বিজ্ঞান পত্রিকা

এক ফোঁটা বৃষ্টির পানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতে জ্বলবে ১০০ এলইডি লাইট

১৮৭০ এর দশক থেকেই পানির গতিশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়ে আসছে এবং বর্তমান সময়ের জলবিদ্যুৎ ব্যবস্থাও নির্ভর করে খাড়া ঢাল থেকে প্রবাহিত পানির গতিশক্তির উপর যা  টারবাইনকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট শক্তির যোগান দিয়ে থাকে। তবে সম্প্রতি পানির এই গতিশক্তি দিয়েই সরাসরি বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন হয়েছে। যার ফলে পানির কণা থেকে যে কোন জায়গাতেই বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব!

হংকং সিটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ওয়াং যংকাই এক বিবৃতিতে বলেন, “মূলত মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ফলেই পড়ন্ত পানির গতিশক্তির সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং একে স্বাধীন ও নবায়নযোগ্য বিবেচনা করা যায়। তাই এই শক্তির আরও ভালো ব্যবহার নিশ্চিত করা যেতে পারে।“

অতীতে বিভিন্ন সময়ে বৃষ্টির পানিতে দ্রবীভূত পদার্থের রাসায়নিক শক্তি সংগ্রহ করার প্রচেষ্টা চালানো হলেও সেগুলো কোনো গুরুত্বপূর্ণ শক্তির উৎস হতে পারেনি। এদের সবগুলোই ছিলো ব্যবহারিক ক্ষেত্রে অকার্যকর ও শুধুই কৌতুহল সৃষ্টিকারী। নতুন উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তিটিও কোন শহরকে আলোকিত করার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি তবে অতীতের যেকোন পদ্ধতির চেয়ে শত গুণ বেশি শক্তি তৈরী করতে পেরেছে। যা থেকে বুঝা যায় ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য এটি সঠিক পথেই রয়েছে।

নেচার সাময়িকীতে ওয়াং এবং তাঁর সহযোগী লেখক এই পদ্ধতির সাফল্যের বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছেন। এক প্রদর্শনীর মাধ্যমে তাঁরা দেখিয়েছেন কিভাবে একটি ইনডিয়াম টিন অক্সাইড স্তরের উপর পলিটেট্রোফ্লোরোএথিলিন ঝিল্লীতে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি  ঝরিয়ে তাদের তৈরি জেনারেটর সম্ভাব্য শক্তি অর্জন করতে পারে। এক একটি ফোঁটা পানি ঝিল্লীর উপর পড়ার সাথে সাথে এটি একটি  অ্যালুমিনিয়াম বৈদ্যুতিক তারের সাথে যুক্ত হয় এবং ঝিল্লীতে চার্জ তৈরি করে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে থাকে। প্রত্যেক ফোঁটা পানি জেনারেটরকে আঘাত করার সাথে সাথে ১০০ এলইডি লাইট আলোকিত করার মতো শক্তি উৎপাদন করে। নবায়নযোগ্য শক্তির আদর্শ উৎসগুলো খুবই স্বল্প পরিমাণ শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম। তবে ওয়াংয়ের দাবি তাঁদের গবেষণায় দেখা গেছে ১৫ সেঃমিঃ (৬ ইঞ্চি) উচ্চতা থেকে ১০০ মাইক্রোলিটার ( ১ মাইক্রোলিটার = ১ লিটারের ১ লক্ষ ভাগের ১ ভাগ) আয়তনের এক ফোঁটা পানি থেকে 140V এর সমান ভোল্টেজ তৈরী করতে পারে।

এমনকি ট্যাপের পানি থেকে ওয়াং প্রায় ৫০ ওয়াট ক্ষমতার শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন যা রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে কোন সাধারণ  ফটোভোল্টিক প্যানেলের এক তৃতীয়াংশের কিছু কম তবে,  অবশ্যই এ জাতীয় বিদ্যমান যন্ত্রের চেয়ে হাজার গুন বেশি। যদিও এখন পর্যন্ত এর সেরাটা আসার অনেক বাকি তবুও তাঁরা দেখেছেন প্রতি ফোঁটা গতিশক্তির প্রায় ২.২ শতাংশ বিদ্যুতে রূপান্তর করা সম্ভব হয়েছে। এই যন্ত্রে আরো অনেক সুযোগ রয়েছে উন্নতি করার।

ওয়াং জানিয়েছেন সামনের দিনে এমন কিছু তৈরী করা যা ছাতার সাথে লাগিয়ে বৃষ্টি থেকে মোবাইল চার্জের জন্য ব্যবহার করা যায়।  Ifscienceঅবলম্বনে

-শফিকুল ইসলাম

Exit mobile version