প্রতিদিনই সংবাদপত্রগুলোর শিরোনাম হচ্ছে করোনাভাইরাস (বর্তমান নাম SARS-CoV-2) এবং সেই সাথে বেড়ে চলেছে ফেস মাস্কের চাহিদা । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই ইতিমধ্যে ফেস মাস্কের মজুদ ফুরিয়ে গেছে বা ফুরিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। করোনা ভীতি ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে মানুষ নিজেদের সুরক্ষা দিতে ফেস মাস্কের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। কিন্তু এই মাস্কগুলো কি সত্যি করোনা হতে সুরক্ষা দিতে সক্ষম?
করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত, অনেকটা ফ্লু ভাইরাসের মতোই। করোনা আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির কাশি অথবা হাঁচির সাথে এই ভাইরাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্য কেউ আক্রান্ত হতে পারে। কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে কোনো কিছুর পৃষ্ঠে এই ভাইরাস লেগে যেতে পারে যেখানে এই ভাইরাসগুলো দীর্ঘ নয় দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। উল্লেখ্য যে অধিকাংশ ফ্লু ভাইরাস মুক্ত অবস্থায় চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে মরে যায়।
সারা পৃথিবীতেই মানুষ যে ধরনের ফেস মাস্ক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে (উপরের ছবিটিসহ) এগুলো মূলতঃ সার্জিক্যাল মাস্ক এবং অপারেশনের সময় ডাক্তার ও সহকারীরা পরে থাকেন যেন অপারেশন করার সময় রোগীর শরীরে ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমন প্রতিহত করা যায়। এই মাস্কগুলো বড় বড় কণিকা আটকাতে পারলেও ক্ষুদ্র ভাইরাস কণিকা আটকাতে পারে না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। শুধু তাই নয়, ভাইরাস যদি এই মাস্কের ঝিল্লিতে আটকেও যায় তবুও মাস্কটি যদি আপনার হাতের সংস্পর্শে আসে তাহলে সেখান থেকে চোখে-মুখে বা নাকে ঢুকে যেতে পারে; কিংবা কোনো বস্তুতে বা কোনো কিছুর পৃষ্ঠে লেগে যেতে পারে।
তবে N95 নামের একধরনের মাস্ক আছে যেটি মূলতঃ বায়ুকে পরিশোধন করার মাধ্যমে ভেতরে পাঠায়, ফলে এর মধ্যস্থঃ অতিক্ষুদ্র কণিকাগুলোও আটকে দেয়। যথাযথভাবে মুখে আটকালে এটি ৩ মাইক্রন পর্যন্ত কণিকা (ভাইরাসগুলো আকারে এর চেয়ে বড়) অন্ততঃ ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত আটকে দিতে পারে (এই কারণেই এর নাম N95)। তবে পরিশোধনের কার্যকারীতা নির্ভর করবে এটি যথাযথভাবে পরিধান করার উপর। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে, গালে যদি প্রচুর দাড়ি থাকে কিংবা যদি ফিল্টারের কিনারা বরাবর ফাঁক ফোঁকর থেকে থাকে তাহলে এই মাস্ক সংক্রমনের ঝুঁকি পুরোপুরি এড়াতে পারবে না। বায়ু ভালোভাবে পরিশোধন করে বলে এটি পরে ভালোভাবে নিঃশ্বাস নেওয়া যায় না, মুখমন্ডল উষ্ণ হয়ে ওঠে এবং একটানা দীর্ঘক্ষণ পরে থাকা খুবই অস্বস্তিকর। তাছাড়া পরোক্ষভাবে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি তো রয়েছেই।
কোনো পদ্ধতিই পুরোপুরি অব্যর্থ নয় তবু চীনের করোনা অধ্যুষিত অঞ্চলের বাসিন্দাদের মাস্ক পরে চলাচল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি কোনো ব্যক্তি যদি আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে সার্জিক্যাল মাস্কও কিছুটা হলেও সেই ব্যক্তির শরীর হতে ভাইরাস ছড়ানো প্রতিরোধ করতে পারে, বিশেষতঃ যারা এখনো আক্রান্ত হয়েছে বলে জানে না। যারা ইতিমধ্যে আক্রান্ত হিসেবে নিশ্চিত হয়েছে তাদের উচিৎ হবে নিজ দায়িত্বে জন-কোলাহল এড়িয়ে চলা।
বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে এখনো করোনাভাইরাস ছড়ায়নি সেখানে ফেসমাস্কের ব্যবহার খুব সামান্যই গুরুত্ববহ। বরং এখানে সবচেয়ে বেশী কার্যকর হলো ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, যেমন: নিয়মিত হাত ধোয়া, চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ না করা। কাশি এবং হাঁচি এলে টিস্যু ব্যবহার করা এবং সেটি যথাযথভাবে সৎকার করা। হাতের কাছে টিস্যু না পেলে আপনার কনুই দিয়ে নাক মুছুন যেন নাকের পানি আপনার হাতে না লাগতে পারে এবং সেখান থেকে অন্য কোথাও না ছড়াতে পারে। [iflscience অবলম্বনে]
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
২. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া