বোস্টনের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা এমন একধরনের ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন যাদের টিকে থাকার জন্য মস্তিষ্ক-নিঃসরিত রাসায়নিক পদার্থের প্রয়োজন হয়। এই প্রজাতির ব্যাকটেরিয়াগুলো গামা এমিনোবিউটাইরিক এসিড বা GABA নামক এক ধরনের রাসায়নিক অণু গ্রহণ করে যা মস্তিষ্ক থেকে নিঃসরিত হয়। এই রাসায়নিক অণুগুলো নিঃসরিত হলে মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা থাকে।
ব্যাকটেরিয়ার মস্তিষ্কজাত উপাদান গ্রহণের আবিষ্কার একটি বিশেষ দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দিন ধরেই বিজ্ঞানীরা জানতেন যে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ারা মানসিক পারফরমেন্সে ভূমিকা রাখে। তারা এমন কিছু করে যার কারণে মানসিক চিন্তাধারায় প্রভাব পড়ে। পেটে লক্ষ লক্ষ ব্যাকটেরিয়া বাস করে, তাদের কেউ উপকারী কেউ অপকারী। মানবদেহ বা মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালীতে প্রভাব বিস্তার করার মতো কিছু এদের পক্ষে থাকার কথা নয়। কিন্তু তারপরেও এদের মাঝে কোনো কোনোটি এই কাজটি করতে পারছে। কিন্তু ঠিক কেন ও কীভাবে এই প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হচ্ছে সে জিনিসটা পরিষ্কার ছিল না বিজ্ঞানীদের কাছে। নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার ব্যাকটেরিয়া ও মানসিক পারফরমেন্সের মাঝে সম্পর্কের রহস্য উদঘাটনে সাহায্য করতে পারে।
গবেষক দলের প্রধান ফিলিপ স্ট্রান্ডউইজের নেতৃত্বে একদল গবেষক KLE1738 নামের এক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার মাঝে এই বিশেষ দিকটি আবিষ্কার করেন। আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজির বার্ষিক সম্মেলনে গবেষক ফিলিপ তার আবিষ্কার উপস্থাপন করেন। ঐ বক্তৃতায় তিনি জানান “GABA অণু ব্যতীত অন্য কোনোকিছু ব্যবহার করে টিকে থাকতে পারে না”।
GABA অণু নিঃসরিত করার মাধ্যমে মস্তিষ্ক নিজেকে ঠাণ্ডা রাখে যা মানসিক পারফরমেন্স তথা মস্তিষ্কের কার্যকরীতার সাথে সম্পর্কযুক্ত। অন্যদিকে KLE1738 ব্যাকটেরিয়াগুলো টিকে থাকতে ও বংশবিস্তার করতে GABA অণুর দরকার। এমনও হতে পারে KLE1738 ব্যাকটেরিয়াগুলো এমন একটা প্রক্রিয়া তৈরি করে নিয়েছে যার মাধ্যমে ঐ বিশেষ রাসায়নিক পদার্থটি নিঃসরণের জন্য মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করতে পারে। এজন্যই হয়তো বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছিলেন ঐ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়াগুলোর স্বল্পতা দেখা দিলে তা মানসিক পারফরমেন্সের উপর প্রভাব ফেলে। এর স্বল্পতা মাঝে মাঝে এমনকি ডিপ্রেশনের জন্ম দেয়।
২০১১ সালে করা স্বতন্ত্র একটি গবেষণায় দেখা যায় ল্যাকাটোবেসিলাস র্যামনোসাস (Lactobacillus rhamnosus) নামক ভিন্ন এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ইঁদুরের মস্তিষ্কে GABA অণুর কার্যক্রম পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। পাশাপাশি ক্লান্তির অনুভূতির মাঝেও গোলযোগ বাধিয়ে ফেলতে পারে। তারা দেখেছেন সার্জারির মাধ্যমে ইঁদুরের মস্তিষ্ক থেকে যদি ভেগাস স্নায়ুকে সরিয়ে ফেলা হয় তাহলে এই প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া মস্তিষ্কে আর কোনো প্রভাব রাখতে পারে না। ভেগাস স্নায়ু আবার দেহের অন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত। অন্ত্র সম্পর্কিত শারীরবৃত্তীয় তথ্যের আদান প্রদান এই স্নায়ুর মাধ্যমে হয়। তারমানে এই পরীক্ষার মাধ্যমে কিছুটা আভাস দিচ্ছে অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া ভেগাস স্নায়ুকে ব্যবহার করে পরোক্ষভাবে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করতে পারবে।
মানুষের অন্ত্রের KLE1738 ব্যাকটেরিয়াও হয়তো এরকমই কোনো প্রক্রিয়া ব্যবহার করে মানসিক কার্যক্রমে প্রভাব রাখে। এটি নিয়ে গবেষকরা এখনো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফিলিপ স্ট্রান্ডউইজ এই ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি আরো ব্যাকটেরিয়ার খুঁজে চলছেন যারা বেঁচে থাকার জন্য মস্তিষ্ক-নিঃসরিত উপাদান ব্যবহার করে। আশা করা যায় অচিরেই এর একটা কিনারা হবে এবং এই সমাধানকে ধরে এগিয়ে গেলে অনেক মানসিক ও মস্তিষ্ক সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসা করা সহজ হবে। [New Scientist, Rawstory অবলম্বনে]
-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ