বিজ্ঞান পত্রিকা

আদি মহাবিশ্বের আরো অনেক উজ্জ্বল গ্যালাক্সি আবিষ্কৃত

উদ্ভবের শুরু থেকেই মহাবিশ্ব উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত ছিলো না। প্রথম তারাগুলোর উজ্জ্বল আলো তৈরি হতে প্রায় দেড়শ’ মিলিয়ন (১৫ কোটি) বছর লেগে গিয়েছিলো। এই আলোর প্রায় সম্পুর্ণটাই আবার হাইড্রোজেনের বিশাল বিশাল মেঘে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলো। এই কারণে মহাবিশ্বের এই অংশটি নিয়ে গবেষনা চালানো খুবই দুঃষ্কর, তবে সুবারু (Subaru), কেক (Keck) এবং Very Large Telescope এর মতো টেলিস্কোপ জাতীয় যন্ত্রপাতির কল্যানে অবশেষে এই মুখোশ কিছুটা উন্মোচিত হচ্ছে।

এই যন্ত্রগুলো ব্যবহার করে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জোতির্বিদগণের একটি দল অত্যন্ত আদিম মহাবিশ্বের ১৩৩ টি উজ্জ্বল গ্যালাক্সি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন, যেগুলো ধারনা করা হচ্ছে প্রথম প্রজন্মের নক্ষত্র নিয়ে গঠিত। এই দলটির নেতৃস্থানীয়, ল্যাঙ্কেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ডেভিড সব্রাল একটি বিবৃতিতে বলেন, “আদিমতম এবং উজ্জ্বলতম গ্যালাক্সিগুলোর তারা, ব্ল্যাকহোল এতো বেশী অতিবেগুনী রশ্মি উদ্গত করেছে যে এরা তাৎক্ষণিকভাবেই পারিপার্শ্বিক মহাবিশ্বের হাইড্রোজেন পরমাণুগুলোকে ভেঙ্গে দিয়েছিলো। অপেক্ষাকৃত নিস্তেজ গ্যালাক্সিগুলো আরো দীর্ঘ সময় ধরে আড়ালে অবস্থান করছিলো। এমনকি এগুলো যখন দৃশ্যমান হয়েছিলো তখনো তাদের মধ্যস্থ প্রচুর অস্বচ্ছ বস্তুর অবস্থান রয়ে গিয়েছিলো।”

এই গবেষনাটি এই সপ্তাহের National Astronomy Meeting এ উপস্থাপন করা হয়েছে। এই গবেষনার ফলাফল আদি মহাবিশ্ব নিয়ে গবেষনার কষ্টকর দিকগুলো তুলে ধরেছে। নিরপেক্ষ বা চার্জবিহীন হাইড্রোজেন পরমানুর বিপুল পরিমান উপস্থিতি নিস্তেজ, ছোট আলোক উৎসগুলোকে ঢেকে দেয়, ফলে আমাদের কাছে সেই আলো পৌঁছায় না।

Monthly Notices of the Royal Astronomical Society এ প্রকাশিত এই গবেষনাটি ভবিষ্যতের পর্যবেক্ষণের জন্য ভিত্তিমূলক, যার মাধ্যমে প্রাথমিক বা আদি মহাবিশ্বের অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। লেইডেন পর্যবেক্ষনাগারের পিএইচডি গবেষক জোরিট ম্যাথি বলেন, “এই ঘটনা উজ্জ্বল গ্যালাক্সিগুলোকে মহাবিশ্বের ইতিহাসে আরো আগেই দৃশ্যমান করে এবং আমরা এর মাধ্যমে শুধু পুনরায়নীকরণই পরীক্ষা করতে পারি না বরং খুবই প্রাথমিক সময়ে উৎপন্ন গ্যালাক্সি এবং সেগুলোতে বিদ্যমান ব্লকহোলগুলো নিয়েও গবেষণা করা যায়।”

সব্রাল বলেন, “সবচেয়ে বিষ্ময়কর হলো, গ্যালাক্সীর যে সংখ্যা আমরা ইতিপূর্বে অনুমান করেছিলাম নতুন গবেষনায় আমরা তারচেয়ে অনেক অনেক বেশী এবং সেগুলোর বৈচিত্র্য বিহ্বল করে দেওয়ার মতো “। যখন জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (এই বিষয়ে এখানে পড়ুন) উৎক্ষিপ্ত এবং সক্রিয় হবে আমরা তখন আরো কাছ থেকে এই আগ্রহোদ্দীপক বস্তুগুলো নিয়ে গবেষনা চালাতে পারব। আমরা কেবল এর পিঠে ঘষে দিয়েছি, তাই সামনের বেশ কয়েক বছর নিশ্চিতভাবেই বিষ্ময়কর আবিষ্কারগুলো ঘটবে।

Exit mobile version