কিছুদিন আগে নিউ হরাইজন মহাকাশযান প্লুটোর খুব কাছ দিয়ে উড়ে যায় এবং আমাদেরকে প্লুটোর ছবি তুলে পাঠায়। এর আগ পর্যন্ত প্লুটোর স্পষ্ট কোনো ছবি ছিল না, নিউ হরাইজন মহাকাশযানের মাধ্যমে তোলা ছবিতে অধিকতর স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়। প্লুটো মিশন শেষ হবার সাথে সাথেই শেষ হতে পারতো নিউ হরাইজনের মিশনের সমাপ্তি। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে এই মহাকাশযান থেকে কিছুটা ‘বোনাস’ সুবিধা পাওয়া যাবে এবার। নাসা অফিসিয়ালি জানিয়েছে প্লুটোর চেয়েও অনেক দূরে কুইপার বেল্টের একটি গ্রহাণু হবে নিউ হরাইজনের পরবর্তী লক্ষ্য।
১ জানুয়ারি ২০১৯ সালেই পৌঁছে যাবে ঐ গ্রহাণুতে। গ্রহাণুটিকে 2014 MU69 বলে ডাকা হচ্ছে। বরফে গঠিত ঐ গ্রহাণুটির বেধ ২০-৩০ কিলোমিটারের মতো। এটি প্লুটো থেকেও ১ বিলিয়ন মাইল (১.৬ বিলিয়ন কিলোমিটার) দূরে অবস্থিত।
নিউ হরাইজনকে নতুন এই মিশনে নামানোর খবরটা প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ পৃথিবী থেকে এত অর্থ ব্যয় করে এত বছর লাগিয়ে এবং এতগুলো বিজ্ঞানী ও লোকবল ব্যবহার করে একটি মহাকাশযান যদি পাঠানো হয় তাহলে এটিকে যত বেশি সম্ভব ব্যবহার করা উচিৎ। এর কাছ থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ উপযোগ বের করে আনা দরকার। আর যাই হোক, এমন ধরনের মহাকাশযান তো আর দুই দিন পর পর পাঠানো যায় না।
নাসার প্ল্যানেটারি সায়েন্স এর পরিচালক জিম গ্রিন এক বিবৃতিতে বলেন- “প্লুটোর লক্ষ্যে নিউ হরাইজনের মিশন আমাদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি এর পাঠানো ছবি এখনো বার বার বিজ্ঞানীদের চমৎকৃত করছে। এই মহাকাশযানটিকে তার পথের দিকেই এগিয়ে যেতে দিচ্ছি, এতে করে একটি গ্রহাণুর খুব কাছ দিয়ে উড়ে যেতে পারবে এটি। আমরা যখন এই যানটিকে মহাকাশের মহাকাশের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করি তখন এমন কিছু হবে ভাবনায় ছিল না, এমনকি ঐ গ্রহাণুটি তখন আবিষ্কৃতই হয়নি।”
প্লুটোকে পেরিয়ে যাবার পরপরই বিজ্ঞানীরা এটিকে আরো বর্ধিতভাবে ব্যবহার করার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকেন। কর্তৃপক্ষের কাছে এটি নিয়ে আবেদন করেন। তারা এমন একটি অবস্থানে থাকা গ্রহাণুকে বেছে নেয় যেখানে পৌঁছতে হলে যে পরিমাণ জ্বালানী অবশিষ্ট আছে তা দিয়েই করা সম্ভব হয়। সব দিক বিবেচনা করে বিজ্ঞানীরা 2014 MU69 গ্রহাণুকে বেছে নিয়েছেন।
এটিই শুধু সুখবর নয়। নাসা কর্তৃপক্ষ আরো বর্ধিত সাতটি মিশনের অনুমোদন দিয়েছে। বর্ধিত মিশনের মাঝে নিউ হরাইজনের পাশাপাশি মঙ্গলের রোভার ‘অপরচুনিটি’ ও ‘কিউরিউসিটি’ও আছে। নিউ হরাইজনও তার যাত্রাপথে পরোক্ষভাবে আরো প্রায় দুই ডজন গ্রহাণু ও অন্যান্য বস্তুর ছবি তুলবে ও তথ্য সংগ্রহ করবে। অর্থাৎ খুব দূর থেকে তাদের ছবি তুলে পাঠাবে। এর মাঝে আছে প্লুটোর সমান আরেক বামন গ্রহ এরিস। এটি থেকে এরিসের যে ছবি পৃথিবীতে পাঠাবে তা দূর থেকে হলেও তুলনামূলকভাবে অনেক উন্নত হবে। পৃথিবী থেকে শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়েও সন্তোষজনক মানের পরিষ্কার ছবি নেই এরিসের। তাই দূর থেকে হলেও যা পাওয়া যাবে তা-ই তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো মানের।
– সিরাজাম মুনির শ্রাবণ