বিজ্ঞান পত্রিকা

ক্রমশঃ ক্ষয়পূরণ হচ্ছে ওজোন স্তরের

ত্রিশ বছরের নিরলস পর্যবেক্ষন শেষে অবশেষে বিজ্ঞানীরা দক্ষিন গোলার্ধের ওজন স্তরের ছিদ্র নিরাময়ের যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন।

১৯৭৪ সালে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া আরভাইনের দুজন রসায়নবিদ মারিও মলিনা ও শেরউড রোল্যান্ড ক্লোরো-ফ্লুরোকার্বন (CFC) যৌগসমূহের মাধ্যমে ওজোন স্তরের হুমকীর বিষয়ে নেচার জার্নালে প্রথম বিস্তারিত গবেষনা প্রকাশ করেন। সেই সময়ে CFC যৌগসমূহ যথেচ্ছভাবে স্প্রে বোতল এবং বিভিন্ন রেফ্রিজারেটর ও শীতাতপ যন্ত্রে হিমায়ক হিসেবে ব্যবহার করা হতো এবং এর ফলে এগুলো সহজেই বায়ুমন্ডলে জমা হয়ে যেত।

এই ভুমিধ্বস গবেষণার কারণে ১৯৯৫ সালে তাঁদেরকে নোবেল পুরষ্কারে ভুষিত করা হয়- যেই গবেষণার উপসংহার ছিলো স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার তথা ওজোন স্তরের একটি সসীমসংখ্যক ক্লোরিন পরমাণু ধারন করার ক্ষমতা আছে। এই ঘটনার পরে বিভিন্ন রাসায়নিক কারখানার তীব্র আক্রমন ও সমালোচনা সহ্য করার পর মলিনা ও রোল্যান্ড দীর্ঘ ১১ বছর পর প্রাপ্য স্বীকৃতি পেয়েছিলেন যখন ইংল্যান্ডের একদল বিজ্ঞানী তাঁদের গবেষনার যথার্থতা উপলব্দি করলেন এবং দেখলেন: CFC এর নির্গমনের কারণে ওজোন স্তরে একটি ফুটো তৈরি হয়ে গেছে। রক্ষাকারী ওজোন স্তরের ক্ষতিতে মানুষ ও অন্যান্য প্রানীর ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

বর্তমানে, MIT’র বায়ুমন্ডলীয় রসায়নের অধ্যাপক সুসান সোলোমনের নেতৃত্বে গবেষকদল ওজোন স্তরের নিরাময়ের বেশ কিছু আলামত খুঁজে পেয়েছেন। তাঁদের প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত এই সাপ্তাহের সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবছরই অ্যান্টার্কটিকার উপরে ওজন স্তরে ছিদ্র তৈরি হয় যা আগষ্ট মাসে শুরু হয় এবং অক্টোবরে সর্বোচ্চ হয়। সোলোমনের দল বেলুন ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেপ্টেম্বরের ওজোন স্তরের তথ্য সংগ্রহ করে এবং পরবর্তীতে সিমুলেশন করে দেখে এবং স্তরের আকার অনুমান করে।

সোলোমনের দল দেখতে পেয়েছে যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিনের বসন্তের পূর্বে ওজন স্তরের ফুটো ন্যুনতম মান ১২ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটারের মাত্রা অতিক্রম করছে না, যা থেকে বোঝা যায় সেপ্টেম্বরে ফুটোটির আকার হ্রাস পাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, গবেষকগন মনে করছেন ওজোনের ফুটোটি চার মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার পরিমান সংকুচিত হয়েছে। তার ওপর, ফুটোর গভীরতাও আগের মতো নেই, বরং হ্রাস পেয়েছে।

সোলোমন বলেন, “ওজন স্তরের ফুটোটি বছরের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দেরিতে খুলছে এটাই আসল কথা। এটি দেরিতে খুলছে, আগের চেয়ে ছোট এবং এর গভীরতাও কমে গেছে। প্রতিটি পরিমাপই করা হয়েছে পৃথকভাবে এবং এগুলো সবই যখন নিরাময়ের ইঙ্গিত করছে সেহেতু অন্য কোনো ব্যাখ্যার সুযোগ নেই।”

গবেষকগণ আরো দেখেছেন, সিমুলেশনের সাথে পর্যবেক্ষনকৃত তথ্য মিলে যায় এবং এই ফুটো হ্রাসের অর্ধেকটার জন্য দায়ী বায়ুমন্ডলীয় ক্লোরিনের পরিমান হ্রাস। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া আরভাইনের রসায়নের অধ্যাপক ডোনাল্ড ব্লেকের মতে এই গবেষনাটি মেরু অঞ্চলের ওজোন গবেষনার মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ ।

 

[National Geographic অবলম্বনে।]

Exit mobile version