযুগ পরে মহাদেশ পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় পৌঁছায় এবং কলা গাছে আক্রমন করে ফল ধরার আগে একে দুর্বল করে দেয়। এটি এতোই ক্ষতিকর এবং ত্বরিত আক্রমনকারী ছিলো যে কয়েক যুগের মধ্যে গ্রস মাইকেল জাতের কলাটিকে দুনিয়া থেকেই তুলে দেয়।
বর্তমানে অর্ধশতাব্দী পরে এই ছত্রাকের নতুন একটি প্রকরণ গ্রস মাইকেল কলার স্থলাভিষিক্ত এবং বর্তমানে সবচেয়ে বহুল প্রচলিত ক্যাভেন্ডিস জাতের কলাটিকে হুমকীর মুখে ফেলে দিয়েছে। ক্যাভেন্ডিস বর্তমানে যাবতীয় কলার মধ্যে ৯৯% বাজার দখল করে আছে। এবং সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো ছত্রাকটিকে আটকানোর উপায় এখন পর্যন্ত কারো জানা নেই।
PLOS Pathogens নামক জার্নালে প্রকাশিত এই বিষয়ক একটি গবেষনাপত্রের এটি ছিলো উপসংহার। যেখান থেকে এই বিষয়টির সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয় যা নিয়ে কৃষিবিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে ভয় পেয়ে আসছিলেন। এই নতুন প্রকরণের ছত্রাকটি ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের কলাাগাছে আক্রমন করেছে এবং Tropical Race 4 এই প্রকরণটি আগের ছত্রাকটির চেয়ে অনেক বেশি বিধ্বংসী।
সুস্পষ্টভাবে বললে, গবেষকগণ অর্ধশতাব্দি আগে দক্ষিন পূর্ব এশিয়ায় উৎপন্ন হওয়া ছত্রাকের এই প্রকরণটি এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং অস্ট্রেলিয়া অতিক্রম করে ল্যাটিন আমেরিকায় পৌঁছের যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করছেন। এখানেই বিশ্বের অধিকাংশ কলা উৎপাদন হয়। তাঁরা বলছেন, এই পর্যায়ে এসে Tropical Race 4 ল্যাটিন আমেরিকায় হামলে করবে কিনা সেই প্রশ্ন অবান্তর হয়ে পড়েছে। বরং প্রশ্নটি হওয়া উচিৎ এটি ঠিক কখন আঘাত হানবে।
মূলরোগটি এবং নতুন প্রকরণের ছত্রাকটির এতটা হুমকী হয়ে ওঠার কারণ কলার চাষ পদ্ধতি। যখন সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন স্থানে একই সাথে ডজনেরও বেশী বিভিন্ন ধরনের কলার চাষ করা হয় তখন বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে কেবল এক জাতের কলাই চাষ হচ্ছে। এই একজাতের কলা চাষে বাণিজ্যিক কোম্পানীগুলো কলার যথাযথ মান নিশ্চিত রাখতে পারে এবং সস্তায় অধিক হারে উৎপাদন করতে পারে। এই কারণেই কলা সর্বত্র সহজলভ্য হয়। কিন্তু এর ফলে কলা রোগ-জীবানুর হুমকীর মুখেও পড়ে যায়। যখন কোনো জমিতে একটিই এবং একজাতেরই ফসল চাষ করা হয় তখন শস্য রোগের প্রতি উন্মুক্ত হয়ে পড়ে যার কোনো প্রতিকার সেই শস্যের থাকে না।
আইরিশ গোলআলুর মড়ক মনোকালচার বা একক চাষের ভয়াবহতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ঊনিশ শতকে আইরিশ চাষীরা একটি মাত্র প্রকরণের আলুর প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং দেশব্যাপী চাষ করতে থাকেন। কিন্তু সেই সময় একটি ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে এই হিতে বিপরীত হয় এবং কোনো ধরনের প্রতিরোধ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। পুষ্টির জন্য অতিমাত্রায় আলুর উপর নির্ভরশীল এই দেশটিতে ১৮৪৬ সালে আলুর উৎপাদন ভয়াবহভাবে ব্যাহত হয় এবং ফলস্বরুপ কয়েকলক্ষ লোকের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা