মহাকাশে ভাসমান গ্যাস ও ধূলিকনার মেঘ থেকে নক্ষত্র জন্ম নেয়। এক একটি নিহারীকায় গ্যাস ও ধুলিকনার পরিমান এত বেশি থাকে যে সেখান থেকে কয়েক হাজার এমনকি কয়েক লক্ষ নক্ষত্রের জন্ম হয়। আবার এসব নক্ষত্রও বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। মহাকাশে সূর্যের চেয়ে বিশ থেকে ত্রিশ গুণ বেশি ভরের ও আকার আয়তনে অনেক বড় নক্ষত্র যেমন আছে তেমনি সূর্যের চেয়ে অনেক অনেক কম ভরের নক্ষত্রও আছে যারা আকার আয়তনে অনেক ছোট হয়ে থাকে। যখন কোন বিশাল আকারে গ্যাসের মেঘ থেকে হাজার হাজার নক্ষত্র জন্ম নেয় তখন তাদের মধ্য থেকে এমন অনেক গ্যাস পিন্ড নক্ষত্র হওয়ার জন্য চেষ্টা করে কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমান গ্যাস সংগ্রহ করতে পারে না। আবার এসব গ্যাস পিন্ড থেকেই গ্রহের জন্ম হয়। পাশাপাশি সামান্য কম ভরের জন্য যেসব গ্যাস পিন্ড নক্ষত্র হওয়া থেকে বঞ্চিত হয় তাদের সাথে অন্য রকম ঘটনা ঘটে। সাধারনত কোন নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে গ্রহ ঘুরে যে জগৎ তৈরি করে থাকে সৌর জগৎ বলে। আবার মহাকাশে একাধিক নক্ষত্র কে কেন্দ্র করে সৌর জগৎও ঘঠিত হয়। কিন্তু এ মহাবিশ্বের আরও এক ধরণের জগৎ সৃষ্টি হয় যা এখনও আমাদের অজানাই রয়ে গেছে।
যখন কোন গ্যাস ও ধূলিকনার মেঘ নক্ষত্র হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমান গ্যাস সংগ্রহ করতে পারে না তখন অন্য রকম জগৎ সৃষ্টি হয়। সামান্য পরিমান গ্যাস ও ধূলিকনার অভাবে অনেক সময় গ্যাস পিন্ড নক্ষত্র হওয়ার জন্য স্বাভাবিক পরিমানে ভর অর্জন করতে পারেনা। তখন ঐ বস্তুটি নক্ষত্র হয়না আবার গ্রহও হয়না। তখন সে নিজস্ব একটি জগৎ তৈরি করে। একটি গ্যাস পিন্ড তখনই নক্ষত্রে রূপ নেবে যখন এর তাপমাত্রা এক কোটি কেলভিনে পৌছাতে পারবে। উচ্চ পর্যায়ে তাপমাত্রা পৌছানোর পরই এটি নিউক্লীয় বিক্রিয়া শুরু করতে পারে। আর এই উচ্চ পর্যায়ে তাপ সৃষ্টি করার জন্য ভর প্রয়োজন। এই স্বাভাবিক ভরটি হল সূর্যের ভরের দশ ভাগের এক ভাগ উপরে।
এসব গ্যাস পিন্ড সৌরজগতের মত ব্যর্থ নক্ষত্রের একটি জগৎ সৃষ্টি করে। কিন্ত সে জগৎটি থাকে আলোহীন অন্ধকার। এ ধরণের জগৎ মহাকাশে দেখা যায়না। তাই মানব সভ্যতা এখনো এ জগৎ সম্পর্কে যানেনা। এই ব্যর্থ নক্ষত্রের জগৎ একাধিক গ্রহকে নিয়ে সৃষ্টি হয়। এই ব্যর্থ নক্ষত্রের মহাকর্ষের প্রভাব ৭০০-৮০০ কোটি মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে। আমাদের গ্যালাক্সিতে অসংখ্য ব্যর্থ নক্ষত্রের জগৎ থাকবে। কারণ সূর্যের চেয়ে অনেক অনেক বেশি ভরের নক্ষত্র আছে যার ভর সূর্যের ভরের ১০০ গুণ বেশি এবং আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রের কাছে সূর্যের চেয়ে ১৩০ গুণ বেশি ভরের নক্ষত্রও পাওয়া যায়। তেমনই সূর্যের ভরের ১০ ভাগের চেয়ে কম ৫ ভাগ, ৩ ভাগ, ২ ভাগ ভরের নক্ষত্রও আছে।
ব্যর্থ নক্ষত্রটি আলো ছাড়া অন্য কয়েকটি শক্তি বিকিরণ করবে যেমন তাপ ও রেডিও তরঙ্গ। সাধারণত বেশি ভরের নক্ষত্রদের পাশে এসব ব্যর্থ নক্ষত্র সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা বেশি। এদের খুজে পাওয়ার জন্য আপাতত দুইটি পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন কোন নক্ষত্র থেকে আলো আসতে বাধা প্রাপ্ত হয় যদি অনেক দুরে অবস্থিত কোন বস্তু দ্বারা। তাহলে বুঝতে হবে এটি অবশ্যই ব্যর্থ নক্ষত্র দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হয়েছে। তাছাড়া বেশি ভরের নক্ষত্রদের এলাকায় অনুসন্ধান চালালে এসব ব্যর্থ নক্ষত্রের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। আমাদের সূর্য শেষ পর্যায়ে ব্যর্থ নক্ষত্রের রূপ ধারণ করবে। সূর্য আমাদের আরও ৫০০ কোটি বছর আলো দিয়ে তার পরই সে পরিনত হবে লোহিত দানব নক্ষত্রে। একদিন সূর্য্যরে আলো নিভে যাবে। তখন যে সমস্ত গ্রহরা বেচেঁ থাকবে তারা কিন্তু সেই অন্ধকার সূর্যকেই প্রদক্ষিণ করবে। তাহলে মহাবিশ্বে তিন ধরণের জগৎ থাকবে। (১) ব্যর্থ নক্ষত্র জগৎ যেটি কখনও আলো উৎপন্ন করতে পারেনা। তার গ্রহরা সারা জীবন অন্ধকারেই থেকে যায়। (২) এই জগতে নক্ষত্রে আলো থাকে টিকই কিন্তু জীবনের শেষ পর্যায়ে আলো নিভে যায়। তখন যেসব গ্রহরা টিকে থাকে তারা মৃত অন্ধকারময় সেই নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে। যেমন আমাদের সূর্য্যেরও এরকম দশা হবে। (৩) এই সৌরজগতের নক্ষত্রের আলো থাকে টিকই কিন্ত জীবনের শেষ পর্যায়ে নিজের ধ্বংসের সাথে সাথে সৌরজগতেরও ধ্বংস হয়।
-বিশ্বনাথ আচার্য্য
ফান্দাউক বাজার, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।